পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। চীনের পর ইরান, আমেরিকা, ইউরোপের ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশকে কাবু করে ফেলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত এবং ৫ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে ঘরে থেকে জনগণকে করোনা যুদ্ধে শরীক হওয়ার আহŸান জানানো হচ্ছে। সবকিছুই বন্ধ, মানুষ কার্যত ঘরবন্দি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে কার্যত অঘোষিত লকডাউন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে করোনার চিকিৎসা সুবিধা এখনো রাজধানীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশের ৬৩ জেলায় এখনো ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই। প্রস্তুত নেই হাসপাতাল। এ অবস্থায় ১৭ কোটির এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে করোনাভাইরাস ঠেকাতে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু? আমরা কি প্রস্তুত?
বিশাল জনগোষ্ঠির দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২১ মার্চ জানিয়েছেন আক্রান্তদের জরুরি সেবার জন্য ১০০টি আইসিইউ প্রস্তুত। পর্যায়ক্রমে আরো প্রায় ৫০০ ইউনিট স্থাপন করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২৯টি আইসিইউ শয্যা। অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে যে ভাবে প্রচার করা হচ্ছে বাস্তবে সেটা চোখে পড়ছে না। প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তুতি ও সক্ষমতার কথা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার স্বক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের সন্দেহ দায়িত্বশীলরা প্রচারণা যত করছেন প্রস্তুতি ততটা নিচ্ছেন না। এই প্রস্তুতিতে সামনে পরিস্থিতি খারাপ হলে সামাল দেয়া কঠিন হবে।
জানতে চাইলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ২৯ আইসিইউ শয্যা দিয়ে সিনিয়র সিটিজেনদের চিকিৎসা দেয়াই সম্ভব নয়। এ ছাড়াও রয়েছে তীব্র লোকবল সঙ্কট, প্রশিক্ষণের অভাব এবং সংক্রামক রোগী ব্যবস্থাপনার অনভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোকে ফেলেছে চরম বিড়ম্বনায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। সেই তুলনায় ভেন্টিলেটর সক্ষমতা আমাদের কোথায়? ঢাকা ছাড়া দেশের ৬৩ জেলায় ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০টি। ঢাকার মোট পাঁচটি হাসপাতালে এ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এ পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কোনো আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি। এমতবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি, পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় জেলায় আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, যারা মারা গেছেন তারা বয়স্ক ছিলেন। তাদের অনেকেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
করোনায় শনাক্ত হওয়া ষাটোর্ধ আটজনের পাঁচজনই মৃত্যুর শিকার হয়েছেন ইতিমধ্যেই। বর্তমানে সারাদেশে করোনার মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন এমন অন্তত ৮০ লাখ বয়স্ক মানুষ। অথচ এর বিপরীতে ৫টি হাসপাতালে ২৯টি আইসিইউ বেড প্রস্তুতের কথা জানিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনা গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত আইসিইউ কক্ষে শয্যাও বসানো হয়নি এখনো। ৮টি শয্যা সচল রাখতে ৩টি শিফটে কমপক্ষে ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন হলেও ৪ জন অ্যানেসথেসিওলোজিস্টের সঙ্গে রয়েছে শুধু দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, চারজন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার রয়েছেন, তারা আইসিইউতে কাজ করতে পারবেন। তবে প্রশিক্ষণ ছাড়া একজনের সেখানে কাজ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় সারাদেশে শিগগিরই ৫০০ আইসিইউ স্থাপনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সা¤প্রতিক ঘোষণা কতটা যৌক্তিক? স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে আরও ৪০০ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করতে সক্ষম হব।
ষাটোর্ধদের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ শয্যাযুক্ত অন্তত একটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুতের জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ২৯টা গণনাই করা যাবে না। এতে আমরা সিনিয়র সিটিজেনদের সুরক্ষা দিতে পারব না। কোভিডের জন্য যেই হাসপাতালকে নির্ধারণ করব সেগুলোকে পুরোপুরি আইসোলেটেড করতে হবে।
আইসিইউ বেড স্থাপনের পর ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যকর্মীর হাসপাতালের ভেতরেই আবাসন সুবিধা নিশ্চিতের আহŸান বিশ্লেষকদের। অন্যথায় আইসোলেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপ অকার্যকর হবার আশঙ্কা তাদের।
কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র নেই ৬৩ জেলায়
নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় এ সুবিধা রয়েছে শুধু রাজধানীতেই। বাকি ৬৩ জেলায় ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০টি। ঢাকার মোট পাঁচটি হাসপাতালে এ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এ পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কোনো আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। ভাইরাসটি মোকাবেলায় রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আদতে তা কতটুকু রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যেভাবে করোনা রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শনাক্ত হচ্ছে, তাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই উদ্বেগের। যদি অতিদ্রæত করোনা রোগীদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০০টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এ ভেন্টিলেটরগুলো ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হবে কি না, তা এখন নিশ্চিত নয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) মান অনুযায়ী, একটি দেশের হাসপাতালে রোগীর জন্য যতগুলো শয্যা রয়েছে, তার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকার কথা। তবে এটি সম্ভব না হলে ন্যূনতম ৪ শতাংশ থাকতে হবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে রোগীর শয্যা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। হিসাব অনুযায়ী এসব হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর থাকার কথা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। ন্যূনতম ধরলেও এর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১২শ’র মতো। তবে এসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ২২১টি, যার সবগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ (১০ শতাংশ) মানুষের করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এর ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়, তবে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো সক্ষমতা থাকবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। এসব রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন ভেন্টিলেটর। সেই তুলনায় ভেন্টিলেটর সক্ষমতা আমাদের কোথায়? জনসংখ্যা তত্তে¡র ওপর বিচার করলে দেশে ভেন্টিলেশন সুবিধা একেবারেই কম। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর বেডের সংখ্যা শিগগিরই বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রস্তুত রাখতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে করোনা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।
বিএসএমএমইউর সাবেক এ ভিসি আরো বলেন, দেশে বর্তমানে কতজন করোনা রোগী রয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। মাত্র ৭০০ মানুষের পরীক্ষা করে ৩৯ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকসংখ্যক লোকের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেছে।
এর আগে গত ২১ মার্চ প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরি সেবা দেয়ার জন্য ১০০টি আইসিইউর কথা জানিয়েছিলেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫০০ ইউনিট স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু কবে তা প্রস্তুত করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে বলেননি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০টি আইসিইউ বেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি ভেন্টিলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৯ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত করা গেছে। যাদের আইসোলেশনে রেখেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে মারা গেছে মোট পাঁচজন। গতকাল পর্যন্ত নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।