পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মিরপুরের এক বাসিন্দা গত শনিবার মারা যান। তিনি যে বাসাটিতে থাকতেন সেটি এরপর লকডাউন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে বাবার মৃত্যু নিয়ে ছেলে ইকবাল আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকবাল আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার বাবার মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ দেয়া হচ্ছে। এটি পরিষ্কার করতে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন। তার পরিবার এখন বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকার একটি সরকারি মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই মরহুমের নাম প্রকাশ করা হলো না। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যাওয়া এ ব্যক্তির লাশ গতকাল সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দাফন করা হয়েছে। দাফনে তার দুই ছেলেসহ নিকটাত্মীয়রাও অংশ নিতে পারেনি। তার আগেই তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা এ শিক্ষাবিদের চিকিৎসা, মৃত্যু ও দাফন-সংক্রান্ত সব তথ্য জানিয়েছেন তার নিকটাত্মীয়রা। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১০ দিনের লোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে ওই শিক্ষাবিদের পরিবার থেকে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে করোনা নিয়ে সরকারি অব্যবস্থাপনার চিত্রও। তার পরিবারের অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাননি আক্রান্ত ব্যক্তি। পরে উচ্চপর্যায়ের তদবিরেই করোনা পরীক্ষার সুযোগ মিলেছিল আক্রান্তের। তবে ততোদিনে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি ঘটে। করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পরের দিনই বরেণ্য ওই শিক্ষাবিদের মৃত্যু হয়।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির চিকিৎসা নিয়ে কোনো অবহেলা করা হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি এড়িয়ে যান।
পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলো
পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা
আমি কখনো ভাবিনি যে আমার পিতার মৃত্যুর ঘটনা আমাকে এই ভাবে লিখতে হবে। কিন্তু কিছু মিডিয়ার মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমি বাধ্য হলাম ফেসবুকে কিছু সত্য প্রকাশ করতে।
গত ১৬ তারিখে আব্বা অসুস্থ বোধ করলে আমাদের ড্রাইভার ওই দিন বিকেলে তাকে কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই সময় আমরা ভাইয়েরা সবাই অফিসে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম ডাক্তার ধারণা করছে উনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং কোভিড ১৯ টেস্ট এর জন্য প্রস্তাব করেছে। অতঃপর ওই রাত্রেই আমরা টেস্ট এর জন্য ওঊউঈজ (আইইডিসিআর) এর হান্টিং নম্বরে ফোন দেওয়া শুরু করি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাদের সঙ্গে আমরা কমিউনিকেশন করতে সমর্থ হই, তারা আমাদের জানায় যেহেতু অসুস্থ ব্যক্তি বিদেশ ফেরত না এবং বিদেশ ফেরত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে উনি আসেন নাই সেহেতু এই টেস্ট ওনার জন্য প্রযোজ্য নয়, আমি তাদের বলেছিলাম উনি মসজিদে যায় এবং ওখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কি না তারা আমাদের বলেছেন যে এই ভাইরাস বাংলাদেশে কমিউনিটিতে মাস লেভেলে এখনো সংক্রমিত হয়নি সুতরাং আপনারা চিন্তা করবেন না, এটা সাধারণ শ্বাস-কষ্টের প্রবলেম।
ওই রাত্রেই আনুমানিক সাড়ে ১০টায় আমি তাকে শ্যামলীর একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং আমাদের পরিচিত একজন স্পেশালিস্ট ডক্টরকে দেখাই, উনি আমাকে বলেন, রোগীর নিউমোনিয়া হয়েছে তাকে নিউমোনিয়ার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তবে বাংলাদেশের কোনো হসপিটাল এই রোগীর ভর্তি নেবে না, আপনারা বাসায় ট্রিটমেন্ট করেন। আমি ওই রাত্রে বাসায় চলে আসি এবং আব্বাকে নেবুলাইজার দেয়া এবং মুখে খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকি। পরের দিন ১৭ তারিখে দুপুরে আমি আব্বাকে নিয়ে যাই শ্যামলীর ওই হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। তারা রোগী দেখে বলে যে রোগীর অবস্থা ভালো না তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে এবং তাদের আইসিইউ তারা দিতে পারবে না। এর পর আমি অন্য একটি হাসপাতালে কথা বলি। ওরা বলে ওদের আইসিইউ খালি আছে। আমরা দ্রুত আব্বাকে নিয়ে কেয়ার হাসপাতালে যায় এবং আইসিইউতে ভর্তি করি। ১৫ মিনিট পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বললেন এই রোগী তারা রাখতে পারবে না।
অতঃপর আমরা রোগী নিয়ে কল্যাণপুর একটি হসপিটালে যাই তারা আমাকে কেবিন দিয়ে সাহায্য করে কিন্তু তাদের আইসিইউ খালি নাই। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে বলেন এই রোগীর আইসিইউ লাগবে আপনারা দ্রুত আইসিইউ এর ব্যবস্থা করেন, আমি বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলতে থাকি কোথাও আইসিইউ খালি নাই। অতঃপর মিরপুরের ওই হাসপাতাল তাদের আইসিইউ দিতে রাজি হয়। আমি এবং আমার ছোট ভাই রাত্রে ৪টার সময় আব্বাকে নিয়ে সেখানে আসি এবং দুপুর ১২টার পর থেকে আব্বা লাইফ সাপোর্টে চলে যান। ১৮ তারিখ দুপুর থেকে আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওঊউঈজ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হই। অতঃপর ১৯ তারিখ বিকেলে ওঊউঈজ রাজি হয় এবং রাত্রে টেস্ট করে এবং পরের দিন ২০ তারিখ দুপুরে ওঊউঈজ আমাদের জানায় যে রিপোর্ট পজিটিভ। আমাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে ১৫ দিন।
রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর থেকে ওই হাসপাতাল আমাদের প্রেশার দিতে থাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়ার অনুমোদন দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা অনুমতি না দিয়ে তাদের বলতে থাকি ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আর রোগীর কাছেও যায়নি এবং আমাদের আইসিইউ এর ভেতর ঢুকতেও দেয়নি। যা হোক আমার আব্বু অবশেষে ২১ তারিখ ভোর তিনটার সময় ইন্তেকাল করে।
আমরা সন্তানরা ব্যর্থ, পিতার সঠিক ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে এবং এমনকি তার জানাজা তে আমরা উপস্থিত থাকতে পারি নাই। সন্তান হিসেবে, একজন পুত্র হিসেবে এর চেয়ে কঠিন কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। আমার বুকে পাথর বেঁধে বাসায় অবস্থান করছি সরকারের আইন মেনে ১৫ দিন। কিন্তু কিছু পেজ এবং ফ্রন্ট লাইনের মিডিয়া আমাদের নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় এসেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমার দুই ভগ্নিপতি, বড় বোন এবং তার স্বামী চিটাগং এর দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নিপতি জাপান থাকে। সে গত এক বছরের মধ্যে আসে নাই, আমার বাবা যেদিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট এ চলে যায়, সে দিন মানে ১৯ তারিখে আমার বড় বোন এবং বড় দুলাভাই চিটাগং থেকে আমাদের বাসায় আসে এবং তারাও হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করছে।
আমাদের এই বিপদের সময় দয়া করে আমার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট করবেন না। এখন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা সুস্থ আছে কারও মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দেয় নাই, আমার ছোট ভাই এবং আমার ড্রাইভারের কোভিড ১৯ টেস্ট করা হয়েছে, যেটা নেগেটিভ এসেছে। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেন, বাংলাদেশের সবাইকে যেন আল্লাহ হেফাজত করেন।-আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।