Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যস্বত্বভোগীরা বেপরোয়া

করোনা দুর্যোগে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪০ এএম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ায় অনেক এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই আতঙ্কে মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদের হিড়িক পড়েছে। আগামী এক দেড় মাসের বাজার একসঙ্গে কেনার জন্য অনেকে ছুটছেন বাজারে। আর এতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এক সঙ্গে অনেকে বাজারে নিত্যপণ্য কেনার ফলে বেড়েছে চাহিদা। এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী। কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে তারা প্রতিটি পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়েছেন।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে পাইকার বা মধ্যস্বত্বভোগীদের পোয়াবারো। গত কয়েক দিনে তারা ক্রেতাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। করোনা দুর্যোগে পণ্য মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী কৃষকরা লাভবান হতে পারেননি। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে বিক্রি করছেন ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া চালের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে ২৫/২৬ টাকা কেজি চাল কিনে সেই চাল আড়তদাররা বিক্রি করতো ৩০/৩২ টাকা কেজি। এবার করোনার অজুহাতে সেই চাল বিক্রি করছে ৪০/৪৫ টাকা কেজি। কোনো কোনো চাল আরও বেশি দামেও বিক্রি করছে।

রাজধানীর বাজারে ৫/৬ দিন আগেও প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিছুটা স্বাভাবিক দরে বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, আলুসহ বেশিরভাগ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সেদ্ধ চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। আর পেঁয়াজের দামও বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর কাওরান বাজার, সেগুন বাগিচা, রামপুরা, শাহজাহানপুর বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা যায়।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কোনো তৎপরতা নেই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও তাদের সারাবছরের কার্যক্রমের মতোই গতানুগতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অভিযান চালিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আর বন্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। গতকাল র‌্যাব বেশ কয়েকস্থানে অভিযান চালিয়েছে। তারপরও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। সরকারের প্রচার-প্রচারণা যেমন ক্রেতাদের মজুদ করা থেকে থামাতে পারছে না, তেমনি মূল্য বৃদ্ধিও ঠেকাতে পারছে না। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর অভিযোগ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বাজারে সরকারের কোন তদারকি নেই। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মতো বিভিন্ন পণ্যে দাম বাড়াচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য না কিনতে আহ্বান জানানো হয় ক্রেতাদের। সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, দেশে চাল ও গমের মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়াতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমদানি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। তাই আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই মন্ত্রীর বক্তব্য তেমন কোন প্রভাব পড়েনি বাজারে বা ক্রেতাদের ওপরে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত দু’দিন ধরে বাজারে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়লেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম দেখা যায়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রমও জোরালো নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে সব দোকানের চার্টে দাম নির্ধারণের নির্দেশ দিলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার এমনটি হচ্ছে।

চালের দাম বাড়ায় চিন্তিত : চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। কারণ ব্যবসায়ীরা কোন অজুহাতে একবার যদি জিনিসের দাম বাড়াতে পারে তবে তার দাম পরে আর কমে না। করোনাভাইরাস আতঙ্কে হঠাৎ করে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কেজিতে ৩ টাকা কোনোটা ৫ টাকা আবার কোনোটা ৭ টাকা এমনকি কোনটা ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৫৩ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। এদিকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়া আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। পাইজাম ৫ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। নাজিরশাইল যে চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো তা এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা আসলাম বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে বলে জানান এই বিক্রেতা।

কাওরান বাজারের একাধিক চালের আড়তে দেখা গেছে, মিনিকেট প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা ও মানভেদে নাজিরশাইল ২৩০০ থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। গত দুই তিন দিন খুব বিক্রি ছিলো। আজ কিছুটা কম। তবে অন্য সময়ের চেয়ে বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশি।

রিকশা চালক ছালাম বলেন, গত সপ্তাহে যে চাল কিনেছিলাম ৪০ টাকা কেজি। এখন তার দাম চাচ্ছে ৪৮ টাকা। যাদের টাকা আছে তারা বেশি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো এতো টাকা নেই যে আমরা বেশি করে কিনে রাখবো।

পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ: করোনা আতঙ্কে আবার অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। দুই তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। খুচরা বাজারে গত দুই তিন দিন আগেও ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কোথাও ৭০ টাকা বিক্রি হলেও আবার কোথাও ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শাহজাহানপুর বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, করোনা আতঙ্কে গত মঙ্গলবার থেকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলুর চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বাড়ায় আড়ৎ থেকে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আড়তে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মানুষ যদি কম পরিমাণে এসব পণ্য ক্রয় করে তাহলে আমাদের ধারণা কিছুদিনের মধ্যেই আবার দাম কমে যাবে। বাজারে দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়, যা দুই তিন দিন আগে ছিল ৭০-৮০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা, যা ক’দিন আগে ছিলো ১৪০ টাকা। ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা। আর ১৮-২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা।

কাওরান বাজারে আসা ক্রেতা আরিফ বলেন, আতঙ্কে এখন সবাই পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, চাল ডাল এসব জিনিস সবাই বেশি বেশি মজুদ করতে শুরু করেছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যাদের বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকার কথা তাদের কেউ দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তবে বাজারে কাঁচা সবজির দাম এখনো অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। সবজির দাম বাড়ার তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি বরং কিছু কিছু সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। গত সপ্তাহে ১২০-১৩০ কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ৫০-৬০ টাকা হয়েছে। মাঝারি আকারের লাউ আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা পিস। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে- ৫০-৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। এছাড়া শসা ২০-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, পাকা টমেটো ২৫-৪০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, ফুলকপি-বাঁধাকপি পিস ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা, বেগুন ৩০৪০ টাকা ও পটল ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) আগের মতোই ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী জাহেদ বলেন, কাঁচা সবজি কিনে মজুদ করে রাখা যায় না এ কারণে যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু কিনছে। এ ছাড়া গত দুই দিনে রাজধানী ছেড়ে অনেক লোক চলে গেছে। এ জন্য সবজির চাহিদাও কিছুটা কমেছে। তাই সবজির দাম বাড়েনি। পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো সবজি মজুদ করা গেলে ঠিকই দাম বাড়তো।

বাজারে মাছ ও গোশতের দাম গত দু’তিন যে ভাবে বেড়েছিল গতকাল তার চেয়ে কিছুটা কমতে দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ ১৬০-১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা এবং টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। তবে পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কিছু বাড়তি দামে ২৩০-২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। গরুর গোশত কিছুটা বাড়তি দামে ৫৭০-৫৮০ টাকা, কোথাও কোথাও ৬০০টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০-৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক থেকে চাহিদার অতিরিক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখতে ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করেছেন সুপারমার্কেটগুলোর মালিকরা। তারা বলছেন, সুপারমার্কেটগুলোতে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অতিরিক্ত পণ্য কেনার প্রয়োজন নেই। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশে সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেন।

পণ্যের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে হটলাইন চালু: পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হটলাইন চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এখন থেকে ১৬১২১ হটলাইন নম্বরে সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা এ সেবা চালু থাকবে। কোনো ভোক্তা পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করতে পারবেন। এর প্রেক্ষিতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

যশোর ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে একশ্রেণির ভোক্তা চাল, ডাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করছেন রীতিমতো পাগলের মতো। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতাসাধারণের হিড়িক দেখে গত ৩দিন মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে ইচ্ছামাফিক। বর্তমানে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এই চিত্র যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের।

েেখাঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের বাজারে আগুন লাগিয়েছে মিলার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩০টাকা থেকে একলাফে ৩৮টাকা, মিনিকেট ৪০টাকা থেকে ৪৭টাকা, সুপার মিনিকেট ৪৮/৪৯টাকা, বাসমতি ৫২টাকা থেকে ৬৭/৬৮ টাকায় উঠেছে রাতারাতি। যশোর বাজারের চাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বললেন, একলাফে কেজিতে মোটা ও চিকন চালের এতোটা মূল্যবৃদ্ধি তার ব্যবসায়িক জীবনে দেখেননি।

শুধু চাল নয়, ডাল, চিনি, তেল, মসলা ও আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। যশোর বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, বাজারে ভোগ্যপণ্যের কোন ঘাটতি নেই। তবুও করোনাভাইরাসের অজুহাতে মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। চালের মূল্য অস্বাভাবিক এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যেসব ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বাড়িয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনা ভাইরাসকে পুজি করে দক্ষিণাঞ্চলে চাল, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৬টাকা। অনেকদিন পরে যথেষ্ঠ স্বস্তি দিয়ে পেয়াজের কেজি খুচরা পর্যায়ে ৪০ টাকায় নেমে এলও গত দুদিনে তা আবার ৬০ টাকায় উঠেছে। এছাড়াও চিনি, আদা, রসুন ও ভোজ্যতেলের দামও প্রতি কিজিতে ৫টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাজারে কোন নিত্য পণ্যের সরবারহ সংকট না থাকলেও ভোক্তারা অধিকহারে তা কেনায় সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন পাইকারী থেকে খুচরা বিক্রেতারা।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গুজব ছড়িয়ে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে রাজশাহীকে লকডাউন করা হবে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দামও বাড়িয়েছে। এখন শুরু হয়েছে কৃত্রিম সঙ্কট। সরবরাহ নেই এমন অজুহাত তোলা হচ্ছে। আবার বাড়তি দাম দিলে সব পন্য মিলছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখন রাজশাহীর বাজারে দাম কমার কথা। কারন এখানে লেখাপড়া করতে আসা লাখ খানেক শিক্ষার্থী রাজশাহী ছেড়ে চলে গেছে। তাদের কেনাকাটা নেই। অথচ এবার দাম না কমে বাড়ছে। বেড়েছে চালের দাম। বর্তমানে রাজশাহী বিভাগে পৌনে চারলাখ টন খাদ্যশষ্য মজুদ আছে। মাঠে শাকস্বব্জিতে ভরা। গতকাল ডিমের দাম বেশী হওয়া নিয়ে সাহেব বাজারে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে এক তর্ক বিতর্ক দেখা যায়। তেমনি ভাবে মাছ মুরগির। বাজারে নতুন পেঁয়াজের পাশপাশি রয়েছে ভারতীয় আমদানী করা পেঁয়াজ। হঠাৎ করে ত্রিশ টাকা কেজির পেঁয়াজ উঠেছে ষাট টাকায়। আদা রসুন মশল্লার দামও বাড়ছে। এখন আলুর ভর মওসুম। সেই আলুও পনের থেকে পঁচিশে উঠেছে।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, করেনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারে জনসাধারণ যখন আতঙ্কিত ঠিক সে সময় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগীতা চলছে। গত এক সপ্তাহে বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা,চিনি, তেল, তরিতরকারী, মাছ, মাংশ থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যসামগ্রী মূল্য কেজিতে পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ৩০/৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল ৩২ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮/৩৯ টাকা, আলু ১৭টাকা থেকে ২৫টাকা, পিয়াজ ৬০টাকা থেকে ৯০টাকা। এমনিভাবে মাছ, গোশত, ডিম, শাক সবজীর মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে সমানগতিতে।

বগুড়া ব্যরো জানায়, করোনা আতংকে ক্রেতারা নিত্যপণ্য মুল্য বেশি বেশি ক্রয় করায় বিক্রেতারা বাড়িয়ে দিয়েছে পণ্য মুল্য। চাউল কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, পেঁয়াজ বেড়েছে গড়ে ২০ টাকা। আনুপাতিক হারে অন্যান্য পন্যের দামও বেড়েছে। ফলে ক্রেতারা হয়ে পড়েছে দিশেহারা।



 

Show all comments
  • এস এম সানাউল্লাহ ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩১ এএম says : 0
    বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে বিচ্ছিন্ন পৃথিবী, অবরুদ্ধ মানুষ। বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, বাড়ছে সংকট। যে মানুষগুলো কারো কাছে হাত না পেতে নিজের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে পরিবারের দৈনন্দিন খরচ যুগিয়েছেন তারা দ্রুত বেকার হয়ে পড়ছেন। কাজের অভাবে বিপুল সংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে আসছে অনিশ্চিয়তার কালোছায়া। এমন প্রেক্ষাপটে দল-মত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান
    Total Reply(0) Reply
  • Md Giash Uddin ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩১ এএম says : 0
    আমিন ইয়া আল্লাহ সকলকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়াবার তাওফিক দাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabul Khan ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
    আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিসের দাম গজব ছড়িয়ে বাড়ানো হয়, ওরা কারা প্রশাসন কি অন্দ হয়েগেল।
    Total Reply(0) Reply
  • Yeasmin Hossain ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
    99% ponner dam bariye diyeche, 95% muslim der deser manus ra.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাঃ ইউনুছ ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
    1250 টাকা চাউলের দাম1850 টাকা বিক্রি করচে বাঁশখালি চনুয়া বাজারে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hussain ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
    মানুষের দোষ তো আমি দেখি না। মানুষের মন চাইসে কিনসে। এই সুযোগে মিল মালিকেরা দাম বাড়াবে কেনো?? মিল মালিকেরা দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী। দোকানে দোকানে ম্যাজিস্ট্রেট না পাঠায়া জায়গা মতো পাঠান। মানুষের দোষ দিয়া এই ভন্ডামি আর কত দিন চলবে! আসলে কারা দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী সেটা তো স্পষ্ট
    Total Reply(0) Reply
  • tasnim ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
    আমাদের কে তো কানাডার মতো বাজার করে দিয়ে যাওয়া হবে না। এ ছাড়া আমাদের উপায় কি !
    Total Reply(0) Reply
  • আকবর আলী ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
    বাঙ্গালীর ওষুধ একটাই, মাইর
    Total Reply(0) Reply
  • Md Amin ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
    সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার পূর্বের অভিজ্ঞতার কারণে মানুষ ভয় পেয়ে মজুত করছে এই মজুত সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার প্রকাশ
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Ali Haider ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৭ এএম says : 0
    বেশি কিনলে চালের দাম বাড়বে কেন?!! বেশি বিক্রি হলে কি ব্যবসায়ীর লোকসান হয়? যতক্ষন মাল থাকবে বিক্রি করবে, মাল না থাকলে বিক্রি করবে না, তাহলে দাম বাড়াতে হবে কেন? লন্ডন- আমেরিকায় ক্রেতারা মাল কিনে স্টোর খালি করে ফেলেছে, কই তারা তো দাম বাড়াইনি
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৮ এএম says : 0
    ২০ কেজি চাল এবং ৫ কেজি ডাল, চিনি, তেল এর বেশি কিনলে সরকারের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Gazi ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৮ এএম says : 0
    People in Australia also buying more than enough for stock piling at home, but price is not increased by any cent. You retailers just want any issue to increase price in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Asadujjman Mintu ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    প্রায় সব ব্যাবসায়ীদের দেখি লম্বা পান্জাবি পড়া মাথায় টুপি। এত ধার্মিক ব্যাবসায়ী থাকতে দেশে অসাধু ব্যবসায়ী হয় কিভাবে??
    Total Reply(0) Reply
  • Titu Dey ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    করোনা সারা বিশ্বে বিপদ বয়ে আনলেও, বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের জন্য বয়ে এনেছে সুদিন।এক বিবেকহীন জাতির নাম বাঙালী।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২২ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৬ এএম says : 0
    Those business men increase the price of all commodities --- Don't you think that you will not be infected by Coronavirus-- your ill earn money will not be able to save you--- Fear Allah and repent for your sins...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ