বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
জালাল উদ্দিন ওমর
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন কর্তৃক গঠিত স্যার জন চিলকোটের নেত্বতাধীন তদন্ত কমিশন গত ৬ জুলাই ইরাক ইনকোয়ারি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সাত বছর ধরে অসংখ্য শুনানি, সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ এবং তা যাচাই- বাছাইয়ের পর এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় আট হাজার পৃষ্ঠার এবং ২৬ লাখ শব্দের এই ইরাক ইনকোয়ারি রিপোর্টটি তদন্ত কমিশন ওয়েস্টমিনিস্টারে ব্রিটিশ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। আরো বলা হয়েছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের সব পথ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সেই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল ব্রিটেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তখনও সামরিক শক্তি প্রয়োগই শেষ অবলম্বনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে গোপনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এ বিষয়ে টনি ব্লেয়ারের হাতের লেখা একটি প্রতিশ্রুতি পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছে এটা নিশ্চিত করে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা যাচাই করা হয়নি। এই তদন্ত রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ শুরুর আট মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যে চিঠি লিখেছিলেন তাতে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, যত যাই হোক আমি আপনার সাথেই আছি। এই হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন স্যার জন চিলকোট কর্তৃক প্রণীত ‘ইরাক ইনকোয়ারি রিপোর্ট’র সার সংক্ষেপ।
তথাকথিত ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র (উইপনস অব মাস ডেস্ট্রাকসন) তৈরির সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ব্রিটেন ও পশ্চিমা বিশ্ব আন্তর্জাতিক সকল নিয়মনীতি এমনকি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত জাতিসংঘকেও উপেক্ষা করে গায়ের জোরে ইরাকের উপর ভয়াবহ ও নৃশংস যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল এবং সেই যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো ইরাক দখল করে ইরাকের মাটিতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করেছিল আর ১০ এপ্রিল অর্থাৎ মাত্র ২০ দিনে বাগদাদ দখল করে ইরাক বিজয় ও যুদ্ধ অবসানের ঘোষণা দিয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। একই সাথে ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এবং ইরাকিদেরকে সাদ্দামের স্বৈরশাসন ও তথাকথিত পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিনি এবং ব্রিটিশদের ইরাক আক্রমণ এবং সাদ্দামকে উৎখাতের ১৩টি বছর পেরিয়ে গেলেও ইরাকিরা মার্কিনিদের সেই গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কোনোটাই পায়নি। বরং ইরাকিরা হারিয়েছে স্বাধীনতা, পেয়েছে পরাধীনতা। আগ্রাসনের পর দেড় লক্ষ মার্কিন সৈন্য ইরাকে মোতায়েন করা হয়। সৈন্য মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ ৩৪টি দেশ। ইরাকের সবকিছু ধ্বংস করার পর এক দশক পরে মার্কিনিরা অধিকাংশ সৈন্য প্রত্যাহার করলেও এখনো ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের একটি বড় দল অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দূতাবাসটি এখন ইরাকেই অবস্থিত। এই ১৩ বছরে দখলদারেরা প্রায় দুই লক্ষ ইরাকিকে হত্যা করেছে। প্রায় পঁচিশ লক্ষ ইরাকি পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিজ দেশেই উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় বিশ লক্ষ ইরাকি। সাদ্দামের দুই পুত্রকেই হত্যা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার ইরাকিকে জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং তাদের উপর চালানো হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন।
আবুগারিব কারাগারের বন্দি নির্যাতনের ভয়াবহ এবং নৃশংস চিত্র বিশ্ববাসীতো দেখেছেই। ইরাকের সকল অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ইরাক পুনর্গঠনের নামে চলেছে ইঙ্গ-মার্কিনিদের লুটতরাজের ভয়াবহ খেলা। ইরাকের সব বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটের কোম্পানিগুলো। ইতোমধ্যেই খবর বেরিয়েছে ইরাক পুনর্গঠনের নামে এসব কোম্পানির মাধ্যমে ইঙ্গ-মার্কিনিরা ইরাক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি ডলার। ইরাকের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ সকল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ইরাকের প্রতিরক্ষা বলতে আজ আর কিছুই নেই। ইরাকের সর্বত্রই আজ কেবল নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। ইরাকিদের জান-মালের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। ট্যাংক, বোমা আর বিমানের গোলার আঘাতে হত্যা ও ঘরবাড়ি ধ্বংস এখন ইরাকের নিত্যদিনের চিত্র। ইরাকের প্রত্যেকটি নগরই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। প্রায় প্রতিটি দিনই ইরাকে বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে আর নিহত হচ্ছে ডজন ডজন মানুষ। তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ যেই ইরাকের ছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি অর্থনীতি, সেই ইরাকের অর্থনীতি এখন পঙ্গু ও বিদেশি দেনায় জর্জরিত। যেই ইরাক ছিল পৃথিবীর শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ, সেই ইরাকের মানুষেরা আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় তেলের জন্য তেলস্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।
মার্কিন আগ্রাসন এবং দখলদারিত্বের কারণে ইরাকিদের জীবনে সার্বিকভাবে এক মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে। তারা আজ দুঃখ এবং পরাধীনতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। ইরাকের বর্তমান অবস্থা সাদ্দামের শাসন আমলের চেয়ে অনেক অনেকগুণ খারাপ। সাদ্দামের আমলে ইরাকের অখ-তা অক্ষুণœœ ছিল, অথচ আজ ইরাক বহুখ-ে বিভক্ত। ইরাকিদের জীবনে আজ আর কোনো সুখ নেই, শান্তি নেই, নেই কোনো সুখবর। আছে কেবল দুঃখ, কষ্ট আর পরাধীনতার গ্লানি। যে কোনো বিচারে ইরাকের বর্তমান অবস্থা সাদ্দাম আমলের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ এবং এটি দিন দিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। বেকারত্বের কারণে ইরাকি নাগরিকরা আজ সম্পূর্ণ অসহায়। এককথায় ইরাক আজ একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. গিলবার্টের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি জরিপ যা গত ২০০৬ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ফলে সাড়ে ছয় লাখ ইরাকি নিহত হয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় পাঁচশত মানুষ নিহত হচ্ছে। অপরদিকে ১০ নভেম্বর ২০০৬ ইরাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর দেড়লক্ষ ইরাকি নিহত হয়েছে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত আরো অনেক ইরাকি নিহত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে অনেক পরিবার চিরতরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। পিতার মৃত্যুতে ছেলেমেয়েরা এতিম হচ্ছে, স্ত্রী হচ্ছে বিধবা। বিবাহযোগ্য ছেলের অভাবে ইরাকের নারীরা আজ বিয়ে করতে পারছে না। অবিবাহিত মেয়েদের সংখ্যা আজ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় ইরাকি সমাজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষিধের তাড়নায় ইরাকি নারীরা আজ নিজেদের দেহকে বিলিয়ে দিচ্ছে। নির্মম ক্ষুধার তাড়নায় অসংখ্য ইরাকি নারী জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সম্ভ্রমকে বিকিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত উইমেন্স ফ্রিডম ইন ইরাক (ডাবলিউএফআই) নামের এক এনজিওর মতে, যুদ্ধে স্বামী হারা নারীদের ১৫ ভাগই যৌনবৃত্তি করতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংগঠনটির মুখপাত্র নুহা সালিম জানান, পার্শ্ববতী দেশগুলোর পতিতালয়গুলোতে অসংখ্য ইরাকি নারী অভাবের তাড়নায় এখন যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। ইরাকের বিধবা নারীরা আরো বেশি সমস্যায় জর্জরিত।
মার্কিন আগ্রাসনের আগে ইরাকি বিধবারা বিশেষ করে যারা ইরান-ইরাক যুদ্ধে স্বামী হারিয়েছেন, তাদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সুবিধা দেয়া হতো। তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিনা ভাড়ায় আবাসন সুবিধা দেয়া হতো। কিন্তু সেই নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা আজ আর নেই। স্বামী হারা এসব নারী আজ অর্থসম্পদও হারিয়েছেন। আজ প্রতিদিনই স্বামী হারিয়ে অসংখ্য ইরাকি নারী বিধবা হচ্ছেন। এসব বিধবাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশও বাধ্য হয়ে দেহব্যবসায় জড়িত হচ্ছেন। এদিকে অসংখ্য ইরাকি তরুণী যৌন ব্যবসার জন্য বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছেন। বাগদাদকেন্দ্রিক উইমেন্স রাইট অ্যাসোসিয়েশনের (ডাবলিউআরএ) মুখমাত্র মায়েদা জুহাইর বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতা না পেলে আরো অনেক ইরাকি নারী যৌন ব্যবসার জন্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে ইরাকিদের বর্তমান জীবন এবং সমাজচিত্র।
যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ব্রিটেন ও পশ্চিমাবিশ্ব ইরাকে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগ এনেছিল। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ৯/১১ এ হামলার ব্যাপারে আল কায়েদার সাথে সাদ্দাম হোসেনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছিল। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বার বার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই এবং তিনি ৯/১১ এর ঘটনার সাথে জড়িত নন। জাতিসংঘ অস্ত্র পরিদর্শক দল কর্তৃক কয়েক বছর ধরে সারা ইরাকজুড়ে তল্লাশি চালিয়ে কোনো ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র না পাওয়া সত্ত্বে¡ও, এমনকি জাতিসংঘ অস্ত্র পরিদর্শক দলের প্রধান হ্যান্স বিক্স কর্তৃক ইরাকে কোনো ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই মর্মে বার বার বলা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বার বার বলেছে, ইরাকে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। অথচ ইরাক দখলের পর সারা ইরাকজুড়ে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরেও, মার্কিন ও ব্রিটিশরা যখন তথাকথিত সেই ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সামান্য কিছুও খুঁজে পেল না তখন আবার স্বয়ং মার্কিন ও ব্রিটিশরাই বলেছে যে, ইরাকে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল মর্মে তাদের গোয়েন্দা রিপোর্টটি ভুল ছিল।
২০০৪ সালের ৬ অক্টোবর প্রকাশিত রিপোর্টে ইরাক সার্ভে গ্রুপের প্রধান চার্লস ডুয়েফলার বলেন, ইরাকে কোনো ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। একইভাবে ৯/১১ নিয়ে গঠিত ১০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন কর্তৃক ২০০৪ সালের ২২ জুলাই প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় আল কায়েদা ও সাদ্দাম হোসেনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। একইভাবে আজ ইরাক যুদ্ধের ১৩ বছর পর ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন স্যার জন চিলকোট কর্র্তৃক প্রণীত ইরাক ইনকোয়ারি রিপোর্টেও বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছে এটা নিশ্চিত করে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা যাচাই করা হয়নি।
স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটি প্রশ্ন এসে যায়, আর তা হচ্ছে মার্কিন ও ব্রিটিশদের মতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও উন্নত দেশের গোয়েন্দারা এতবড় একটি মিথ্যা রিপোর্ট কীভাবে তৈরি করল এবং সেটির ভুল ইরাক যুদ্ধের আগে ধরা পড়ল না কেন? আর সবারই রিপোর্ট একইভাবে, একই ইস্যুতে একই রকম মিথ্যা হলো কীভাবে? সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এর সবই পশ্চিমারাই বলেছে। অভিযোগও তাদের, তদন্ত কমিটিও তাদের, রিপোর্টও তাদের। তারাই তাদের ভুল, অন্যায় এবং অপরাধ স্বীকার করেছে। মূলত এটি ছিল ইরাক দখলের ইস্যু সৃষ্টির জন্য মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক যৌথ ও পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা একটি রিপোর্ট। এভাবে মিথ্যা ও ছলচাতুিরর আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সভ্যতার তথাকথিত ধারক-বাহক মার্কিন ও ব্রিটিশরা হাজার হাজার বছরের সভ্যতায় সমৃদ্ধ ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছে এবং ইরাককে ধ্বংস করেছে।
প্রশ্ন জাগে ইরাককে যে ধ্বংস করা হলো, তা পুনর্গঠন করবে কে? এই আগ্রাসনের ফলে নিরাপরাধ ইরাকিদের জীবনে আজ যে দুঃখ, দুর্দশা এবং লাঞ্ছনা তার মাসুল দেবে কে? কে ফিরিয়ে দেবে ইরাকিদের হারানো জীবন। কীভাবে মুছে দেবে ইরাকিদের অবর্ণনীয় কষ্ট এবং দুঃখের দিনগুলো। এখন প্রমাণিত হলো মার্কিন এবং ব্রিটিশরা ভুল করেছে, অন্যায় করেছে। সুতরাং আজ মার্কিন ও ব্রিটিশদের উচিত, তাদের যে সমস্ত লোক ইরাকে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল মর্মে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছিল তাদেরকে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া এবং ইরাকে হামলা, দখল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য ইরাকিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ইরাকিদের পাশে দাঁড়ানো।
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পশ্চিমারা ক্ষমতার জোরে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকির অভিযোগ তুলে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছে। একইভাবে বৃহৎ শক্তিগুলো যদি ঠুনকো অজুহাতে ক্ষুদ্র এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে আক্রমণ চালায় তাহলে কী হবে? সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল বিবেকমান মানুষকে আজ ভাবতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে বিশ্বে স্বাধীন জাতি বলতে কিছু থাকবে না। আর শান্তি এবং সম্প্রীতি বলতেও কিছু থাকবে না। সুতরাং শান্তি ও মানবতাকে রক্ষার জন্য আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। তা না হলে বিশ্বে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধতা থেকে ইতিহাস আমাদের কাউকেই ক্ষমা করবে না।
য় লেখক : প্রকৌশলী ও কলামিস্ট
ড়সধৎথপঃম১২৩@ুধযড়ড়.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।