Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে দ্বিতীয় মৃত্যু আক্রান্ত আরও ৪

চিকিৎসকদের জন্য কয়েক লাখ পিপিই, মাস্ক এসেছে, সঙ্কট হবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:১৬ এএম

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত আরও একজন মারা গেছেন; আক্রান্ত হয়েছেন আরও চারজন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বিদেশ ফেরত স্বজনের মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এনিয়ে নভেল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুজনে দাঁড়াল। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪।

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ের মাধ্যমে তার দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। সেটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যু। এরপর কয়েক দফায় শুক্রবার নাগাদ দেশে মোট ২০ জন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে। তারা কেউ বিদেশ ফেরত, কেউ তাদের স্বজন।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন ১ জনের মৃত্যুর খবর জানান। এক্ষেত্রেও বিদেশ ফেরতের মাধ্যমেই সংক্রমণ ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওই লোকের বয়স সত্তরের বেশি। বিদেশে থাকে এমন স্বজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ঢাকার একটি এলাকায় ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকি ১৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে শনাক্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বিদেশ ফেরত সবাইকে হোমে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, এখন পর্যন্ত ৫০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। আর বিদেশফেরতদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ২৬৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। জাহিদ মালেক বলেন, ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনের জন্য উত্তরার দিয়াবাড়ি ও ও টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইন করা হবে। এখন সব ধরণের খেলাও বন্ধ আছে। প্রয়োজনে স্টেডিয়ামগুলোকেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। করোনা আক্রান্তদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে আইসিইউ ইউনিট। আরে ৪’শ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, মার্চের ১ তারিখের পর বিদেশফেরতদের তালিকা তথ্য বিমানবন্দর থেকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। যারা পালিয়ে আছেন তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে তালিকা সারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, আমাদের কাছে তথ্য দেন নাই, আত্মগোপন করেছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে নেওয়ার জন্য।

গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হবার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে চীনের উহান থেকে আনা হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স। তারা দেশের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি আমাদের কী কী ঘাটতি আছে সেগুলো চিহ্নিত করবেন।

করোনা সনাক্তে যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসকদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েক লাখ পিপিই ও মাস্ক এসেছে। আরো আসবে। কোন সংকট হবে না। করোনা সনাক্তে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরে পরীক্ষা করা হলেও সেখানে আটটি মেশিনে পরীক্ষা চলছে। নতুন আরো সাতটি মেশিন আনা হয়েছে। এগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হবে। তবে সবকিছু রাতারাতি করা সম্ভব হবে না।
দেড় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ রোগকে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই লাখ।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে জনসমাগমের মতো সব অনুষ্ঠান আয়োজনে মানা করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, প্রেক্ষগৃহ।
করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে যোগাযোগের জন্য হটলাইন (৩৩৩, ১৬২৬৩) চালু করেছে আইইডিসিআর। তাতে ফোন করলে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন আইইডিসিআরের কর্মীরা। যদিও এই হটলাইন নম্বরে কল করে অধিকাংশ সময়ই না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

হটলাইন ছাড়াও কেউ চাইলে [email protected] ঠিকানায় ই-মেইল করে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবেন। এছাড়া ফেইসবুক গ্রুপ Iedcr,COVID-19 Control Room এর ইনবক্সে সমস্যার কথা বলতে পারবেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভীত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত জীবণুনাশক বা সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া। কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন এমন ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখা, যেখানে সেখানে থুথু নিক্ষেপ না করা। একই সঙ্গে রান্না করার আগে ভালো করে খাবার ধুয়ে নেওয়া। যে কোনো খাবার ভালো ভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা, অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে না আসা, কাপড় একবার ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলা, বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখা। এছাড়া বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরে ব্যবহার না করা, খালি পায়ে না হাঁটা, পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকা, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া, অন্যের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুসরণ করা। পাশাপাশি অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা, জনাকীর্ণ স্থানে সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করা, শিশু, বৃদ্ধ ও ক্রণিক রোগীদের অধিকতর সতর্ক থাকা এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে এই সময়ে বিদেশ ভ্রমণ না করাই ভালো বলে উল্লেখ করা হয়েছে।#



 

Show all comments
  • Titu Chowdhury ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
    টোলারবাগের যে ব্যাক্তি মারা গিয়েছেন। তার নাম গনি ইসলাম। তিনি একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানি। আর তার ২ ছেলের কেউ বিদেশ ফেরত নন। তারা অত্যান্ত পর্দা শীল পরিবার তাদের বাসায় কেউ আসেও না। মৃত গনি সাহেব মসজিদ আর বাসা ছাড়া কোথাও যায় না। বলে তার বাসার ভাড়াটিয়ারা জানান। IEDCR প্রথমে টেষ্ট করতে অস্বীকৃতি জানান কারন তার কোন বিদেশ বা বিদেশ ফেরত কন্ট্রাক নেই। তাদের কিট সংকট।পরে তার ছেলেরা বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ দিয়ে টেস্ট করান। এখন স্বাথর্্য মন্ত্রনালয় অস্বীকার করছে যে তারা জানেননা। ভুল তথ্য কে গুজব বলে এই গুজব তারাই ছড়াচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মুজাহিদি ইসলাম ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
    কোথায় এসেছে সাস্থ মন্ত্রির বাসায় নাকি??
    Total Reply(0) Reply
  • Sajjad Hussain ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি আমাদের রহম করো, ক্ষমা করো। করোনার বিপদ থেকে জান-মালকে হেফাজত করো। তুমি আমাদের ঈমান আমল শক্তিশালী করো। আমরা সবাই সচেতন থাকি, সাবধানে থাকি। প্রশাসন এবং ডাক্তারের নির্দেশ, পরামর্শ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Munir ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    এর চেয়েও বড় খবর হলো বাংলাদেশে কিছুক্ষণ আগেই দুর্ঘটনায় এই মাত্র 13 জন লোক নিহত হয়েছেন! তাহলে কি বড়?়ভাইরাস না রোড এক্সিডেন্ট ? ( এটা হল একটি পাবলিক বাসের যাত্রীদের সংলাপ )দুর্ঘটনার স্থান লোহাগড়া উপজেলা তারিখ 21 মার্চ 2020 সময় রাত 10/ 11 টা হবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Adib Hasan Rafi ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ্ এই কঠিন সময়ে শুধুমাত্র আপনার সাহায্য কামনা করি,আপনার সাহায্য ছাড়া বড্ড অসহায় আমরা, আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহিম আল হাসান ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
    যারা বলে এটা আল্লাহর গজব না তাদের কে বলে রাখি সৌদি আরবে গত দুই এক বছরে শেখ সালমান যত গুলা নিয়ম কানুন করেছে তা একবার মনে করুন। সিনেমা হল থেকে শুরু করে হোটেল কনসার্ট আর ও বির্তকিত অনেক কিছু।
    Total Reply(0) Reply
  • Sathi Khondoker ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
    মৃত্যু যদি করোনাতেই লিখা থাকে, তাবে সপ্তম আকাশে পালালেও তা-ই হবে! সুতরাং আতংকিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন! মুক্তিদাতা তিনিই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ