পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সবকিছুই যখন বন্ধ করা হয়েছে; তখনো চলছে গরীবের ওপর এনজিও ক্ষুদ্র্ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ের খড়গ। করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘোরতর মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে বিপন্ন, অসহায় ও জীবন বাঁচাতে মরিয়া মানুষদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, প্রশিকাসহ বেশ কয়েকটি এনজিও দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে কিস্তি আদায় করছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উন্নয়ন ও মানবিক সেবা ও কল্যাণের নাম ভাঙিয়ে গড়ে উঠা এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরা নীতি, নৈতিকতা ও বিবেক বিষর্জন দিয়ে কিস্তি আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ও বাংলাদেশব্যাপী চরম আতঙ্কের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১০ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-ব্যাংক বীমা বন্ধ। করোনার কারণে ৪৯তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সব ধরণের কর্মসূচি বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সকল নাগরিককে ঘরে বসে থেকে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকা কার্যত ফাঁকা হয়ে গেছে। সবকিছু থমকে গেলেও এনজিওগুলো ঠিকই তাদের লাভের হিসেব কষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা বন্ধ হয়েছে জনস্বার্থে। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওগুলোও কর্মীদের ছুটিতে পাঠালে সেটাই স্বাভাবিক ও সময়োপযোগী হতো। অথচ দেখা যাচ্ছে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের মাঠে মাঠে পাঠাচ্ছে কিস্তি আদায়ের জন্য। এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত আপত্তিকর ও করোনা বিস্তারের জন্য বিপজ্জনক এবং কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশ্ন উঠেছে, অলাভজনক এনজিও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো এমন বিপজ্জনক কাজ কেন করছে? বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যায়ে নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ঋণ মওকুব, বকেয়া ও কিস্তি আদায়ে সময় বাড়ানো, বিলম্বের জন্য জরিমানা বাতিল ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শুধু তাই নয় গরীব মানুষকে ৬ মাসের খাবার ও অর্থ সহায়তা ছাড়াও আরো অনেক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এনজিওগুলো বিপদাপন্ন মানুষকে কিস্তির জন্য চেপে ধরছে?
সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসহায় গরীব ক্ষুদ্র ঋণগ্রহিতাদের দাবি সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ অনিবার্য। সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এনজিও কর্মীদের ছুটির আওতায় আনা এবং সকল ধরনের ঋণ ও কিস্তি প্রদানের জন্য সময় বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকারকেই আদেশ জারি মাধ্যমে করতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের মাথায় ক্ষুদ্রঋণের বোঝা, বাধ্য হয়ে তাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই পরিস্থিতিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি জানায়, দেশের যেসবক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন সেসব প্রতিষ্ঠান আগামী জুন পর্যন্ত নতুন করে কাউকে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করতে পারবে না। গত ২২ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সনদপ্রাপ্ত সবক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি।
গ্রামগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই প্রজ্ঞাপনের ভুল ব্যাখা দিয়ে দেশের কিছু এলাকায়ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাকে কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা হচ্ছে। রংপুরের পীরগাছায় গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা রহিমা খাতুন জানান, কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় সকালে ব্যাংকের লোকজন বাসায় এসে হাজির। আনোয়ারা নামের আরেকজন জানান, তিনি টাকা দিতে না পারায় তার সাথে ঋণ নেয়া অন্যান্যরা তাকে চাপ দিচ্ছেন।
ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি পরিশোধ ইস্যুতে ২৫ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। এতে বলা হয়, করােনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অক্ষমতার কারণে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি অপরিশােধিত থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রাপ্য কোনো কিস্তি বা ঋণকে বকেয়া বা খেলাপি দেখানো যাবে না। এই সঙ্কটময় সময়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ঋণগ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা যাবে না।
নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিরাজমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই অথরিটির সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণগ্রহীদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের সহযোগিতার লক্ষ্যে গত ২২ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ইস্যুকৃত সার্কুলারে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ঋণের শিরোনামে ছিল আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণ তদাপেক্ষা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না এবং কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী শ্রেণিকরণ করা যাবে মর্মে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।