Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেবলমাত্র কঠোর পদক্ষেপই করোনা প্রতিহত করতে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৬ এএম

যদিও ভীষণ কঠিন, তবে করোনা মহামারীকে রুখে দেয়া সম্ভব। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং তাইওয়ান দেখিয়ে দিয়েছে যে, কঠোর প্রচেষ্টায় এটিকে ধরাশায়ী করা সম্ভব।

তবে এটি করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বুদ্ধিমত্তা ও দ্রুততার সাথে উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং জনগণের কাছ থেকে সম্প‚র্ণ সহযোগিতার প্রয়োজন। মহামারী বিরোধী লড়াইয়ে বিশ্বের অভিজ্ঞ এক ডজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা তাদের সাক্ষাৎকারে কিছু বিষয়ে অবিলম্বে আবশ্যক পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
রেস্তোঁরা, জিম, হাসপাতাল, এমনকি ট্যাক্সিক্যাবের মতো বিপজ্জনক বদ্ধ পরিবেশ অন্যান্য অনেক স্থানের তুলনায় আরো বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কারণ সেগুলির ভেতরে অবস্থান করা যে কেউ খুব কাছ থেকে কাশি দিতে পারে।

এটি একটি মর্মস্পর্শী পরিস্তিতি। দুর্বলরা দ্রুত মৃত্যুবরণ করে এবং অতিরিক্ত জনবহুল হাসপাতালে অপেক্ষাকৃত বেশি লোকের মৃত্যু হয়। এবং পরিশেষে অধিক মৃত্যু অর্থনীনৈতিক মন্দা কাটাতে অধিক সময় নেয়।
অবরুদ্ধ হলে মানুষ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়। করোনা আক্রান্ত চীনের উহানে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলিতে খাবার, ওষুধ, ডায়াপার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য গ্রুপ অর্ডার জমা দেয়া হতো। চালানগুলি মুদি গুদাম বা সরকারী প্যান্ট্রিগুলিতে জমা করা হতো এবং পৌঁছে দেয়া হতো।

দক্ষিণ কোরিয়াতে সংক্রমিত প্রত্যেক ব্যক্তি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায় এবং তাদের ফোন এবং ক্রেডিট কার্ডের তথ্য তাদের প‚র্ববর্তী গতিবিধিগুলি সনাক্ত করতে এবং তাদের সংযোগগুলির সন্ধান করতে ব্যবহৃত হয়। অসুস্থ হওয়ার আগে যেখানে তারা গিয়েছিল তাদের কাছাকাছি থাকা প্রত্যেকের সেলফোনে সেই সতর্কীকরন তথ্য প্রচার করা হয়। এমনকি সম্ভাব্যভাবে সংক্রমণের প্রতি উন্মুক্ত যে কাউকে বাড়িতে সঙ্গনিরোধ করে রাখা হয়। যদি তাদের কেউ বাইরে যায় তবে একটি জিপিএস অ্যাপ পুলিশকে জানায়। এবং এর জরিমানা ৮,০০০ ডলার।

চীনের কৌশলটি বেশ অনুপ্রেরণাম‚লক। কয়েকটি শহরে পাতাল রেল ব্যবহার করার জন্য, নাগরিকদের একটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হয় যা তাদের ভ্রমনের স্থানগুলিতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাপ্লিকেশনগুলি সংক্রমিত ব্যক্তিরা ঠিক কোথায় ভ্রমণ করেছেন ব্যবহারকারীদের তা জানিয়ে দেয়।
গত বছর ভাইরাস গবেষক ড. ডেভিড হেইম্যান সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন যেখানে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী ছিল। তিনি ক্লাস শুরুর ঠিক আগে তারা কোথায় বসেছিল তা রেকর্ড করার জন্য তাদের ছবি তোলা হয়। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘এইভাবে, যদি কেউ পরে সংক্রমিত হয় তবে আপনি তাদের কাছে কে বসেছিলেন তা জানতে পারবেন।’

মহামারী চলাকালীন জীবনের কিছু গুরুত্বপ‚র্ণ বিষয়গুলিতে সরকারী হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয়। সারাদেশে খাদ্য, জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন লাইন এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনগুলি যাতে প্রবাহিত হতে পারে তা কেবলমাত্র সরকারই অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য আইন প্রয়োগ করে নিশ্চিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ জাতীয় উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত দ্রæত নেওয়া উচিত ।

চীন ও কোরিয়াতে অবরুদ্ধকরণের কারণে কর্মহীন বহু মানুষ জ্বর পরিমাপ, সংক্রমিতদের সংযোগ সন্ধান, হাসপাতাল তৈরী, খাদ্য সরবরাহ, এমনকি সংক্রমিতদের বাচ্চাদের দেখভাল বা সৎকারের জন্য সেবচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ শুরু করে।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীরা কিছু মৌলিক নার্সিং, ল্যাব টেকনিশিয়ানের কাজ বা হাসপাতালের ঘরগুলি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার মতো কিছু গুরুতর চিকিৎসা সহয়তা করতে সক্ষম হয়।
করোনার বিরুদ্ধে প্রত্যেককে রক্ষা করবে এমন একটি চুড়ান্ত প্রতিষেধকের আশায় অনেক সংস্থা এবং সরকার ইতোমধ্যে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলির কাজ দ্রæত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞ ড. এন্ড্রু ফাউচি একাধিকবার ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলির ক্সতিকর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কার্যকারিতার পরীক্ষা করতে সময় প্রয়োজন।

করোনভাইরাসকে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করে ডবøুএইচও’র মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাধনম ঘেরব্রেয়েসাস দেশগুলিকে একে অপরের সাফল্য থেকে শিক্ষা নেওয়ার, একযোগে কাজ করার এবং প্রতিটি জাতীর জন্য হুমকির বিরুদ্ধে একে অপরকে রক্ষা করার আহŸান জানিয়ে টেদ্রোস বলেছেন, ‘ভাইরাসটি প্রতিহত করার জন্য বিচ্ছিন্নতা এবং সংযোগসন্ধানের থেকেও আরো বেশি আগ্রাসী প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজন।’ সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ