Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

সমুদ্র বন্দরে সতর্কতা বৃদ্ধি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিতে আছে বাণিজ্যিক ও বন্দরনগরী এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগ এখন থেকে সমন্বিত উপায়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়েছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত্রদের সঠিক পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশনস ডিজিজ (বিটিআইডি) হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা হবে। এরজন্য প্রয়োজনীয় শণাক্তকরণ কিট পৌঁছাবে আজ রোববার। গতকাল সন্ধ্যায় আংশিক আসে ঢাকা থেকে। পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল আজ পুরোপুরি প্রস্তত থাকার কথা।

অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রচুর সংখ্যক লোক থাকেন বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ইতালী ছাড়াও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশে^র অনেক দেশে তারা থাকেন। এই বিদেশফেরত ব্যক্তিদের নিয়েই যত মাথাব্যথা। কেননা ইতোমধ্যে বিদেশে করোনা পরিস্থিতির মুখে অনেকেই চট্টগ্রামে এসে গেছেন। যাদের অনেকেই উধাও। হন্যে হয়েও হদিস পাচ্ছে না মাঠ প্রশাসন। আবার অনেকেই বেপরোয়া। হোম বা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার গরজ বোধ করছেন না। এমনকি গ্রামে ও নগরীর এখানে সেখানে আগেই এসে ছড়িয়ে পড়া প্রবাসীরা যার যার মর্জিমাফিক ঘুরছেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে মিশছেন।

এদের নিয়েই এখন চরম বিপত্তি। যা রীতিমতো শঙ্কা তৈরি করছে। হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও তা ফাঁকি দিয়ে উধাও হয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাই, বোয়ালখালী, বাঁশখালী উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান পর্যন্ত করা হচ্ছে। গত শুক্রবার এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। মীরসরাই উপজেলার বারৈয়ার হাটে এক বৌভাত অনুষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে সদ্য ওমান ফেরত বর-কনেকে ধরে নেয়া হয় কোয়ারেন্টাইনে। অর্থদন্ড করা হয়।

নগরীর চকবাজার এলাকার গতকাল দুপুরের এক ঘটনায় সৃষ্টি হয় ভীতি ও চাঞ্চল্য। একটি বহুতল ভবনের ৮ম তলায় সদ্য ইতালী ফেরত এক প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকি দিয়ে থাকছে। অবাধে ঘুরছে। তা জানাজানি হলে ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি-শঙ্কা তৈরি হয়। জানানো হয় প্রশাসনকে। তবে পুলিশ আসার আগেই ইতালি ফেরত ব্যক্তিটি অন্যত্র কেটে পড়েন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, কাট্টলী, সীতাকুন্ড, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, রাউজান, পটিয়া, ফটিকছড়ি, চান্দগাঁও, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, আনোয়ারা, কোতোয়ালী, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ, অক্সিজেন, বায়েজিদ, আকবর শাহ, ডবলমুরিং, খুলশী, বাকলিয়া ইত্যাদি এলাকায়। কেননা ওইসব দেশ থেকে আগত অনেক প্রবাসেী সম্প্রতি যত্রতত্র উঠে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসেন তারা। নিজেরা উধাও হয়ে গিয়ে ঝুঁকির শঙ্কা তৈরি করেছেন তারা প্রথম দিকেই বাড়ি কিংবা প্রশাসনের কোয়ারেন্টাইনের আওতার বাইরে থেকে যাবার কারণে। এদের নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই তটস্থ।
তবে ওদের নিকটাত্মীয়রাও ফাঁকি দিয়ে চলেছেন। বিদেশ ফেররতরা বাজার-ঘাটে ঘুরছেন। কেননা কারও হাতে পড়েনি কোয়ারেন্টাইন সিল। যা এখন বিমান বন্দরে আসামাত্র দেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থা গত শুক্রবার তেকে চট্টগ্রামে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ফাঁকি বা লংঘন এবং বিচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছুটা জনসচেতনতাও তৈরি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আরো ৮৫৭ জন প্রবাসী দেশে ফিরেন। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ ওদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গতকাল বিদেশ ফেরতদের মধ্যে ২৩৭ জন আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। প্রবাসীদের নাম-ঠিকানা, ফোন নাম্বারসহ বৃত্তান্ত উপজেলা বা থানা প্রশাসকে দেয়া হয়েছে। চলছে স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিং। তবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায় কাউকে এখনও পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সবরকম কোয়ারেন্টাইনে সতর্কতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য বিভাগ তা সমন্বয় করছে। বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যার একটি স্বতন্ত্র ইউনিট, বন্দরের জেটিতে সী-অ্যাম্বুলেন্স এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। বিদেশ থেকে আগত যে কোনো জাহাজ বন্দরে ঢোকার আগে সমুদ্রে অপেক্ষা করছে। দিতে হচ্ছে কারোনামুক্ত থাকার বিষয়ে নাবিকদের স্বাস্থ্যগত বিববরণ। কোয়ারেন্টাইনে সমুদ্রের দিকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চীনের কোনো সমুদ্র বন্দর হয়ে আসা জাহাজকে। জেটিতে ভিড়ার আগে নাবিকেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষেই চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বিদেশি ও দেশি নাবিকদের।

সমুদ্র বন্দর হয়ে আসা বিদেশী জাহাজের নাবিকদের মাধ্যমে কারোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির শঙ্কা ও গুরুত্ব বিবেচনায় রেখেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার সংসদ সদস্য সাবেক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এম এ লতিফ এ প্রসঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা যথাযথ তদারক ও সমন্বয় করা হচ্ছে। যাতে কোন নাবিকের মাধ্যমে সংক্রমণ বিপত্তি না ঘটে। তিনি নিজেও তা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাছাড়া বন্দর-পতেঙ্গায় প্রবাসীদের বিদেশ ফেরা সম্পর্কেও সতর্ক দৃষ্টি এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এলাকাবাসী আগের চেয়ে সচেতন।

অন্যদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গতকাল রাত ১২টার পর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্র্জাতিক বিমানবন্দরে নামছে না কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। কার্যত বহির্বিশে^র সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এ বিমানবন্দর। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, শনিবার রাত ১২টার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য, তুর্কি, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ নির্ধারিত কিছু দেশের কোন ফ্লাইট দেশের কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে না।
তাছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাগুলোর অবস্থা এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থানরত বিদেশিদের গতিবিধি মনিটরিং করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। #



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২২ মার্চ, ২০২০, ২:১২ এএম says : 0
    সেচ্ছায় নিজ ঘরে থাকা করোনা ভাইরাস থাকলে ঐ পরিবারের সবাই আক্রান্ত হবেন। আক্রান্ত ব‍্যাক্তির অজ্ঞাতে হতে পারে অথবা অবহেলায়। ঐ পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে সমাজে করোনার বিস্তার ঘটবে। জরুরী আইন শৃংখলা বাহিনী। বাংলাদেশের গৌরবময় সেনাবাহিনী বিদেশী ব‍্যাক্তি ও পরিবারের ব‍্যাপারে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে ঐ সকল এলাকার ব‍্যাক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী স্থানিয় জনসাধারণের সহযোগিতা এলাকায় জন প্রতিনিধি এবং ঐ পরিবারের সহযোগিতাই শৃংখলা আসবে। আল্লাহর গজব আজাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নাই। বাচার জন‍্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে সবাই কে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন। কঠিন কঠোর বেইজ্জতের মৃত্যু হতে আমাদের রক্ষা করুন। আল্লাহ্ তোমার ইবাদত করার তৌফিক দিন। আমাদের নামাজি করুন। বাংলাদেশ দেশের সব মায়ের সন্তান কে হেফাজত করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ