Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশার ফেরিওয়ালা চট্টগ্রামের তারুণ্য

করোনায় মানুষের পাশে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৭ এএম

ভয়-শঙ্কায়ও ঘরে বসে নেই। ওরা ফেরিওয়ালা। মানুষের কাছে ছুটছেন। নিজেদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সযত্মে তৈরি হ্যান্ডস্যানিটাইজার নিয়ে পথচারীদের হাত জীবাণুমুক্ত করছেন। আরও বিলিয়ে দিচ্ছেন পাড়া মহল্লার স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন-সমিতির মাধ্যমে। কেউ নাগরিকদের হাতে তুলে দেন ছোট ছোট সাবান, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক।
আবার অনেকে করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে সজাগ করছেন। সড়ক, মোড়ে মোড়ে, অলিগলি পথঘাট ঘুরে ঘুরে চালাচ্ছেন প্রচার। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে লেখা জনসচেতনতার জরুরি তাগিদ দেওয়া কথাগুলো চমৎকার বুদ্ধিতে তুলে ধরছেন। মানুষের নজর কাড়ছে বেশ। নিজেরাও ওরা স্বাস্থ্য-ঝুঁকি এড়াতে পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েই আসছেন মাঠে।
করোনার বৈশ্বিক মহামারীর ভয়াল দুর্যোগ যখন বাংলাদেশকেও তাড়া করেছে ঠিক তখনই জনগণকে সচেতন করছেন মানবিক সেবা-সাহায্যের বিভিন্ন উপায়-বুদ্ধি খাটিয়ে। আশার ফেরিওয়ালা যেন চট্টগ্রামের এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবীগণ। বেশিরভাগই চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটি পড়–য়া তরুণ, যারা দেখাচ্ছে ঘোর অন্ধকারের বিপরীতে আশার আলো। তাদের কথা হলো, চরম বিপদের সময় ধেয়ে আসছে। তার আগে মানুষকে স্বাস্থ্যগত ও জীবনযাপনে যতটা পারি সচেতন করি। তাহলে হয়তো জীবনহানির শঙ্কা কমবে।
গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, কাজীর দেউড়ী, জুবিলী রোডসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেল আশা ও ভরসা জাগানিয়া তরুণদের মানবিক কাজের ব্যস্ততা। এটাই যেন মানবিক বাংলাদেশের ছবি। এ যেন চট্টগ্রামের তারুণ্যের অন্যরকম যুদ্ধ। কবির ভাষায়- এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। কিংবা তারুণ্য মানে না ডর-ভয়, পরাজয়-পরাভব। তবে মৃত্যুর ভয়কে জয় করার লড়াই। তার পাশাপাশি চট্টগ্রামের আলেম-মাশায়েখ সমাজ ও দরবারভিত্তিক সামাজিক সচেতনতা তৈরি, স্বেচ্ছাসেববক প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
জামালখান সড়কে এ ধরনের জনসচেতনতা ও সেবায় হ্যান্ডস্যানিটাইজার হাতে আরমান হোসেন, মো. ইশরাক, দীপু দেব, আলেয়া ইকবালের সঙ্গে কথা বলি। নিজেও হাত জীবাণুমুক্ত করি। জানালেন, সরকারি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় কলেজগুলো তো বন্ধই। শুধুই কী ঘরে বসে থাকা চলে? দেশের মানুষ যতটা না করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত তার চেয়ে বেশি অভাব জনসচেতনতা। উন্নতবিশ^ বিপর্যস্ত। কী হবে আমাদের তা ভাবতেও শিউড়ে উঠি। তবে বিপদ ঘিরে ফেললে তখন তো কিছুই করার থাকে না। আগেই প্রস্তুতি দরকার। অথচ সারাদেশেই তার অভাব রয়েছে।
তরুণরা বললেন, এই মুহূর্তে পরিবার-পরিজনের ঝুঁকি ঠেকাতে করণীয়গুলো আমরা মানুষের চোখে আঙুল দিয়েই বুঝিয়ে দিচ্ছি। বেশ সাড়াও পাচ্ছি। যেমন- পথচারীদের বলছি সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। দরকার হলে বারেবারে তা করুন। পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিন। জীবনযাপনে সতর্ক হোন। অযথা ঘোরাফেরা করবেন না। নিজ বাসস্থানে থাকুন যদি কাজ না থাকে বাইরে। আতঙ্ক নয়, সতর্ক হোন ইত্যাদি। অবশ্য এসব কাজের পেছনে আমাদের শিক্ষকগণ উৎসাহ ও সাহস যুগিয়ে আসছেন। স্থানীয় সমাজসেবকগণ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেন। জানাগেল, বেশিরভাগ তরুণ শহরের পাড়া-ভিত্তিক এবং ক্যাম্পাসভিত্তিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথেও জড়িত। তাই দলবদ্ধভাবে সৃজনশীল কাজপাগল ওরা।
এ ধরনের মানবিক ও জনসচেতনতার করোনা যুদ্ধজয় করতে আগেভাগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী। নিজদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব ব্যবহার করে ইতোমধ্যে হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরি করে ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চুয়েট, সাদার্ন ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থীরা। নেপথ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের ভিসি, প্রো-ভিসি, অধ্যক্ষ ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, শিক্ষকবৃন্দ এবং টেকনিশিয়ানগণের উৎসাহ সুফল দিয়েছে। তবে বাসএত এ কথা ঠিক যে ৭০ লাখ চট্টগ্রাম নগরবাসীর ৪১টি ওয়ার্ড ও আয়তন হিসাব করলে এতটা প্রচেষ্টা এখনও যথেষ্ট নয়।
তা সত্তে¡ও করোনাভাইরাস মহামারীর কবল থেকে সুরক্ষা পেতে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে মাঠে তৎপর থাকা সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো জাতি ও দেশের প্রয়োজনে নিজেদের মেধা ও শ্রমকে বিলিয়ে দিয়ে একটা সম্ভাবনার আলো ফোটানোর পরিবেশ তৈরি করছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাঠে। যেমন- যুব রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিসেফ ফোর্স, সন্ধানী, সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, সবুজ-ছায়া, মাতৃভূমির জন্য, তারুণ্যের কলতান, চাটগাঁর নওজোয়ান ইত্যাদি
এর বাইরেও অনেকে বন্ধু-বান্ধব, সমমনা তরুণ মিলেমিশে নেমেছে। ওদের মাঝে নেই আজ ভেদাভেদ। একই প্রত্যয় যাতে ভালো থাকে, সুস্থ থাকুক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জনগণ। করোনার ছোবলে আর নয় একটিও আনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু। বুদ্ধিদীপ্ত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন, সমুদ্র বন্দর, সীমান্ত ঘেঁষা, প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি এমননিতেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ একটা ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে। তাও প্রস্তুতির নানাদিক দুর্বল।
তরুণদের এসব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এবং চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের এসব মহৎ উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে। করোনায় জনসচেতনতার এখনও অভাব রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই বৈশ্বিক মহামারী থেকে সুরক্ষা পেতে হবে।
তিনি বলেন, আমিও এ শহরের বাসিন্দা। এ নগরীর যে কোন দুর্যোগ বিপর্যয়ে নগরবাসীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আমি প্রস্তুত। করোনাভাইরাস নিয়ে চসিক প্রথম থেকেই জননগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে জানিয়ে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে অধিক সচেতন হতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নিজের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। সচেতনতা এলেই এ মরণ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামে আলেম-ওলামা ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং বিভিন্ন দরবারভিত্তিক করোনায় জনসচেতনতায় প্রশিক্ষণের উদ্যোগও শুরু হয়েছে। তেমনি এক আয়োজন ছিল চট্টগ্রাম জেলায় বোয়ালখালীর রাহে ভান্ডার দরবারে। গত শনিবার দরবার প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন আল্লামা সুফি ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ। এ দরবার প্রাঙ্গণে স্থানীয় জনগণের জন্য জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী বিতরণের জন্য রাখা হয়।
ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপিনিয়ন (ইকো) নামে এক সংগঠন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় জনগণকে সচেতন করতে গত রোববার নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে। এতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে প্রধান সমুদ্রবন্দর আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক বিদেশি চাকরি করছেন, প্রবাসীরা এসেছেন, আসছেন। তবে ঝুঁকি মোকাবিলায় মনোবল বজায় রাখা ও সচেতনতা জরুরি। এতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ইকোর সভাপতি মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী প্রমুখ। #



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ মার্চ, ২০২০, ১০:৩৭ এএম says : 0
    ওরে সব তারুণ্য, ইসলাম শিক্ষা করো আর করতে বলো আমল করো এখানেই সকল সফলতা রুগ মুক্তি, শান্তি। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ মার্চ, ২০২০, ১০:৩৭ এএম says : 0
    ওরে সব তারুণ্য, ইসলাম শিক্ষা করো আর করতে বলো আমল করো এখানেই সকল সফলতা রুগ মুক্তি, শান্তি। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ