Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ঠেকাতে ক্যামেরা পোজ

সংবাদ সম্মেলন ও বক্তৃতা-বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ চিকিৎসা প্রস্তুতি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

মরণঘাতি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে গোটা বিশ্ব। চীন, ইতালি, স্পেন, ইরান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ভারতসহ অন্যান্য দেশের মতোই অচেনা এই ঘাতক বাংলাদেশেও হুল ফুটিয়েছে। জনবহুল এই দেশের কোটি কোটি মানুষ করোনায় ভয়ে ভীত-আতঙ্কিত। অন্যান্য দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে চলছে শুধুই ক্যামেরা পোজ। মানুষ উৎকণ্ঠিত অথচ দৃশ্যমান নেই কোনো প্রস্তুতি।

সংশ্লিষ্টদের সংবাদ সম্মেলন, টিভিতে বক্তব্য-বিবৃতি এবং আস্ফালন ছাড়া করোনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়। ডাক্তার, নার্সের প্রস্তুতি টিভিতে দেখানো হলেও বাস্তবে তাদের নিরাপত্তা কিভাবে দেয়া হবে সেটাও চূড়ান্ত করা হয়নি। চীন অনেক আগেই কিট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে; অথচ গতকালও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, চীন থেকে করোনা শনাক্তে কিট ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আনতে চার্টার ফ্লাইট খোঁজা হচ্ছে। করোনা ঠেকাতে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমান অর্থ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জরুরী তহবিল গঠন করেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো। সরকারি ভাবেও ইতোমধ্যে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অথচ এখনো করোনা মোকাবিলায় ‘চার্টার ফ্লাইট খোঁজা’র মতো আয়োজন চলছে। টিভি খুললেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব ও দায়িত্বশীলদের বক্তৃতামালা কানে ভেসে আসে। অথচ মানুষ এখনো জানতে পারছে না তারা কোথায় চিকিৎসা পাবে এবং আক্রান্ত হলে কোথায় যাবেন। অব্যবস্থাপনা ও লেজেগোবরে অবস্থা দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রশিদ-ই মাহবুব প্রশ্ন তুলেছেন ‘এতোদিন তাহলে মন্ত্রী, সচিবরা কীসের প্রস্তুতি নিলেন? অবশ্য প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এখনই চিকিৎসকদের পিপিই দেওয়ার জোর তাগিদ দিয়েছেন। বিশ্বের ১৮৭টি দেশ যখন করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে তখন করোনা প্রতিরোধে সক্ষম পারসনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সংকটে দেশের হাসপাতালগুলো। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দেওয়া হয়নি ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণ। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতেও অনেক জায়গায় ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করেছে। গত শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে করোনা আতঙ্কে কর্মরত সেবিকারা (নার্স) হাসপাতাল ত্যাগের চেষ্টা করেছেন। আবার ডাক্তারদের সুরক্ষায় পিপিই না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার অভাবে রোগী মৃত্যুরও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুরক্ষা উপকরণ না থাকায় আতঙ্কে ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্টের অনেক রোগীকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ পিপিই না থাকলে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় থাকছেন। তাই অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ উহানে সংক্রমণের পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বারবার বলেছেন, সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছেন করোনা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

গত শনিবারও পৃথক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, চীন থেকে ১০ হাজার টেস্টিং কিট এবং সমপরিমাণ পিপিই দ্রæতই চলে আসবে। আরও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সুতরাং, এসব সরঞ্জাম নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এমনকি কোন কোন মন্ত্রী বিশ্বব্যাপি এই মরণঘাতি এই ভাইরাসকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলছেন ভাইরাস থেকে তাদের দল আরও বেশি শক্তিশালী। আর তাই করোনা মোকাবেলায় দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সংবাদ সম্মেলন ও কথাতেই সীমাবদ্ধ দেখছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতির জন্য দুই মাসের অধিক সময় পেলেও কোন ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। কারণ এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রথমেই দরকার ছিল ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা। কিন্তু দেশের ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষায় পিপিই নেই। এমনকি কোন ধরনের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি। তাই তাদের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনীহা। কারণ তারাও মানুষ। তাদেরও একটি পরিবার আছে। তাদেরও এই মহামারী থেকে বাঁচার অধিকার আছে। তাদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত মহামারি এই রোগ প্রতিরোধে প্রস্তুতির প্রধান শর্তের নাম পিপিই। তবে বাংলাদেশে বিশেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই বিষয়ে যথেষ্ঠ ঘাটতি দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাই ডাক্তার, নার্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ রোগীকে সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সকলের পিপিই অর্থাৎ আত্মসুরক্ষার পোষাক ও সরাঞ্জম নিশ্চিত করার জোর তাগিদ দিয়েছেন। তবে বিশ্বব্যপী সৃষ্ট নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসচেতনতার বিকল্প নেই জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ডাক্তার কিংবা নার্স নয় পারসনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী থেকে শুরু করে দায়িত্বরত সাংবাদিকদেরও।

এদিকে চিকিৎসক নার্সদের পিপিই ছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্তে পরীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দেশের করোনা সনাক্ত পরীক্ষার একমাত্র নাম আইইডিসিআর’র। প্রায় ১৭ কোটি লোকের এই দেশে কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেলে এই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কিছু ফোন নম্বরে ফোন করতে হবে। তারপর তারা কিছু প্রশ্ন করে সন্তুষ্ট হলে তাকে পরীক্ষা করা হবে। তবে এই ফোন নম্বরের সংযোগ পাওয়া অনেকটা দুষ্কর। আবার অনেকের পক্ষে বারবার চেষ্টা করেও এই নম্বরের সংযোগ পাওযা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অধিকাংশেরই লক্ষণ থাকা স্বত্তেও করোনার পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ উদ্বেগ হচ্ছে এটাই। সংস্থাটির মহাপরিচালক গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, সব দেশের প্রতি আমাদের বলার বিষয় হচ্ছে ‘পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা’। মানে করোনা আক্রান্ত হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে প্রথম কাজ হলো পরীক্ষা করানো। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা পরীক্ষায় কীট রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৩২টি। এ পর্যন্ত ৪৬৪ জনের নুমনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পিপিই দেওয়া হয়নি। অথচ মন্ত্রী, সচিবরা প্রতিদিন বলছেন, তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাহলে কীসের প্রস্তুতি তারা নিলেন? তিন মাস সময় পেয়েও তারা করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট ও পিপিই সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রোগটি দেশব্যাপী বিস্তার ঘটালে তখন পরিস্থিতি কী হবে? কারণ যারা সেবা দেবেন তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই। এটি ভাবাই যায় না। তাহলে তারা কীভাবে সেবা দেবেন? এটি কেন ভাবা হলো না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগ তাহলে এতদিন কী কাজ করল? আদৌ কী কোনো পদক্ষেপ তারা নিয়েছিল। নাকি প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে শুধু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান ডা. রশিদ-ই মাহবুব।

সূত্র মতে, গত ১৬ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় কানাডা ফেরত শিক্ষার্থী নাজমা। করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা তাকে ফেলে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। পিপিই পোষাক না থাকায় মুমূর্ষ নাজমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও পরে জানা যায় নাজমা মারা গেছেন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এর জটিলতায়।

এদিকে গত শনিবার রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোর্শেদ রশীদ স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় হাসপাতালে সেবা গ্রহণের জন্য আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এবং প্রতিরোধ কর্মসূচি হিসেবে হাসপাতালে কর্মরত এবং সেবা কাজের সঙ্গে জড়ির সবার মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। সম্পদের স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের তরফ থেকে সবাইকে মাস্ক সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে নিজ উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করা হলো।

এই আদেশের পর অনেকের প্রশ্ন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকসহ কর্তাব্যক্তিরা এতদিন তাহলে কী প্রস্তুতি নিয়েছেন? দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?

সরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমরা প্রস্তুতির জন্য আড়াই মাস সময় পেয়েছি। চিকিৎসকদের ডব্লিউওএইচের স্বীকৃত মানসম্মত পিপিই দিন। প্রয়োজনে বেতন কর্তন করুন। অনতিবিলম্বে চিকিৎসকদের পিপিই দিন। আপনার, আমার, মানুষের স্বার্থেই এসবের ব্যবস্থা করুন।

অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম পোশাক না থাকার প্রতিবাদে চার ঘণ্টা কর্ম বিরতি পালন করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেরা যাতে করোনায় আক্রান্ত না হন সেজন্য করোনা প্রতিরোধী ইকুইপমেন্ট দেওয়ার দাবি করেন তারা।

সূত্র মতে, দেশের সব হাসপাতালে পিপিই সরবরাহ করা হয়নি, যা সরবরাহ করা হয়েছে তাও চাহিদার তুলনায় কম। আবার যেসব পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের পিপিই আগে থেকেই হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। করোনাভাইরাস একটি নতুন ভাইরাস। এর সংক্রমণ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মানের পিপিই বা বডিস্যুট সরবরাহ করা দরকার।

পিপিই জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পিপিই মজুদ আছে ১৬ হাজার ১০০ হ্যান্ডগ্লাভস; ২২ হাজার ২৯৫ হ্যান্ডরাব; ৪২ হাজার ২০০ ফেসমাস্ক, ক্যাপ ও সু-কভার; ৩৪ হাজার ৮৯টি সার্জিক্যাল মাস্ক ও প্রটেক্টিভ কভারওয়েল; ৩৪০টি কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেক্টর (অ্যাপ্রোন, ক্যাপ ও সু-প্রটেক্টর); ১২ হাজার ৬২০টি গাউন এবং ৪ হাজার ৪৩০টি আই প্রটেক্টর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই মজুদ আছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এগুলো পাঠানো হচ্ছে। কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেয়ে না থাকলে সিএমএসডি থেকে সংগ্রহ করতে পরবেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন পিপিই ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিদিনই আনা হচ্ছে। পিপিই নিয়ে কোনো সংকট হবে না। আমরা ১০ লাখ পিপিই সংগ্রহের চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল আছে ৬৫৪টি। এসব হাসপাতালে আলাদা ৫ থেকে ১০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। করোনার চিকিৎসা দিতে ঢাকায় ৬৫০টিসহ সারাদেশে ৫২৯৩টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোর আইসোলেশন ইউনিটে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সবারই পিপিই প্রয়োজন।

বরিশাল বিভাগের একজন সিভিল সার্জন বলেছেন, আমরা এখন পর্যন্ত পিপিই পাইনি। পিপিই সংগ্রহ করতে আমাদের অফিসের লোকজন ঢাকায় গেছেন। হয়তো পাবো। তবে চাহিদা অনুযায়ী দিচ্ছে কিনা সেটি পাওয়ার পরে বলা যাবে।

যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকদের পারসনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট দেওয়ার জোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। অন্যথায় সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও মত তার।

দেশে পিপিই তৈরির উদ্যোগ
দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসকসহ মেডিকেলকর্মীদের পিপিই নেই বলে আলোচনা-সমালোচনা চলাকালীনই সুখবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস)। তারা চার লাখ পিপিই বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে-এমন সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার সঙ্গে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে জড়িত বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে গতকাল বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এমঅ্যান্ডএস’র ফিন্যান্স অ্যান্ড অপারেসন্স বিভাগের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, যৌথভাবে পিপিইগুলো উৎপাদন করা হবে। এর সঙ্গে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সেগুলো হলো- এমঅ্যান্ডএস, পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ, অনেস্ট, বুয়েট অ্যালামনাই, ঢাকার সব রোটারি ক্লাবের পক্ষে ঢাকা নর্থ-ওয়েস্ট রোটারি ক্লাব, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া এমঅ্যান্ডএস’র সাপ্লাইয়ার এফসিআই, তারা পিপিই’র সেম্পল ডেভেলপমেন্ট করছে। কামাল আহমেদ বলেন, এটি যৌথ উদ্যোগ। প্রাথমিকভাবে আমরা ২-৪ লাখ পিস উৎপাদন করবো। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে পে ইট ফরওয়ার্ড থেকে অনুরোধ পাই। উনারা চেয়েছিলেন এরকম কিছু করা যায় কি না, তখন আমরা মনে মনে এটাই চিন্তা করছিলাম। পরবর্তীতে আইডিয়া ডেভেলপ করা শুরু করছি। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারাও কিছু পরিকল্পনা করেছে। সবাই মিলে অর্থ যোগার করা হয়েছে। আমরাও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পিপিই তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পিপিই তৈরি করতে অনেকগুলো উপাদান দরকার হয়। সেখানে আমাদেরও সংশ্লিষ্টতা আছে উল্লেখ করেন তিনি।

‘সরকার অর্থ দিচ্ছে কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের-আপনাদের সবার টাকা দিয়ে হচ্ছে। আমরা যারা সংশ্লিষ্ট তারা টাকা তুলছেন, নিজেরা অর্থ দিচ্ছেন। সরকার কোনো অর্থ দিচ্ছে না। উৎপাদন কোন পর্যায়ে আছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনও ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে আছি। প্রোডাক্টাকে আমরা মেডিকেল স্ট্যান্ডার্ডে আনতে চাচ্ছি। এর জন্য এক-দুদিন সময় লাগবে।#



 

Show all comments
  • Sampa Saha ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    এদেশের সরকার ও জনগণক হচ্ছে টিউব লাইটের মতো, জালানোর সাথে সাথেই জলে না, একটু সময় নেয়।সেই বুঝলো তবে দেরিতে যখন ভাইরাস ছরিয়ে পরেছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Maksud Amin ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    সরকারের এই সব বুড়া থুড়া মন্ত্রী দিয়ে কিছু হবেনা, এরা কথা পর্যন্ত বলতে পারেনা। এদের বহির্বিশ্বের জ্ঞান কম, এরা উপস্থিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, ১৪ সদস্য টিম গঠন করতে করতে দেশের ১২ বেজে ওঠে,, যাক পরিশেষে কিছু দেশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে ভালো একটা প্রদক্ষেপ, তবে দেশের পরিস্থিতি ও নজর রাখতে হবে!
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Alam ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    good decision l সরকারের এই সব সিদ্ধান্ত গুলিকে সমআলোচনা না করে সরকারের পাশে থাকতে হবে। সরকার কে এখন কঠর হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Tariqul Islam ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এই করোনা ভাইরাসটি ভয়াবহ হয়ে উঠার আগেই অতি তারাতারি গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া হোক এবং কমপক্ষে ১৫/২০দিনের জন্য প্রিয় সেনাবাহিনী কে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হোক। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এই মূহুর্তে সকল ধরনের আইন মেনে চলতে বাধ্য করা হোক প্রিয় বাঙ্গালী জাতিকে। আর এনজিও ব্যাংকের সুদ সাময়িকের জন্য স্থগিত করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahan Imtiaz ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    আমরা অনেক সময় পেয়েছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেইনি। বিদেশ থেকে সহজেই দেশে ফিরছে মানুষ। ইতালি ফেরত প্রবাসীদের আমরা অদক্ষতা অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার সাথে গ্রহণ করেছি। তাদের দেশে ফিরাটাকে আমরা তেমন গুরত্বসহকারে নেইনি। এটা বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zannatul Kibria ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    ইতালির ফ্লাইট আরও ২ মাস আগে বন্ধ করা উচিত ছিল। সব রুগী দিয়ে দেশ ভর্তি করে,,, এখন ফ্লাইট বন্ধ করছেন। ,উদাসীন এই সরকার জনগনের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Fabiha Ali ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    এটা খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করছি। বাংলাদেশে এই ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার আগেই সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা খুব প্রশংসনীয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Rahman ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    এতো দিনে ভয় পেয়েছে তা হলে, তবে অনেক দেরি করে ফেলেছে,যেমন টা করেছে ইতালি, আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো ।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ২৩ মার্চ, ২০২০, ১১:৩৯ এএম says : 0
    আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো । আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো । আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো ।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ২৩ মার্চ, ২০২০, ১১:৩৯ এএম says : 0
    আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো । আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো । আল্লাহ্ মহান তুমি আমাদের সকলকে রক্ষা করো ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ