Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দেশে করোনায় আক্রান্ত বেড়ে ২৭

নতুন আক্রান্ত ৩ , সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫ : সিলেটে প্রবাসী মহিলার দাফন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২৩ মার্চ, ২০২০

বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; যাদের মধ্যে ২ সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং ১ জন পুরনো এক রোগীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট ২৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে পাঁচজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান হয়। 

ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম এবং অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত থাকলেও আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী। তাদের এক জনের বয়স ২০, একজনের ৩০ এবং একজনের বয়স ৪০ বছর। তাদের একজনের মৃত্যু ঝুকি রয়েছে। তার ডায়াবেটিস ও হাঁপানির সমস্যা আছে। তবে তিনজনের ক্ষেত্রেই লক্ষণ মৃদু। তারা ভালো আছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি। মোট মৃতের সংখ্যা দুই জনই আছে। অবশ্য সিলেটে এক লন্ডনফেরত এক নারী এবং খুলনায় আরও দুজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। যারা করোনাভাইরাসের মত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে এমন ৪০ জনকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তার নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। বাকিদের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক।
আইইডিসিআরে এ পর্যন্ত মোট ৬৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৬৫ জনের নমুনা।
প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, সিলেটে একজন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখনও ফলাফল আসেনি। কারও ক্ষেত্রে সন্দেহ করলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে সব প্রটোকল মেনেই তাদের সৎকার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মীরপুরে যে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, তিনি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ বলার আগে তারা আরেকটু সময় নিতে চান। তাদের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। মিরপুরে যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তার এলাকায় দুজন বিদেশ ফেরতের সন্ধান পেয়েছি। তাদের নমুনা সংগ্রহ করছি। আমরা দেখতে চাই তাদের মধ্যে কোনো সংক্রমণ ছিল কি না, তার কাছ থেকে এসেছিলেন কি না। আরেকজনের ব্যাপারেও (সিলেট) আইইডিসিআর তথ্য সংগ্রহ করছে। অন্যদের ক্ষেত্রে লক্ষণ উপসর্গ হওয়ার চারদিন আগে থেকে কন্টাক্ট ট্রেসিং করলেও তাদের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারণ আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাই। উৎস চিহ্নিত করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা যাবে। এমনকি তারা যেসব দফতরে গিয়েছেন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে সংক্রমণ হতে পারে এমন সম্ভাব্য কেউ আছে কি না।
সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি এখনও আইইসিইউতে আছেন। বিশ্বের আরও কয়েকটি জায়গায় কয়েকজন বাংলাদেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছেন বলে খবর এলেও আইইডিসিআর বিস্তারিত তথ্য পায়নি।
প্রসঙ্গেত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস চিহ্নি হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এদিকে স্বাস্থ অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৮৫টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছৈ। এরমাধ্যমে ১৬ হাজার ৫০৫ জনকে সেবা প্রদান করা যাবে। এছাড়া আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫১৫টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় এক হাজার ৫০ শয্যা। ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতাল মিরপুর ও সাজেদা ফাউন্ডেশন যাত্রাবড়ী এই পাঁচটি হাসপাতালে ২৯টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে, আরও ১৬টি শয্যা প্রস্তুত হচ্ছে। আশকোনার হজক্যাম্পে ৩০০ জনের কোয়ারেন্টিরে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরও ৭টি স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে ২৩ হাজার ৬৮৪ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পেয়েছে ৪ হাজার ৬২১ জন।
সিলেটে প্রবাসী মহিলার দাফন
সিলেট নগরের মানিকপীর টিলায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিলার।
সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল জানান, গতকাল দুপুর দেড়টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে জানাজার নামাজ পড়েন আত্মীয়স্বজনরা। পরে মানিকপীর টিলায় তাকে দাফন করা হয়। সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে নিহত ওই নারীর ছিলো ৬১ বছর। তিনি শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এর আগে গত শুক্রবার জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই নারী শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। গত ৪ মার্চ তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। গতকাল আইইডিসিআর থেকে লোকজন এসে তার রক্ত পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ