Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা টেস্ট প্রস্তুতির পথে চট্টগ্রাম

নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা কাটেনি চিকিৎসক-নার্সদের কোয়ারেন্টাইন উধাও প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রস্তুতি। বন্দরনগরীর অদূরে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশান্স ডিজিজেস-বিটিআইডির পরীক্ষাগারে হবে নমুনা পরীক্ষা। মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে রিপোর্ট।
গতকাল রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগী পাওয়া না গেলেও এ মহামারী ঠেকাতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বিদেশফেরত আরো ১১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মোট ৯৭৩ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে এসে নির্দেশনা মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে যারা উধাও হয়ে গেছেন তাদের নিয়ে বিপাকে প্রশাসন। আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে এসে সাধারণ মানুষের সাথে তাদের মিশে যাওয়ায় এ ভাইরাস সংক্রামণের বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বিষয়ে শেষ সময়ে এসে কঠোর হয়েছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশফেরত এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করায় পরিবারটিকে লকআউট করা হয়েছে। এখন যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীসহ সব ধরনের রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রকেটশান ইক্যুইপমেন্ট-পিপিই সরবরাহ করার দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ঢাকার বাইরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, শনাক্তকরণ কিটও পর্যাপ্ত রয়েছে। জানা গেছে, বিটিআইডির পরীক্ষাগারের প্রধান একজন চিকিৎসহ তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকার রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইসিডিসিআর) থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরবেন আজ। তারা সেখানে নমুনা পরীক্ষার হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বিটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম বিভাগে করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ক মুখপত্র ডা. মামুনুর রশীদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফ্রান্সের একটি দাতা সংস্থার দেয়া উন্নত প্রযুক্তির এ পরীক্ষাগারে দ্রুত নির্ভুল এবং নিরাপদভাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যাবে। এ পরীক্ষাগার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সন্দেহজনক করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেটেড ইউনিট খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক রোগীদের এসব ইউনিটে রাখা হবে। চিকিৎসকেরা তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যদি করোনাভাইরাস সন্দেহ করেন তারা নিজেরাই বিটিআইডির সাথে যোগাযোগ করবেন। এরপর ডবিøউএইচওর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। এক্ষেত্রে কোন রোগীকে সরাসরি বিটিআইডিতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। রোগ শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালগুলোর আইসোলেটেড ইউনিটে তাদের চিকিৎসা চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন হবে তাদের প্রাথমিকভাবে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হবে।

গত এক সপ্তাহে বিটিআইডিতে ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে পরীক্ষার জন্য যান। তাদের মধ্যে ১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইসিডিসিআরে পাঠানো হয়। বাকিদের শরীরে করোনার প্রাথমিক কোন লক্ষণও দেখা যায়নি। ১১ জনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ছয়জনের রিপোর্ট এসেছে তাদের কারোরই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বাকি পাঁচজনের রিপোর্ট শিগগির এসে পৌঁছবে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বিটিআইডিসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেটেড বেড প্রস্তুত রয়েছে।

নিজেদের সুরক্ষা চান ডাক্তার-নার্সরা
সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক এবং সেইসাথে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বা পিপিই না থাকায় তাদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী দেখবেন না বলে চেম্বারের বাইরে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি এবং বহির্বিভাগে জ্বর এবং সর্দি, কাশি আক্রান্ত কোন রোগী আসলে চিকিৎসকরা তাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। করোনা রোগীদের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে আলাদা ইউনিট চালু হলেও সেগুলোতে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে নিরাপত্তা চাওয়া একজন চিকিৎসকের মৌলিক অধিকার। তা না দিয়ে তাকে চরম ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়া অমানবিক। তিনি বলেন, চিকিৎসকের ঝুঁকিমুক্ত করা না হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রæত ছড়িয়ে পড়বে। এতে চিকিৎসক যেমন আক্রান্ত হবেন তেমনি চিকিৎসকদের মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন। আর এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন। চিকিৎকদের নিরাপদ করা গেলে সব ধরনের রোগী চিকিৎসা সেবা পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ