Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়া সীমান্তে বিএসএফের সহায়তায় অবৈধভাবে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশিরা

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ৭:১০ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে আসছেন সেখানে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে সে দেশের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজনও রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ১০ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট ঘরের বাইরে না বেরোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে এখন পর্যন্ত দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় আড়াই শতাধিক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে গত দুদিনে ১৫০ জনের বাড়ির সামনে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রাগপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু মানুষ ভারতের কেরালা রাজ্যসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে দিনমজুরির কাজ করে আসছিলেন। করোনার তীব্রতা দেখা দেয়ায় তাদের সে দেশ থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। এমনকি দেশটির কারাগারে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের বেশ কয়েকজনকেও মুক্তি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) রাতের আঁধারে তাদের সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে। ভারত থেকে অবৈধভাবে ফেরত আসা এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। আইনি জটিলতার কারণে তাদের বাড়ির সামনে লাল পতাকা দেয়া না হলেও নির্দিষ্ট ঘরের বাইরে না বেরোনোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের শুধু একটি এলাকারই চার ব্যক্তি ভারতের দমদম কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে অবৈধভাবে দেশে চলে এসেছেন।

এরা হলেন- মহিষকুন্ডি পাকুড়িয়া সীমান্ত এলাকার ভিকু মন্ডলের ছেলে আশরাফুল (২৮), জিন্নাত আলীর ছেলে বজলু (৩২), মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে সোনারুল (৩৭) ও কালু শেখের ছেলে নুরুল শেখ (৩৫)। এদের প্রথম তিনজন গত ২০ মার্চ এবং শেষের জন পরের দিন ২১ মার্চ নিজ এলাকায় ফেরেন। রাতের আঁধারে বিএসএফ তাদের ঠেলে পাঠিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

জেলার বৃহত্তম এ উপজেলার ৪৬ কিলোমিটার সীমান্তের ১৬ কিলোমিটার সীমান্ত উন্মুক্ত রয়েছে। যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে শ্রম দিতে যাওয়া দৌলতপুর সীমান্ত এলাকার অনেক মানুষ নিজ দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানা ও নদীয়া জেলার হোগলবাড়িয়া থানার বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামে অবস্থান করছেন। রাতের অন্ধকারে তারা বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশে চলে আসছেন বলে সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে এ উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক প্রবাসী এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন। বিভিন্ন দেশে থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে গত দুদিনে ১৫০ জনের বাড়িতে লাল পতাকা তোলা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এসব বাড়ির সামনে লাল পতাকা টাঙিয়ে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সাধারণ মানুষের বোঝার স্বার্থে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এসব প্রবাসীর বাড়িতে এই লাল পতাকা টাঙানো হয়। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে এই প্রবাসীদের প্রশাসনের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তারের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী এবং দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আরিফুর রহমান পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সতর্ক ও সচেতন করছেন। প্রবাসীরা যেন কোনোভাবেই ঘরের বাইরে বের না হন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন বা মেনে চলেন সেই জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থাকতে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে বিদেশ ফেরত অনেকেই প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের কয়েকজন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন এ রকম তথ্য তাদের কাছেও এসেছে। এজন্য নজরদারি বাড়াতে বিজিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এক সঙ্গে পাঁচজনের অধিক মানুষ দেখা গেলে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী জানান, এখন পর্যন্ত ১০ জন ভারতের কেরালা থেকে অবৈধ পথে ফেরত আসার তথ্য তার কাছে রয়েছে। তাদেরকে নজরদারিতে রেখে রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বিদেশ ফেরতদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই, কাতার, মালয়েশিয়া প্রবাসী। ইউরোপের কমই রয়েছেন। তবে সব প্রবাসীকে ঘর থেকে না বেরিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আরিফুর রহমান জানান, প্রতিদিনই কমবেশি প্রবাসী এলাকায় আসছেন। এ পর্যন্ত ২৪৭ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গত দুই দিনে প্রায় দেড়শ জনের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। অনেকে এলাকায় ফিরে এলেও পুলিশের কাছে তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন। তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ