Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎপাদন বাড়িয়ে দিন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের

করোনা ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহবান

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বব্যাপি মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশেও ভাইরাসটি দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভাইরাস থেকে সুরক্ষার উপাদান হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ ফার্মেসীতে মিলছেনা হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিছু কিছু ফার্মেসীতে মিললেও সরবরাহ নেই ওজুহাতে রাখা হচ্ছে অধিক দাম। এমনকি ক্রেতারা, ফার্মেসীগুলোকে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। যখনই হ্যান্ড স্যানিটাইজার আসবে তাকে জানানোর জন্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসী ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কটের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এর নিরসনে দ্রুত ডিস্টিলারী, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপি করোনার প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসা বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরেরও উচিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের সব ধরণের সহযোগীতা করা। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বিখ্যাত ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন যদি মদ উৎপাদন বাদ দিয়ে জনকল্যাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করতে পারে তাহলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা কেন এগিয়ে আসবেন না। তাদেরও উচিত দেশের এই ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে দাড়ানো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে এবং জীবানুমুক্ত করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অতিব জরুরী একটি পণ্য। বর্তামানে দেশে করোনার প্রার্দুভাব বাড়ছে তাই এর চাহিদাও বাড়ছে। তাই দেশে যাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্কট না হয় সে জন্য ব্যবসায়ীদের এর উৎপাদন বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এর বিকল্প হিসেবে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

গবেষক শামিম রুমি টিটন ইনকিলাবকে বলেন, দেশব্যাপি অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের এই দুর্যোগের সময় যা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। তিনি ডিস্টিলারী, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে দেশের স্বার্থে মানুষের পাশে দাড়াতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সূত্র মতে, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর প্রকাশের পর মেডিকেল সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু বিক্রেতারা। তারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে এসব পণ্য কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। রাজধানীর বাড্ডা, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি, শাহবাগা, ধানমন্ডি, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসী ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কটের চিত্র পাওয়া গেছে। টিকাটুলীর একটি ফার্মেসীতে একজন ক্রেতা হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পেয়ে পরবর্তীতে আসলে তাকে খবর দেওয়ার কথাও বলছেন ফার্মেসী মালিককে।

অথচ করোনা-সঙ্কট সামাল দিতে স্যানিটাইজার উৎপাদনে নেমেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন মহাতারকা লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ঘাটতি মেটাতে স্যানিটাইজার উৎপাদন করা শুরু করেছেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দুটি হাসপাতালে এই স্যানিটাইজারের যোগান দেওয়া হচ্ছে। যা বিণামূল্যে দিচ্ছেন শেন ওয়ার্ন। ওয়ার্ন বলেছেন, ‘দেশ এখন এক ঘোরতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা-পরিষেবাকে আরও মজবুত করতে এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিত। আমি খুশি যে আমাদের কোম্পানি স্যানিটাইজার তৈরি করে সাহায্যের হাত বাড়াতে পেরেছে। বাকি সংস্থাগুলোরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে এতোদিন ৭টি প্রতিষ্ঠান হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করতো। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মেসার্স এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মেসার্স এডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ (এসিআই) লি., মেসার্স ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মেসার্স জেনালে ফার্মাসিউটিক্যালস লি., গ্রীনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মেসার্স স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মেসার্স অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস লি.। গত ৯ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসব প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি নতুন করে জিসকা ফার্মাসিউটিক্যাল, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল, ওয়ান ফার্মাসহ ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের একমাত্র ডিস্টিলারি কেরু এন্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে অন্যান্য বেসরকারি ডিস্টিলারি কোম্পানিগুলোকেও বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে আসার কথা বলেছেন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দেশে করোনার প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাহকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে বিশেষ করে এমআরপি বা গায়ে লেখা মূল্যে ক্রয় করতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যে সাতটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করতো তাদেরকে আরো বেশি উৎপাদন এবং দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনার কারনে যাতে গুজবে বা আতঙ্কে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কট তৈরি না হয় এবং এই সময়ে বাড়তি উৎপাদনে নতুন করে ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন উৎপাদনের অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫/৬ টি প্রতিষ্ঠানের পণ্য দু’একদিনে বাজারে চলে আসবে। বাকীগুলোর উৎপাদিত পণ্যও দ্রুত বাজারে পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত দাম এবং না পাওয়া প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে হ্যান্ডসেট বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি জেনেছেন-দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ হ্যান্ডসেটের কাঁচামাল মজুত আছে। বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কট নেই। তবে যে সব এলাকায় না পাওয়ার খবর পাচ্ছি সেখানে সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের একসঙ্গে কোনো ব্যক্তির কাছে একটির বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করতে নিষেধ করেন। পাশাপাশি সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘কেরু’জ হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ নামে সুলভ মূল্যের এই স্যানিটাইজার বাজারজাত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ আলী আনছারী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, ১০০ মিলি লিটারের একটি বোতলের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য হবে ৬০ টাকা। যা বাজারের যেকোনো স্যানিটাইজারের চেয়ে অনেক কম।

তিনি জানান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের অনুমতি পেলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারজাতকরণ শুরু হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কেরু এন্ড কোং এর অনুমোদিত তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র ও ১৩টি ডিপোর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সবকটি ফার্মেসিতে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। দেশে কেরু এন্ড কোং এর ইথানল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আশরাফুল আলম জানান, সাধারণত ইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করে স্যানিটাইজার তৈরি করা হয় তবে ইথানলও সমানভাবে কার্যকর।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা বলেন, কেরু এন্ড কোং উৎপাদিত স্যানিটাইজারের গুণগতমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) এর একটি ছাড়পত্র প্রয়োজন আর সেটি পেলেই এই স্যানিটাইজার বাজারজাত শুরু হবে। কেরু এন্ড কোং এর এ উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি দেশের সর্বত্র বাজারজাত করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি দেশের বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্যানিটাইজার উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।#



 

Show all comments
  • Hasan Zaman ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
    If you have formulation of good hand sanitizer, and raw materials are accessible to general public let everyone know. Use social media, TV and newspaper. Or ask University or college student organization to contact BUET to get formulation.
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
    ইহা কি অ্যালকোহল মুক্ত? হালাল স্যানিটাইজার চাই। মরব তবুও ভালো, মদ ধরতে চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • James ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    It is very easy: collect 500ml alchohol/spirit, 50ml hydrogen peroxide (at pharmacy mouth wash/used to make your hair brown), 50ml Glycarin (used for makeup remover- to have stickyness) and water to make 1 liter sanitizer. You can add any other antiseptic substance as long they are not toxic to human
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    Differences between sanitizers and other disinfectants (savlon/dettol...) are that, saniitizers have chemicals which are less mild, so that if you put your hands on to mouth, their will be less toxic. So, if you are carefull enought, dettol, savlon are more effective
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shamim ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    we hope going too the farst halpe pepoul our contry thanks a lord all the bataleon god baless us amien
    Total Reply(0) Reply
  • Faisal Mahbub ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    সমগ্র বাংলাদেশ লকডাউন করে দেওয়া উচিত যাতে করোনা কোনভাবে ছড়াতে না পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Learning Earning ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    আমাদের তেজগাঁও কলেজের আমার বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট ও তৈরি করেছে এগুলা। আরো অনেক ইউনিভার্সিটি তৈরি করেছে। সবাইকেই প্রচার করিয়েন একটু।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ