Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া বিচারিক কাজ বন্ধ

টনক নড়লো কর্তৃপক্ষের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়েছে সরকার এবং আদালত কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উত্থাপিত হওয়ার পরও করোনা সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা আদালতে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। বিষয়টি তুলে ধরে গতকাল রোববার দৈনিক ইনকিলাবে ‘ভয়াবহ করোনা ঝুঁকিতে আদালতপাড়া এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বন্ধের’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরপরই নড়েচড়ে বসে সরকার, আদালত কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রোববার সকাল সকাল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ছুটে যান সুপ্রিমকোর্টে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সক্ষে সাক্ষাত করেন তিনি। এর আগেই অবশ্য এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি এএম আমিনউদ্দিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাদা সাক্ষাত করে উচ্চ আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধের পরামর্শ দেন। পরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। এ সময় আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিচার বিভাগের সচিব, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, হাইকোর্ট বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারাও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিচারিক আদালতে জামিন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া নিম্ন আদালতের সকল বিচারিক কার্যক্রম মুলতবির সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল এক বিজ্ঞপ্তি দেন। তাতে বলা হয়, জামিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া দেশের নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ মুলতবির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোরও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে।

এদিকে, গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক নির্দেশনায় করোনাভাইরা প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাবজনিত যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসন থেকে ‘জামিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া দেশের নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ মুলতবির’ নির্দেশনা এলো। মূলত নিম্ন আদালতগুলোতে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি এড়াতে সর্বোচ্চ আদালত থেকে এ সিদ্ধান্ত এলো।
দৈনিক ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধের বিষয়ে পরামর্শ দিতেই তিনি এ বৈঠক করেন। প্রধান বিচারপতির খাসকামরায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মাহবুবে আলম বলেন, এ সংকটময় মুহূর্তে আদালত বন্ধের বিষয়ে বিচারপতিকে পরামর্শ দিয়েছি। নির্বাহী বিভাগ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলো দেখে আদালত বন্ধ হবে কি-না,সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরপরই বিচারিক আদালতে জামিন এবং জরুরি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বিচারিক কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন।

সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিচারাঙ্গন একটি জনবহুল এলাকা। করোনা প্রাদুর্ভাব রোধে এই অঙ্গনের মানুষের সতর্কতা ও সচেতনতা বেশি জরুরি। গত কয়েকদিন ধরেই আইনাঙ্গন সংশ্লিষ্টরা বিচার কার্যক্রম বন্ধ কিংবা সীমীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি মহোদয়ও অন্যান্য বিচারপতি মহোদয়গনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিচারিক কাজ মুলতবির এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

উল্লেখ্য, আদালতে বিচারপ্রার্থীদের নানা ধরণের কাজ থাকে। জামিন আবেদন, আপিল শুনানি, মামলার হাজিরা, সাক্ষ্য গ্রহণ, জবানবন্দী প্রদান, সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রদান, ঘোষণা মামলা, নতুন আবেদন ফাইল, রায়ের নকল উত্তোলন, আদালত পরিবর্তনের আবেদন, চার্জগঠন শুনানি, উচ্চ আদালতে রয়েছে জামিন, জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি, রিট, রুলের জবাব দাখিল, নকল উত্তোলন, আপিল ও ডেথ রেফান্সে শুনানি,রিভিউ পিটিশন,সিভিল রিটিশন,সম্পূরক আবেদন, আপিল, লিভ টু আপিলসহ বহু আবেদন-নিবেদনের সিদ্ধান্ত হয় আদালতে। সুপ্রিমকোর্টের মুলতবি সিদ্ধান্তের ফলে জামিন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য আবেদনের কার্যক্রম মুলতবি থাকবে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর নিম্ন আদালতের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সুপ্রিমকোর্টের অধীন। সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তে তাই বিচারিক আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ