পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে আরও ৬ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৩ জন। এছাড়া এই ভাইরাসের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩ জন। গতকাল সোমবার ‘হেলথ মিনিষ্ট্রি মিডিয়া ইউং’ ফেসবুকে পেইজ-এ লাইভ সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর। ফেসবুক লাইভে আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। এদিকে দেশে পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) এখনও তেমন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ডেল্টা হাসপাতালের এক চিকিৎসক আক্রান্ত, বাকীরা কোয়ারেন্টিনে।
গতকাল আইইডিসিআর’র ফেসবুক লাইভে এই কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সন্দেহভাজন হিসেবে আরও ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে আরও ৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২০ জনের। সবমিলিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জনে দাড়িয়েছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন। এর বাইরে আইসোলেশনে আছেন ৫১ জন এবং হোম কেয়ারেন্টিনে আছেন আরও ৪৬ জন। নতুন করে আক্রান্ত ৬ জনের একজন স্বাস্থ্যকর্মী। এই নিয়ে দেশে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ডাক্তার ও দুজন নার্স। দেশে যে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ১৩ জনই বিদেশ থেকে এসেছেন। এর মধ্যে ইতালির ৬ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ২ জন, ইউরোপের অন্যান্য দেশে থেকে ২ জন, বাহরাইন থেকে ১ জন, ভারত থেকে ১ জন এবং কুয়েত থেকে ১ জন এসেছেন। গত ডিসেম্ব^রের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৬ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ঝুঁকিতে আছেন ১১ হাজার ২৯৮ জন। মারা গেছেন ১৫ হাজার ৪০৮ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ১ লাখ ৬০৫ জন। বাংলাদেশে এ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সবশেষ সরকারি হিসাবে, দেশে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন।
পিপিই’র এখনও তেমন প্রয়োজন নেই- স্বাস্থ্যমন্ত্রী : দেশে পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) এখনও তেমন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) সংকট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চীনে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল, তখন তাদের কাছেও পিপিই ছিল না। এখনও আমাদের পিপিই অতটা দরকার নেই। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লেও করোনাভাইরাস নিয়ে ‘চিন্তার কিছু নেই’ বলেও মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ায় সারাদেশে এখন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তিনি বলেন, করোনো শনাক্তকরণে এক লাখ কিট আমাদের হাতে আছে। কিট বা সরঞ্জাম নেই- এ বিষয় নিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করা ঠিক হবে না।
তিনি দাবি করেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। আমরা যদি সেফল কোয়ারেন্টাইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন যথাযথভাবে নিতে পারি তাহলে ভয়ের কিছু নেই, করোনা ছড়াবে না।
সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা পর্যায়ে ডিসি, এসপি, ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কমিশনাররাও কাজ করছেন। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সেলফ কোয়ারেন্টিন না মানার বিষয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জোর করে তাদের ধরে আনা হচ্ছে। কিন্তু তারা যদি নিজেরাই কোয়ারেন্টিনে থাকেন তাহলে আমরা তাদের রক্ষা করতে পারব। কিন্তু পালিয়ে বেড়ালে কোনোটাই সম্ভব নয়। বিদেশফেরত কোয়ারেন্টিনে জরুরি’ উলেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ওয়াকিবহাল। তিনি আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা সেভাবে কাজ করচ্ছি। ইতোমধ্যে সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দু-একটি চালু আছে। আশা করি তাও দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের পূর্ণ চেষ্টা হবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা। প্রয়োজনে আমরাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা করব। দেশের মানুষকে, নিজের পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। করোনার সংক্রমণরোধে মন্ত্রী ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও সীমিত আকারে পালনের অনুরোধ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা তো বন্ধ করে দিতে বলেনি, সীমিত আকারে পালনের কথা বলেছি। এটা তো সউদী আরব করেছে, আমিরাত করেছে, ইরান করেছে কিন্তু আমরা করতে পারিনি।
ডেল্টা হাসপাতালের চিকিৎসক আক্রান্ত : রাজধানীর টোলারবাগে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত বৃদ্ধকে চিকিৎসা প্রদানকারী এক চিকিৎসক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে আছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক। গত শনিবার টোলারবাগের ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ওই হাসপাতালের চার চিকিৎসক, ১২ জন নার্স ও তিন কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় তাদেরই একজনের ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ওই চিকিৎসক বর্তমানে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। এদিকে অসুস্থ্য বোধ করায় গত রোববার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ডেল্টা হাসপাতালের পরিচালক ডা. বদিউজ্জামানও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টোলারবাগের বৃদ্ধকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া ওই চিকিৎসকের শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ে গত শনিবার সকাল থেকে। গত রোববার দুপুরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি ডেল্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। তার পরিবারের সদস্যরাও এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। পুলিশের দারুস সালাম জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী রোববার রাতে নিশ্চিত করে বলেন, দ্বিতীয় বৃদ্ধেরও করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিল বলে আইইডিসিআর নিশ্চিত করেছে।
করোনায় সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি বাড়তে পারে- বিএমএ: দেশের যেকোনো সময় করোনায় সংক্রমণ এর মাত্রা অনেক বেশি বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা জানালেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ সভাপতি প্রফেসর ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ইতালি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সকল দেশ রোগটি নিয়ন্ত্রণে বেসামাল অবস্থায় রয়েছেন। এ ধরনের সময় দেশের সকল গণমাধ্যম, সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক শক্তি, প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মীদের এবং বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সাংবাদ সম্মেলনে স্বাচিপ মহাসচিব প্রফেসর এম এ আজিজ বলেন, আমরা অদৃশ শক্তির সংগে যুদ্ধ করছি। বিএমএ মহাসচিব ড. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যে টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে, সেকানে বিএমএ বা স্বাচিপের কোন সদস্য রাখা হয়নি। এমনকি মন্ত্রনালয়ের গত তিন মাসের কোন ধরনের প্রস্তুতির সঙ্গেও বিএমএ/স্বাচিপকে যুক্ত করা হয়নি। স্বাচিপ সভাপতি প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি পেনিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। ডিএমসিএইচ’র চার চিকিৎসক কোয়ারেন্টিন রয়েছে। যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।