পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘৭ কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী/রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবির এই পংক্তি যেন বাস্তবে ধরা দিয়েছে। রাস্তায় মানুষের চলাচল কম, সবকিছুই বন্ধ: তারপও দেখা যাচ্ছে কিছু লোক অহেতুক জটলা করছে। জেলা উপজেলা পর্যায়েও একই চিত্র চোখে পড়ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। যেখানে প্রত্যেক মানুষের এক মিটার দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে; তখন এমন চিত্র সত্যিই হতাশাজনক।
‘করোনাভাইরাস’ বর্তমানে সারা বিশ্বে আতঙ্কের নাম। বিশ্বের ১৯২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতি ভাইরাসটি। করোনা সংক্রমণ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। চীন বহুদিন থেকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কারলে বাংলাদেশে এ ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ জন। মারা গেছেন ৪ জন। এরই মধ্যে কয়েক লাখ প্রবাসী করোনাভাইরাসের ঝুকি নিয়ে দেশে এসেছেন। তাদের অধিকাংশই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় সংক্রমনের ভীতি আরো বেশি বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কতটুকু প্রস্তুত?
দেরিতে হলেও সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সবাইকে বাসায় অবস্থান করার কথা বললেও অনেকেই তা মানছিলেন না। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর খবরের পর নিজেদের অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন রাজধানীবাসী। গত শুক্রবার থেকে তার প্রভাব পড়েছে নগরীর শপিং মল, বাজার ও রাস্তায়। অনেকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ ঘরে খাবার মজুদ করছেন, আবার কেউ পাড়ি দিয়েছেন গ্রামে। কিন্তু মোড়ে মোড়ে মানুষের কোলাহল দেখা যাচ্ছে।
করোনা আতঙ্কে বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। অতি প্রয়োজনে নিতান্তই যারা বের হচ্ছেন, তারা জীবিকার তাগিদে। এদিকে যারা রাজধানীতে নিজ উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তারা বলছেন, ভুক্তভোগী না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও কিছু বিশ্বাস করতে চাই না। তাই সরকার আগে থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বললেও সেটি কেউ মাথায় নেয়নি।
এর মধ্যে গতকাল দেখা গেল কমলাপুর রেল স্টেশন, সদরঘাট টার্মিনাল, দায়েদাবাদ, মহাখালি, গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে হাজার হাজার মানুষের পদচারণা। ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে যেন ঈদের সময়ের মতো মিছিল নিয়ে ফিরতে যাচ্ছেন।
রাজধানীর হাতিরপুলের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, কে কী বললো, আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। যখন করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হলো, তখন সবার নজরে এলো বিষয়টি। কোনও উপসর্গ দেখা দিলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই সবাইকে নিজ উদ্যোগে বাসায় থাকা উচিত। কারণ, সরকার তো একা সব করতে পারবে না। আমাদেরও সহায়তা করা দরকার। মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দা তানিয়া আফরোজ বলেন, করোনায় মারা যাওয়ার পর আমরা বাসা থেকে বের না হওয়ার বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। এখন সবাই সতর্ক। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমরা কেউ বাইরে যাচ্ছি না।
করোনায় একজনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টাকে গভীরভাবে নিতে পারেনি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, অপ্রত্যাশিত যেকোনও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ সেটা মেনে নিতে পারে না। একটু সময় নেয়। এই বিষয়টিকে ডিনায়াল বলে। এই টাইমটি হলো ডিনায়াল পিরিয়ড। একেক ঘটনায় এই সময় একেক রকম হয়। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও তারা প্রথমে মেনে নিতে পারেনি। একটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে চলেছে। কিন্তু একজনের মৃত্যুর খবরের পরই তারা সতর্ক হয়ে গেছে।
গত ২৩ মার্চ ও ২৪ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, মোহাম্মাদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, কাওরান বাজার ও পান্থপথ সিগনাল ঘুরে ও গুগল ম্যাপের তথ্যমতে রাজধানীতে কোথাও কোন জ্যামের খবর পাওয়া যায়নি। রাস্তায় যান চলাচল খুবই সীমিত। কোনও সিগনালে গাড়ির জটলাও দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজার পুলিশ বক্সে কথা হয় এএসআই মোস্তাকিম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন। রাস্তায় পরিবহন না থাকায় তেমন চাপ নেই। চাপ না থাকলেও তো আমরা দায়িত্বে অবহেলা করতে পারি না। তাই পরিবারকে ঘরে রেখে আমরা এখনও রাস্তায় আছি। রাজধানীর নিউমার্কেট, মিরপুর সড়ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। যথাসময়ে শপিং মলগুলো চালু হলেও ক্রেতা নেই। কিন্তু বিভিন্ন খাওয়ার দোকানে দেখা গেল মানুষ জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল ঘুরে দেখা গেল রাস্তায় মানুষ কম; কিন্তু গলিগুলো এবং হোটেলে মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।