পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাংলাদেশের তৈরি পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট বা পিপিই ব্যবহার করছে ইউরোপ-আমেরিকা। এসব পিপিই ব্যবহার করেই মহামারী করোনা মোকাবেলা করছেন তারা। যা তৈরি করছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড। অথচ বাংলাদেশকে পিপিই আমদানি করতে হচ্ছে। এমনকি সরবরাহের অভাবে দেশের চিকিৎসকদেরই অতীব প্রয়োজনীয় এই পিপিই দেয়া যাচ্ছে না। পিপিই সংকটের কারণে গত কিছুদিন থেকে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে।
সম্প্রতি বাংলাদেশেই পিপিই তৈরি হয়, বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুরোধে আামেরিকার অর্ডার বাতিল করে, দেশের জন্য এক লাখ পিপিই তৈরী শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সবার চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পিপিই নেই। পাশাপাশি করোনা দুর্যোগে বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্চাসেবীদের পিপিই দরকার। তাই আমরা বিজেএমইএ’র পক্ষ থেকে কিছু পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ক্রান্তিকালীন সময়ে পিপিই তৈরিকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে এই পিপিই একবোরে সঠিক নয়; কারণ আমাদের দেশের কাপড় পিপিই উপযোগী নয়। তবে কাছাকাছি এবং বর্তমান সংকটকালীন কাজ করার উপযোগী। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পিপিই তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় পিপিই ও মাস্কের জন্য চিন্তা করতে হবে না সরকারকে। সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, চীন থেকে আনা বিভিন্ন ধরণের বিশেষায়িত কাপর দিয়ে তৈরী এই পিপিই। শুধু স্মার্ট জ্যাকেটের কাছে যে পরিমান কাপড় আছে তা দিয়ে আগামী এক সপ্তার মধ্যে অন্তত ২ লাখ পিচ পিপিই তৈরী সম্ভব। ১৩টি লাইনের আলট্রাসনিক মেশিনে পিপিইগুলো তেরি করা হচ্ছে। কোনো রূপ সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তেরি হচ্ছে। এ পিপিইগুলোতে কোনো রূপ পানি ঢুকবে না, প্রবেশ করবে না বাতাসও।
স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুজিবুর রহমান বলেছেন, সরকারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিপিই তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে পিপিই তৈরির কাজ চলছে।
কক্সবাজারের করোনা আক্রান্ত একজন রোগীকে পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ডাক্তার, নার্সসহ ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী। পিপিই সরবরাহের দাবিতে রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া পিপিই ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা একজনের চিকিৎসা দিয়ে রাজধানীর ডেল্টা হাসপাতালের এক চিকিৎসক নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
অথচ গত ৪ বছর ধরে এই পিপিই তৈরী করছে চট্টগ্রাম ইপিজেডের স্মার্ট জ্যাকেট নামের গার্মেন্টেসে। আমেরিকা ও ইউরোপের চিকিৎসকেরা এই পিপিই ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসসহ সংক্রমণ রোগের চিকিৎসা করছেন।
আমেরিকার এক বায়ারের জন্য মাসে অন্তত ৩ লাখ পিপিই তৈরী করে এই গার্মেন্টসটি। সর্বশেষ ১ লাখ পিপিই’র অর্ডার ছিলো তাদের। এ তথ্য জানাজানির পর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তাগিদে অর্ডার বাতিল করে দেশের জন্য পিপিই তৈরী শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মঙ্গলবারই তৈরিকৃত ৫০ হাজার পিপিই’র প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ৫০ হাজার পিপিই তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময় সরকারকে দিবেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পিপিইগুলো চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন এবং গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছেন। পিপিই তৈরির মধ্য দিয়ে আমরাও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এ ধরনের কাজ করতে আমরা অভিজ্ঞ। আমাদের তৈরি পিপিই আমেরিকায় রফতানি হয়। পিপিই তৈরির বিশেষায়িত মেশিন ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা এসব পিপিই তৈরি করা হয়। একটি বিশেষায়িত ফ্লোরের ১৩টি লাইনে ৭৩০ শ্রমিক পিপিই তৈরির কাজ করছে। তিনি জানান, নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আমাদের কারখানার পিপিই আগেই রফতানি হতো। আমেরিকার একটি বায়ার আমাদের পিপিই সংগ্রহে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বুকিং দেয়া আছে। এ বুকিং বাতিল করে সরকারের আগ্রহ ও সংকটকালীন বিবেচনায় নিয়ে পিপিই প্রস্তুত করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।