Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭৮৭ দিন পর বাসায় ফিরলেন রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১:৪৬ পিএম

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ। ৭৮৭ দিন। এই দীর্ঘ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রত্যাশায় বাসা ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বেগম জিয়া যতদিন কারামুক্ত না হবেন ততদিন কার্যালয়েই এক প্রকার অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করবেন। গতকাল বুধবার বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়েছেন।এরপরই দীর্ঘ ৭৮৭ দিন পর দলীয় কার্যালয় ছেড়ে বাসায় উঠেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলীয় কার্যালয় ছেড়ে যান তিনি। এখন থেকে দলীয় প্রয়োজনে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু সময় কার্যালয়ে থাকবেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন রিজভী। সেসময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন ভয়ঙ্কর আতঙ্কে। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সদ্য কারামুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় সেসময় রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। সেদিন আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিলে ওইদিনই পুরনো ঢাকার সাবেক পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়। তার আগে এবং পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বহু মামলা দায়ের হয়। ফলে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। অবশ্য সেই বছরই ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হোটেল লা-মেরিডিনে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন খালেদা জিয়া। এরপর একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে রিজভীর শঙ্কা তৈরি হয়। সেই আশঙ্কা ও ধারণা হতে রিজভী নিজে থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান নেবেন তিনি। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছোট একটি রুমে (সাড়ে ৪ বাই সাড়ে ৯ ফুট) নির্জন কক্ষে রাত্রি যাপন করে আসছিলেন রিজভী। সেখানে নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীরা তার সাথে কুশল বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াত করতেন।
এরইমধ্যে গড়িয়েছে বহু সময়। যা একে একে ৭৮৭ দিন পার হলো। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেই দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখে চলেছেন রিজভী। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে ছোট-বড় পরিসরে হলেও শতাধিক মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মিছিল করতে গিয়ে একাধিকবার সরকারি দলের লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। দুইবার আহত হয়েছেন তিনি। তবুও হাল ছাড়েননি রিজভী। অবশেষে সরকারের নির্বাহী আদেশে গত ২৫ মার্চ (বুধবার) ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপরই রিজভী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর দলীয় কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করবেন না। অত:পর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় ছেড়ে রাজধানীর ভাড়া বাসায় যান রিজভী। দলীয় কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার সময় কার্যালয়ের কর্মকর্তা কমচারীরা তাকে বিদায় জানান। তারা রিজভীর জন্য বিশেষভাবে দোয়া ও শুভকামনা করেন।
বহুদিন পর দলীয় কার্যালয় হতে চলে যাওয়ার সময় রিজভী বলেন, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যতদিন পর্যন্ত অবৈধ সরকারের কারাগার হতে মুক্ত না হন ততদিন পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়েই থাকবো। কষ্ট করে থেকেছি। এই সময়ের মধ্যে আমি দলের হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থেকেছি। দেশনেত্রী কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় আমি চেষ্টা করেছি নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে। তারা দলীয় কার্যালয়ে এসে যেন বিমুখ হয়ে চলে না যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ