Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় আক্রান্ত বেড়ে ২০

আইসোলেশনে ৩০ জন আশঙ্কাজনক ১

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে আরো তিনজন নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে মোট ২০ জন। নতুন আক্রান্তদের একজন নারী, দু’জন পুরুষ। এরা প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধানী রয়েছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, নতুন করে তিন জনের সংক্রমনের ঘটনা ঘটলেও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত দেশে একজনেরই মৃত্যু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন নারী, তার বয়স ৩৮ বছর। দু’জন পুরুষের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ এর ঘরে, অন্যজনের ৭০ এর বেশি। সত্তরোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি ‘ক্রিটিক্যাল কনডিশনে’ আছেন। তার ‘কোমরবিডিটি’ (অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা) আছে এবং তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষ রোগী ইতালি ও জার্মানি ঘুরে এসেছেন। আর বাকি দুজন সংক্রমিত হয়েছেন অন্যদের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ওই নারী ইতালি ফেরত একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আক্রান্ত ২০ জনের মধ্যে ৩ জন ইতোমধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩০ জনকে। এছাড়া পরীক্ষার জন্য গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ জনের। এই সময়ে ৪৪ জন বিদেশফেরত ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সমন্বিত কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা গেছে, সারাদেশে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২৬৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। এরমেধ্য গত ২৪ ঘন্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ৫ হাজার ১৪৯ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ হাজার ৮৮৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩ হাজার ৮৯৪ জন, রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৪৮৯ জন, রংপুরে ৬২৭ জন, খুলনায় দুই হাজার ৮৪ জন, ৬১৩ জন এবং সিলেটে এক হাজার ২১৫ জন।

এছাড়া গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪২ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন। যাদের বেশিরভাগই করোনা মহামারী হিসেবে চিহ্নিত দেশে থেকে এসেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় এসছেন ৬ হাজার ৯৬৮ জন। এদেরকে বিভিন্ন বন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তবে যেহেতু ভাইরাস বাহকের শরীরে লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় প্রায় এক থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগে, তাই স্ক্রিনিংয়ে রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হয়না।
ব্রিফিং চলাকালিন সময়ে আইসিডিডিআর,বিতে করোনাভাইরাসে একজনের চিহ্নিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, ওই ব্যক্তি এখানে অন্তর্ভুক্ত নন। তার পুণ:পরীক্ষা প্রয়োজন। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের’ (সামাজিকভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়া) কোনো ঘটনা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বিদেশ ফেরতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আক্রান্ত পাচ্ছি আমরা। পরিবারের বাইরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন পরামর্শের জন্য হটলাইন চালু করেছে আইইডিসিআর। হটলাইন নম্বর: ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ৩৩৩ এবং স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩। এছাড়া iedcrcovid19gmail.com ঠিকানায় ই মেইল করে বা ফেইসবুক গ্রুপ Iedcr,COVID-19 Control Room এর সমস্যার কথা জানাতে পারবেন যেকেউ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্তের তথ্য জানায় আইইডিসিআর। ওই তিনজনের মধ্যে দুজন ছিলেন ইতালি ফেরত। একজন ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য। এরপর গত ১৪ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও দুজন আক্রান্তের খবর জানান। ওই দুজনের একজন ইতালি ও অপরজন জার্মানি থেকে এসেছিলেন। গত সোমবার তাদেরই একজনের মাধ্যমে পরিবারের এক নারী ও দুই শিশুর আক্রান্ত খবর জানায় আইডিসিআর। মঙ্গলবার আরও দুইজনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। বুধবার নতুন করে একজন নারী ও তিনজন পুরুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানান আইইডিসিআর। তাদের একজন আগে আক্রান্ত একজনের পরিবারের সদস্য। বাকি তিনজন বিদেশফেরত, দুজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ইতালি ফেরত এক ব্যক্তির পরিবারের তিন সদস্যের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। তাদের মধ্যে একজন নারী, দুইজন পুরুষ। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম দফার তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। সংগঠনের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর ও সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী হিসেবে ঘোষণার পর দেশে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমন মোকাবেলায় বিভিন্ন রাষ্ট্র বিভিন্ন জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তার ঘটে চললে সে সময় তাকে প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন আক্রান্ত দেশের সাথে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ না করবার ফলে দেশ যে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া বিদেশে থেকে আসা ব্যক্তিদের সরকারীভাবে কোয়ারেন্টাইনে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন ও থাকবার উপযুক্ত ব্যবস্থা না করায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংক্রামিত হবার ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলেছে।



 

Show all comments
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ ইটালি ফেরত প্রবাসীদের কেন হজ ক্যাম্প থেকে যেতে দেওয়া হয়েছিলো?
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুল হাসান ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন, দয়া করে "মহামারী রুখতে জরুরী অবস্থা গ্রহণ করুন"
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Nahid Hasan Khan ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশে করোণা সংক্রমন ঠেকাতে হলে পুরো দেশ একসাথে ২৫–৩০ দিনের লকডাউন করতে হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr. Md. Manirul Islam ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    আমাদের দেশে এসব সচেতনতা সৃষ্টি করে কোন লাভ হবে না, কারন বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত। মাঠে সেনাবাহিনী, পুলিশ মোতায়েন না করা পর্যন্ত মানুষের কোন হুশ হবে না, কারন মানুষ এদেরকেই ভয় করে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    আল্লাপাক বোঝাতে চায় যে বেইমান, দেখ তোরা আমার সৃষ্টি একটি ক্ষুদ্র প্রাণীর (ভাইরাসের) কাছেও কতটা দুর্বল।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Mohi Uddin ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ :হোম কোয়ারেন্টিন নয়, ঢাকায় পরিত্যক্ত বিজিএমইএর ভবন এবং ভাসানচরে সেনাবাহিনীর অধীনে জরুরী ভিত্তিতে কোয়ারেন্টিন এর ব্যবস্থা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    একমাত্র আল্লাহ্ ই ক্ষমা ও রক্ষা করা মালিক, এটা রোগ না এটা হলো গজব, হেজাব খোলার কারণে। আল্লাহ্ সবাইকে বুঝবার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Anamul Haque ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার কোনো ডাক্তার কিংবা দুনিয়ার কোনো এম,পি মন্ত্রীর ক্ষমতা নেই যে কিনা এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। একমাত্র আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া আর দোয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই পারে এ বিপদ থেকে রক্ষা করতে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Jobida Joli ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    ক্ষমা চাও মহান মালিকের কাছে । নিশ্চয়ই তিনি সুস্থতা দানকারী । গর্হিত কাজ পরিহার করো । নিশ্চয়ই তিনি পাপাচারকারীকে পছন্দ করেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mirza Mahfuj ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    প্রথমে ফরিয়াদ করছি মহান আল্লাহ পাকের দরবারে বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করিও, এবং চীনকে একটা নিদর্শন দেখিয়ে শেফা দিয়ে দাও, যেন তারা জুলুম থেকে ফিরে এসে তওবা পাঠের সুযোগ পায়
    Total Reply(0) Reply
  • MD Jahangir Alam ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    অাছে অাল্লাহর দরবারে বেশি বেশি করে তাওবা করা অার খমা চাওয়া,দুই হাত তুলে দোয়া করা,অাল্লাহ সমস্ত মহামারি থেকে অামাদে হেফাযত করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ