Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাজির গরু : চট্টগ্রামে করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা

ডাক্তার নার্সদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই শুরু হয়নি শনাক্তকরণ পরীক্ষা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৭ এএম

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলা হলেও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি সামান্য। পরিস্থিতি অনেকটা ‘কাজির গরু খেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ এর মতো। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতির কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। এখনও পর্যন্ত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা যায়নি। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী মিশে গেছেন সাধারণ মানুষের সাথে। রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তকরণ কিট আসার ঘোষণা দেয়া হলেও চার দিনেও সে কিট চট্টগ্রাম পৌঁছেনি। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হলেও তাতে নেই চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম। নেই চিকিৎসক ও সেবিকাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।

নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি দিনে দিনে নাজুক হয়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জনগণকে সচেতন ও সাহস জোগাতে গতকাল মাইক হাতে রাস্তায় নামেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভারত-মিয়ানমারের সাথে স্থল ও নৌ সীমান্তের কারণে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম করোনা সংক্রমণের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ানক ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কারণে ওই অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিমান যোগাযোগ সীমিত হয়ে আসলেও বিদেশ থেকে যাত্রী আসা থামছে না। সমুদ্রপথেও অনেকে দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৪২৭ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাদের সবাই আকাশ ও নৌপথে দেশে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে বিভাগের ১১ জেলায় সরকারি হিসাবে, কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ছয় হাজার ৮৮৮ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল পর্যন্ত ৩৮২ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। তবে তাদের কারও মধ্যে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম এখনও কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশান্স ডিজিজেস-বিটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও ঢাকা থেকে কিট এসে না পৌঁছায় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। আজ মঙ্গলবার পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিটিআইডির পরীক্ষাগারের প্রধান চিকিৎসকসহ তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইসিডিসিআর) থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরবেন আজ। গতকাল ঢাকা থেকে আরও তিনজনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়নি। নতুন করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল থেকে আরও একজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বিটিআইডিসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেটেড বেড প্রস্তুত রয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, যেনতেনভাবে কিছু বেড তৈরি ছাড়া সেখানে প্রস্তুতি বলতে আর কিছুই নেই। কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, তাদের নিজেদের সুরক্ষায় কোন সরঞ্জাম নেই। দেয়া হয়নি কোনো প্রশিক্ষণও।
নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে করোনা আতঙ্কে। জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কোনো রোগী আসলে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকেও একই অবস্থা। নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বারেও রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের দাবি করা হলেও তাতে সুফল মিলছে না।
দেশের বিশিষ্ট নিউরোসার্জন প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসকেরা সব ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আগে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বেতন বাড়ানোর দাবি করছি না, আমরা চাচ্ছি সুরক্ষা। চিকিৎসক, সেবিকারা সুরক্ষিত হলে রোগীরাও সুরক্ষিত হবেন। দেশে পার্সোনাল প্রটেকশান ইক্যুইপমেন্ট পিপিইর সঙ্কট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সুযোগে কেউ যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অমান্য করে পিপিই তৈরি ও বাজারজাত না করেন। এমনটা হলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থায় আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরুর আগেই চিকিৎসকদের সুরক্ষায় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে এখনই উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ