পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গায়ে গায়ে ঘর্ষণ। একের ওপর অন্যের হেলে পড়া। পেছন থেকে প্রবল ধাক্কা। চাপ সামলাতে না পেরে সামনের আইনজীবীর ওপর হুড়মুড়িয়ে পড়া। গরমে জীবন ওষ্ঠাগত। একজনের নাক থেকে আরেক জনের পিঠে টপটপ পড়া ঘাম গড়িয়ে পড়া। কাঠগড়ায় উঠতে গিয়ে আসামি কিংবা পুলিশের কনুইয়ের গুঁতো। তিল-ঠাঁইহীন গমগমে আদালত কক্ষে হাজিরানে মজলিসের হৈ চৈ। বিচারকের ‘অর্ডার অর্ডার’ বলে শান্ত করার চেষ্টা। ঢাকা মহানগর দায়রা ও জেলা জজ আদালতের নিত্য দৃশ্য এটি। চিনাবাদাম-ঝালমুড়ি ওয়ালা, উৎকণ্ঠিত আসামি-অভিভাবকের জটলা, ডান্ডাবেড়ি পরা আসামি-পুলিশ আর তদবিরবাজদের রুদ্ধশ্বাস ছোটাছুটিতে আদালতের বারান্দা-করিডোর যেন সকালের মাছ-বাজার। ঢাকার সিএমএম কিংবা সিজেএম আদালত ভবন ? যেন এক হাবলঙ্গের বাজার ! কিসের শৃঙ্খলা, কিসের বিধি-নিষেধ আর আইন-কানুন ! কোনো কিছুরই যেন বালাই নেই ঢাকার আদালত অঙ্গনে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই বিশৃঙ্খল মাধুর্যহীন পরিবেশই দেশের বিচারিক আদালতের আজকের বাস্তবতা। এই অবস্থায় ছোবল হেনেছে করোনা-প্রকোপ। যা ঢাকার বিচারিক আদালত স ংশ্লিষ্ট বিচারক, বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী,সহায়ক জনবলসহ লাখ লাখ মানুষের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে করোনা ধরাপড়ার পর থেকেই। সরকার তথা সর্বমহল থেকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে মুহূর্মুহু। পরামর্শ শুনে কান ঝালাপালা হলেও ঢাকার আদালত পাড়ার মানুষদের যেন করার নেই কিছুই। আদালত যে এখনো খোলা ! বিচার কার্যক্রম চলছেই। মামলা আছে। তারিখ ও শুনানি আছে। অতএব, কিসের করো না ফরো না ! আক্রান্ত হওয়ার সমুহ আশংকার মধ্যেই ফাইল বগলদাবা করে এখনো ছুটছেন ঢাকার আদালত অঙ্গনের মানুূষ। ভয়াবহ করোনা ঝুঁকির মধ্যেই চলছে ঢাকার নিম্ন আদালতগুলো। ঢাকা বারের অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, জজকোর্ট একটি জনবহুল এলাকা। এখানে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে সরকারকে সবার আগে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ ছিলো।
ঢাকার একটি আদালতের যুগ্ম-জজ নাম প্রকাশ না করে বলেন, করোনার ঝুঁকি নিয়ে আমরা নিত্যদিন এজলাসে উঠছি। জানি না কবে অসুস্থ হয়ে পড়ি ! খুব আতংকে আছি।
আদালতের প্রশাসন সূত্র জানায়, ঢাকা জেলা আদালতের অধীনে ৩৫টি কোর্ট রয়েছে। এসব কোর্টে বিচারকও রয়েছেন ৩৫ জন। বিচারপ্রার্থীসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ২ লাখেরও বেশি মানুষ ঢাকার আদালতে আসেন। তবে দেশের অন্য আদালতগুলোর চিত্রও অনেকটা এমনই। আইনমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন আদালতে ১৯শ’ ৬৭ জন বিচারক রয়েছেন। তারা ৩১ লাখ মামলার বিচার কার্য পরিচালনা করছেন। বিচারক, মামলার বাদী-বিবাদী, আসামি, আইনজীবী, সহায়ক জনবলসহ আদালত অঙ্গন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অথচ জনবহুল অঞ্চল। অপরাধের বিচার হয় বিচারাঙ্গনে। এ কারণে বিচারাঙ্গনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়। অথচ জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরে করোনা-সতর্কতার জন্য এখনো তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিচারক,আইনজীবী,বিচারপ্রার্থীদের এখানে কাজ করতে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার চরম ঝুঁকিতে।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, বিচারিক আদালতগুলো সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের অধীনে। তবে করোনা প্রকোপ রোধে বিচারিক আদালতে নিরাপত্তামূরক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, এখনো আদালত বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কালকের দিনটা (আজ রোববার) দেখা যাক !
আদালত প্রশাসন সূত্র জানায়, বিভিন্ন আদালতে কর্মরত বিচারক এবং বিচারাঙ্গনের মানুষ প্রবল করোনা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। বিষয়টি ইতিমধ্যেই তারা সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে বিষয়টি অবহিতও করা হয়েছে। এটিও জানানো হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া ফেরত ৩০ জন বিচারক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণও অবকাশে কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে আদালতের জন সমাগম রোধে কার্যক্রম বন্ধে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার এবং সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ। তবে অবিলম্বে আদালতের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিচারাঙ্গনের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন।
যদিও এর আগে গত ১৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারপতিগণের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে অবকাশ শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নেবেন-মর্মে সংবাদকর্মীদের জানান প্রধান বিচারপতি সেদিন বলেন, আদালতগুলোতে লক্ষ লক্ষ বিচারপ্রার্থী রয়েছেন। তাদের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বিচারিক আদালত বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, নিম্ন আদালত যেহেতু হাইকোর্টের অধীনে, সুতরাং সব ব্যাপারেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। পরিপূর্ণভাবে যদি কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে। কারণ অনেকেই জরুরি বিষয় নিয়ে কোর্টে আসে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আদালত বন্ধের ইঙ্গিত দেন। পরদিন প্রধান বিচারপতি প্রিজনভ্যানে করে আদালতে আসামি আনা-নেয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, আগামি ২৮ মার্চ অবকাশ শেষে উচ্চ আদালত খোলার কথা রয়েছে। গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়াফেরত ৩০ বিচারক ইতিমধ্যেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।এ কারণে বিচারিক আদালত থেকেও আদালত বন্ধ ঘোষণার অনুরোধ রয়েছে সরকার এবং বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারি ছাড়াও আইন পেশাজীবীরা অবিলম্বে আদালত বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তাররোধে ব্যাপক জনসমাগম এড়ানোর লক্ষ্যে অধস্তন আদালতগুলোতে কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলমান রেখে অবশিষ্ট সব কার্যক্রম মুলতবি রাখার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আইন সমিতি। গতকাল শনিবার সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কেশব রায় চৌধুরী এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে স্বীকৃত নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ এড়াতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আপনার সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলস্বরূপ গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা (প্রশাসন শাখা) কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিমূলে দেশের অধস্তন আদালতসমূহে আসামিদের জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে কারাবন্দি-আসামিদের আদালতে হাজির না করা এবং এরূপ ক্ষেত্রে প্রেেয়াজনে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করার নির্দেশ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ আইন সমিতির পক্ষ থেকে আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে আড়াই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ১১ হাজারের বেশি লোকের প্রাণহানী হয়েছে। প্রতিদিনই এই আক্রান্ত ও প্রাণহানীরসংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যেই ২ জন মারা গেছেন। এমনই এক আতঙ্কজনক অবস্থায় গত ২০ মার্চ জাতিসংঘ ঘোষিত এক সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এর আগে গত ১৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এক কঠিন সর্তকবার্তায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে সামাজিকভাবে মানুষ থেকে দূরে থাকা তথা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া নানা বিশেষজ্ঞ মহল থেকে সামনের দুই বা তিন সপ্তাহকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমরা বাংলাদেশ আইন সমিতির পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে কমপক্ষে পরবর্তী দুই সপ্তাহের জন্য কেবল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহে জামিন ও রিমান্ড শুনানির মতো অপরিহার্য বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে অধস্তন আদালতসমূহের কার্যক্রম চলমান রেখে অবশিষ্ট সকল কার্যক্রম মুলতবি রাখার নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ ও উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।