Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি সরকারি ব্যাংকে

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কর্পোরেট রিপোর্ট : খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি সরকারি ব্যাংকের। দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত সরকারি ৮ ব্যাংকের। ব্যাংকার, বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, যাচাই-বাছাই ছাড়া ঢালাওভাবে ঋণ বিতরণ, রাজনৈতিক বিবেচনায় অর্থ ছাড়সহ নানা অনিয়মের কারণে সরকারি ৮ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ অনুমোদন অর্থছাড়ের কারণে খেলাপির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এর জন্য পরিচালনা পর্ষদ, চেয়ারম্যান, এমডি দায়ী। তার আগে দায়ী সরকারের এ বিষয়ে তদারকি না করা। প্রায় অভিন্ন কথা বললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যতদিন সরকারি ব্যাংকে সুশাসন না আসবে তত খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি ৮ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক বিতরণ করেছে ২১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এসব ঋণের বিরাট অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক পর্যন্ত ৮ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা এবং দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৮ হাজার ২৭২ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৪ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, বিডিবিএলের ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৭৩৯ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৭০ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৮৯৯ কোটি টাকা। এদিকে খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পেরে ঋণ পুনর্গঠনের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে সরকারি মালিকানার সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। ঢালাওভাবে পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের কারণে খেলাপির ভয়াবহতা কম দেখালেও দীর্ঘমেয়াদি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এই ব্যাংকগুলোয়। এ অবস্থার মধ্যেও রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক ও বিডিবিএলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রথাগতভাবে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে তৎপর থাকে বেশি, কিন্তু সহ¯্রাধিক নামসর্বস্ব কোম্পানিতে ঋণ দেয়ার কারণে এই ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারছে না। এ কারণে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ের চেয়ে ঋণ অবলোপন ও পুনঃতফসিল বা নবায়নের দিকে নজর দিয়েছে বেশি। ২০১৫ সালে ৫ হাজার ২৬১ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক পুনর্গঠন করেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করলেও ২০১৫ সালে আদায় করেছে ২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ার কারণে এই ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৪ সালের তুলনায় এই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে গেছে। বিশেষ বিবেচনায় বড় অংকের ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল করার কারণে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি সরকারি ব্যাংকে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ