Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা!

যথারীতি চলেছে আদালত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২০, ১২:১০ এএম

সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে বিচারিক আদালতের কার্যক্রম। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভিড় লেগেছে আদালত কক্ষ, বারান্দা , সেকশন এবং আদালত প্রাঙ্গনে। ঢাকা জেলা আদালত কম্পাউন্ডে বিশেষ করে চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও লক্ষ্যনীয় মাত্রায় ভীড় রয়েছে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, অর্থ ঋণ আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছিলো আইনজীবী এবং মক্কেলদের আনাগোনা। গতকাল সোমবার ঢাকা জেলা জজ আদালতে সকাল থেকেই ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। অথচ করোনা মহামারীর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বিচারক আদালতের জনসমাগম রোধে রোববার এক নির্দেশনা দেন সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, শুধুমাত্র জামিন এবং জরুরি বিষয়সমুহ শুনানির জন্য সীমিত আকারে কিছু আদালতে কার্যক্রম চলবে।

অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত সার্কুলারে বলা হয়, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) জনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের অধস্তন আদালতসমুহে অধিক সংখ্যক জনসমাগম পরিহার করা প্রয়োজন। এতদুদ্দেশ্যে দেশের অধস্তন আদালতসমুহে জামিন/অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য জরুরী বিষয় ব্যতিত অন্যান্য বিষয় যৌক্তিক সময়ের জন্য মুলতবিকরণ আবশ্যক। এমতাবস্থায় দেশের অধস্তন আদালতসমুহে জামিন/অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য জরুরী বিষয় ব্যতিত অন্যান্য বিষয় যৌক্তিক সময়ের জন্য তুলতবি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে জারিকৃত এ সার্কুলার অবিলম্বে কার্যকর হবে। সার্কলারটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দেশের সকল আদালত, বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানসহ ৫০টি দপ্তরে কপি পৌঁছানো হয়। তা সত্তে¡ও বিশেষ করে ঢাকার বিচারিক আদালতগুলোতে এই সার্কুলারের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ আদালতেই বিচারকদের এজলাসে উঠতে দেখা গেছে। ঢাকা বারের আইনজীবীগণও তাদের মক্কেলদের নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেছেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গনে ভীড় রয়েছে লক্ষ্যনীয় মাত্রায়। জন সমাগম পরিহারের লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশনা জারি করলেও সেটা অনেকাংশেই থেকেছে উপেক্ষিত।

এদিকে ঢাকা বারের একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, অধিকাংশ আইনজীবীই আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত থাকার তথ্য তাদের মক্কেলদের কাছে পৌঁছাননি। হাজিরা দিলেই ফি-এই তত্তে¡ বিশ্বাসী অধিকাংশ আইনজীবী বার্তাটি মক্কেলকে দেননি। তাহলে হয়তো আদালত পাড়ায় এতোটা জনসমাগম হতো না। ক্ষুদ্র স্বার্থ চিন্তা থেকেই তারা সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন।

ঢাকা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বিচারপ্রার্থী পর্যায়ে একদিনের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তারা পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী হয়তো আদালতে এসেছেন। অনেকেই এসেছেন হাজিরা দিতে। সময় প্রার্থনা করতে। তবে করোনার প্রকোপ রোধে সবচেয়ে ভালো ছিলো খুব প্রয়োজনীয় কয়েকটি আদালত খোলা রেখে আদালতের সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া। সকল মহলকেই এ বিষয়ে ছাড় দিতে হবে।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান। গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে তিনি বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ পাঁচ ভাগের একভাগ ভীড়ও নেই। কিছু কিছু জামিন শুনানিতো আছেই। আরও আছে নিষেধাজ্ঞার শুনানি। এছাড়া আছে কারাগারে থাকা আসামিদের মামলার টাইম প্রেয়ারের বিষয়ও আছে। আদালতের কার্যক্রমতো সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করা হয়নি। জরুরি বিষয়ে শুনানিতো হবেই। আশা করছি এই ভীড় আরও কমবে। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে ঢাকা বার অত্যন্ত সচেতন। আমরা নিজেরাই বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যিনিই বার ভবনে প্রবেশ করবেন তিনিই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করবেন। এ ছাড়া আমরা টয়লেট-ওয়াশ রুমে হ্যান্ডওয়াশ- ন্যাপকিন রেখেছি। এক ঘন্টা পর পর টয়লেট পরিষ্কার করা হচ্ছে। বিøচিং পাউডার দেয়া হচ্ছে।

এদিকে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করেও আদালত কার্যক্রম পরিচালনা এবং আদালতপাড়ায় বিচারপ্রার্থীদের সমাগম সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বিচারিক আদালতগুলোর আজকের কার্যক্রম সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ মনিটর করছেন। নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে কি না হলে কেন হচ্ছে- ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারী সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা আদালতপাড়া নিয়ে রোববার প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইনকিলাব। এর পরপরই সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ জামিন এবং জরুরি বিষয় ব্যতিত বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে ওইদিনই সার্কুলার জারি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ