Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘরেই নামাজ পড়ুন

ইসলামী ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক মহামারী ও বালা-মুসিবতের সময় নামাজ কীভাবে পড়তে হবে তা বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনা করে দারুল উলুম দেওবন্দ একটি নির্দেশনা প্রচার করেছে। পরবর্তী পরিস্থিতি আরো সংবেদনশীল হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এটিই অনুসরণ করবে। ঘরেই নামাজ পড়তে হবে। কেবল আজান ও মসজিদের জামাত চালু রাখার জন্য তিন চারজন মানুষই যথেষ্ট।

এরাও ঘরে অবস্থানের মতো স্বাস্থ্যসুরক্ষা গ্রহণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই কর্তব্যটুকু পালন করবেন। যেখানে ঘরে অবস্থান করা শরীয়ত ও আইন বাধ্যতামূলক করে দেয় সেখানে জীবন রক্ষা ও মহামারী সংক্রান্ত মানবসেবার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আর কোনো কারণে বের হওয়ার অনুমোদন থাকে না। ‘সোমবার দেওবন্দের পক্ষ থেকে জারি করা ফতোয়ায় দেশের মুসলিমদের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে সরকার যে কারফিউ বা লকডাউন জারি করেছে সেগুলো মেনে চলে দেশকে এ মহামারী থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে নিজেরাও সতর্ক থাকবেন ও অন্যদেরও সতর্ক থাকতে বলবেন।

সরকার যেসব এলাকায় কারফিউ বা লকডাউন জারি করেছে, অথবা যেসব এলাকায় ভিড় জমায়েত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেসব এলাকার মসজিদগুলোকে বন্ধ না করে মসজিদ কর্তৃপক্ষের উচিত কোনো একটি পন্থা বের করা। যেনো মসজিদকেও আবাদ রাখা যায়, আবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি ও দেশের আইনও লঙ্ঘন না হয়। এটা এভাবে করা যায়, যেসব এলাকায় লোকসমাগমে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেসব এলাকার মসজিদগুলোতে ইমাম মুয়াজ্জিন মিলে আজান ইকামতের সঙ্গে জামাত চালু রাখবে। আর অন্যান্য মুসল্লিগণ তাদের ঘরে নামাজ আদায় করবেন।

আর যেসব এলাকায় এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখানে মুসল্লিগণ নামাজের সুন্নাত তাদের ঘরে সেরে আসবে, মসজিতে নিরাপদ দূরত্বে বসবে। জামাতে নামাজ আদায় করে আবারো ঘরে চলে যাবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখবে।

দারুল উলুম দেওবন্দের এ ফতোয়ার পর করোনাভাইরাস বিষয়ে মুসলিমদের আকিদা বা বিশ্বাস সম্পর্কে বলা হয়, করোনাভাইরাস বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের এ বিশ্বাস থাকতে হবে, কোনো রোগ ভাইরাস, মহামারী আল্লাহর হুকুম ছাড়া কাউকে আক্রান্ত করে না। এসব রোগ ও মহামারী মানুষের গুনাহের কারণেই এসে থাকে। এগুলো থেকে আল্লাহতায়ালাই মুক্তি দিতে পারেন।

এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, প্রত্যেকে নিজ নিজ দ্বীনি অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। অর্থাৎ গুনাহ পরিত্যাগ করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, নামাজ আদায় না ছাড়া। তাওবা ইস্তিগফার বেশি বেশি করা। আল্লাহর কাছে গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা চাওয়া। সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। বেশি বেশি আমল করা।’

ইসলাম মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। ব্যাপক প্রাণহানীর সম্ভাবনা দেখা দিলে বহু বৈধ বিষয়ও অবৈধ হয়ে যায়। নবী করীম (সা.) বলেছেন, মহামারী কোনো বান্দার ওপর আযাবস্বরূপ আসে। অতএব, আক্রান্ত এলাকার লোক অন্য কোথাও যাবে না। বাইরের লোক সে এলাকায় প্রবেশ করবে না। সহিহ মুসলিম-৫৯০৭

তিনি আরো বলেন, মহামারীর সময় ধৈর্য্য ও সাওয়াবের আশায় আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু হবে না, এ বিশ্বাস নিয়ে ঘরে বসে থাকা লোক শহীদের সাওয়াব পাবে। এতে সে নিহত হোক বা না হোক। মুসনাদে আহমদ-২৬১৮২।

ঘরে বসে নামাজ-বন্দেগী ও গুনাহ থেকে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। কিতাব দেখে, পরিচিত আলেমদের ফোন করে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দোয়া-দরুদ করতে হবে। সাধারণত কালেমা তাইয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ পড়া, ইয়া সালামু, সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়া। আসতাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি পড়া। নিজের জানা সূরা-কালাম ও দোয়া পড়া। নির্দিষ্টভাবে অজানা রোগের দোয়া আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাছি, ওয়াল জুনূনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন ছায়্যিয়িল আছকাম পড়া।

এ বিপদের মুহূর্তে ঘরে অবস্থানের সময় বড় বড় আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মুফতীগণ অন্য সময়ের চেয়ে জনগণকে বেশি সময় দিতে পারেন। সুরক্ষা ও দূরত্ব বজায় রেখে সমাগম ছাড়া তারা ব্যক্তি পর্যায়ে অনেককেই দ্বীনি সহযোগিতা দিতে সক্ষম। চিকিৎসকরা যেমন শারীরিক সুস্থতার জন্য কঠিন ত্যাগের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সুস্থতার জন্য ওলামা-মাশায়েখগণ নিয়ম মেনে ঘরে বসেই নানা মাধ্যমে জাতির রূহানী ও শিক্ষাগত চিকিৎসা দিয়ে যেতে পারেন।



 

Show all comments
  • Abdul Aziz ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহ্ আপনি সবাইকে হেফাজত করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Badhon Al Rohmani ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:২৯ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি আমাদেরকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করো মাবূদ। তুমি ছাড়া আমাদের কেউ নাই। আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম উদ্দিন ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
    এই সময় উপযোগী লেখাটির জন্য ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • আসাদ ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
    এই সময়ে দলীলসহ গুছিয়ে এই লেখাটি প্রকাশ করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • ইমাম মেহেদি হাসান ২৬ মার্চ, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
    এ বিপদের মুহূর্তে ঘরে অবস্থানের সময় বড় বড় আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মুফতীগণ অন্য সময়ের চেয়ে জনগণকে বেশি সময় দিতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুল মান্নান ২৬ মার্চ, ২০২০, ৯:১১ এএম says : 0
    জাযাকাল্লাহ-ধন্যবাদ সুন্দর লিখার জন্য।এ জন্যই আমি ইনকিলাবকে লাইল করি।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম উদ্দিন ২৬ মার্চ, ২০২০, ৯:১৯ এএম says : 0
    দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জন্য এই লেখাটি একটি সময় উপযোগী দিক নির্দেশনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ