পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফরিদপুরের একজন বাসিন্দা গত বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। দুদিন আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তিনি হাসপাতাল ভর্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু ফরিদপুরের কোন হাসপাতালই তাকে ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। তাকে পরামর্শ দেয়া হয়, তিনি যেন আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। রোগীর ভাই নেয়ামুল বাসার বলেন, আমরা সবগুলো হাসপাতালে চেষ্টা করেছি। এমনকি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও গিয়েছি। কিন্তু সেখানে তারা বলেছেন, রোগির লক্ষণ করোনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তাই এখানে ভর্তি করানো যাবে না। কোন হাসপাতালই ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। আইইডিসিআর’র হটলাইনে চেষ্টা করার পর তারা জানতে চেয়েছেন, বিদেশি কারো সংস্পর্শে আমার ভাই এসেছিল কিনা। যখন বললাম, সেটা হয়নি, তখন বললো, তাহলে তারা কোন টেস্ট করবে না। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলেছেন। কিন্তু স্থানীয় হাসপাতাল তো চিকিৎসা দিতে রাজি নয়, আইইডিসিআর’র কাছে যেতে বলছে। আমরা এখন কি করবো?
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আরাফ (ছদ্মনাম) পেশায় সাংবাদিকতা করেন। গত কিছুদিন বিমানবন্দর ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত ব্রিফিং কাভার করেছেন। গত কিছুদিন থেকে সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় গত শনিবার রাতে আইইডিসিআর’র হটলাইনে বারবার কল করেও সংযোগ পাননি। পরে রোববার সকালে নিজেই আইইডিসিআরে যেতে চান কিন্তু আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এখানে ভিড় করতে নিষেধ করেছেন বলে ওখানকার একজন বৈজ্ঞানিকের সহায়তা নেন। ওই বৈজ্ঞানিক আরাফের লক্ষণ শুনে দ্রুত নমুনা পরীক্ষার জন্য বাসায় লোক পাঠাচ্ছেন বলে জানান। এরপর দফায় দফায় ওই বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেও ওই দিন নমুনার জন্য কেউই বাসায় যাননি। এমনকি পরের দিনও (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত আরাফের বাসায় আইইডিসিআর’র কোন লোক যায়নি। বার বার কল করে পরে বিকালে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসেন আইইডিসিআর’র কর্মীরা। আইইডিসিআর’র সঙ্গে পরিচয় থাকা স্বত্তেও এবং একজন সাংবাদিক হয়েও নমুনা পরীক্ষার জন্য দুই দিন সময় লাগায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরাফ। তারমতে, সবকিছু হাতের নাগালে থাকা স্বত্তেও একজন সাংবাদিককে যদি নমুনা পরীক্ষা করাতে এতো সময় লাগে তবে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হচ্ছে বোঝাই যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইডিসিআর’র একটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমাদের জনবল সঙ্কট। একই সঙ্গে পরীক্ষা এবং গবেষণার জন্য ভাইরোলজিষ্ট ও মাইক্রোবায়োলজিষ্টের অভাব রয়েছে। তাই চাইলেই নমুনা পরীক্ষার জন্য লোক পাঠানো সম্ভব হয় না। িিতনি বলেন, খুব সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে চলছে আইইডিসিআর। করোনার প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে সরকার প্রস্তুতির অনেক সময় পেয়েছে কিন্তু সে অনুয়াযী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্তমানে এর চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
আইইডিসিআর গতকালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর নতুন করে মাত্র ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৬২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলো। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) পরীক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষায় অনীহা দেখা যাচ্ছে।
তবে বেসরকারি একটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা আমাদের হাসপাতালেই নেই। এখন একজন রোগীকে ভর্তি করানোর পরে যদি করোনাভাইরাস পাওয়া যায়, তখন সেটি আমাদের অন্য রোগীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, চিকিৎসকদের মধ্যে ছড়াবে। আমরা সেই ঝুঁকি নিতে চাই না। এ কারণে আমরা রোগীদের সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় যেতে পরামর্শ দিচ্ছি।
সরকারি একটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্দি-কাশির চিকিৎসা করার জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা করেছে। আমাদের এখানে তো সেরকম নাই। তারপরেও ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা আমরা দিচ্ছি। কিন্তু অনেক উপসর্গ থাকলে আমরা তাদের বিশেষ হাসপাতালগুলোতে যেতে বলি। আমাদের এখানে তো আরও রোগী আছে, তাদেরও তো সুস্থ থাকতে হবে। তিনি বলছিলেন, আমাদের চিকিৎসা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের তো নিরাপত্তামূলক পোশাক পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) থাকতে হবে। আমার হাসপাতালের কথা বলি, এখানে কোন পিপিই আসেনি। তাহলে কী পড়ে আমি রোগীদের সেবা দেবো?
কিন্তু রোগীদের অভিযোগ, করোনাভাইরাস সন্দেহে যেসব হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেখানে আইইডিসিআরের রোগ পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া ভর্তি করা হচ্ছে না। কিন্তু বিদেশ ফেরত বা ফেরতদের সংস্পর্শের ইতিহাস না থাকলে, সেরকম রোগীদের পরীক্ষা করতে রাজি নয় আইইডিসিআর। ফলে রোগীরা মাঝখানে পড়ে চিকিৎসাহীনতার শিকার হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা এই ধরণের তথ্য পাচ্ছি, প্রকাশ্যেই দেখতে পাচ্ছি যে, এই ধরণের বিষয়গুলো হচ্ছে। অনেকদিন ধরেই এই সমস্যা হচ্ছে, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি। প্রত্যেকটা হাসপাতালের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে, কথা বলে এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায়, আমরা সর্বাত্মকভাবে সেই চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ছোটখাটো অসুস্থতা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। ছোটখাটো অসুখ বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব।
এদিকে দেশের বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ঠান্ডা-সর্দি, জ্বর-কাশির কোনো রোগীকে তারা স্পর্শ করছেন না। সংক্রমিত নয়; কিন্তু জ্বর, সর্দি বা কাশির সমস্যায় ভুগছেন- এমন রোগীকেও চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। কোনো কোনো ডাক্তার জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেবেন না বলেও লিখে রেখেছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো এসব রোগী সরকারি হাসপাতালে রেফার করছে। এতে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা চিকিৎসা করছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও নিরাপত্তা না থাকায় এ পর্যন্ত ১ জন চিকিৎসক ও ২ জন নার্সসহ ৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই চিকিৎসক-ও নার্সদের আতঙ্কে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকালও বলেছেন দেশে পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) এখনও তেমন প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, চীনে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল, তখন তাদের কাছেও পিপিই ছিল না। এখনও আমাদের পিপিই অতটা দরকার নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে রোগটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে তিন মাস ধরে পৃথিবীর যত দেশে করোনাভাইরাস স্থানীয়ভাবে সক্রমণ ঘটিয়েছে, সেসব দেশের মানুষকে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। অথচ দেশে নেই প্রয়োজনীয় হাসপাতাল সাপোর্ট, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ সাপোর্টও অপ্রতুল। আর তাই পরিস্থিতি যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অচিরেই দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।