Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যমূল্য

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি মনিটরিং নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকায় দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর এতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সাটডাউন/লকডাউনের কথা শুনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারের তালিকা নিয়ে দোকানে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। করোনা আতংকে অনেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করতে শুরু করেছেন। ফলে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। সব সময়ের বেচাকেনার চেয়ে গত ৫/৬দিন ধরে বাজারে বেচাকেনা বেড়ে গেছে দুই থেকে তিন গুণ। এর ফলে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। অনেকে স্বাভাবিক বাজার করতে এসে বিপাকে পড়ছেন।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কোনো তৎপরতা নেই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও তাদের সারাবছরের কার্যক্রমের মতোই গতানুগতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অভিযান চালিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আর বন্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। এ পরিস্থিতিতে সরকারি কিছু প্রচার-প্রচারণা যেমন থামাতে পারছে না ক্রেতাদের, তেমনি মূল্য বৃদ্ধিও ঠেকাতে পারছে না।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের মজুত রয়েছে। চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য না কিনতে আহ্বান জানানো হয় ক্রেতাদের। সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, দেশে চাল ও গমের মজুত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়াতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমদানি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। তাই আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই মন্ত্রীর বক্তব্য তেমন কোন প্রভাব পড়েনি বাজারে বা ক্রেতাদের ওপরে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত দু’দিন ধরে বাজারে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়লেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম দেখা যায়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রমও জোরালো নয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। এ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা এরই মধ্যে গুলশান-১ ও গুলশান-২ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। শিশু খাদ্যের দাম বেশি রাখায় গুলশান-১ এলাকায় এস এ ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেশি রাখায় দু’টি ফার্মেসিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। ম‚ল্য তালিকা না থাকায় বেশি কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এবং কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব বিছিন্ন কিছু অভিযানে বাজারে যে প্রভাব রাখছে না, তার প্রমাণ মিললো গতকাল বাজারে গিয়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে কমবেশি প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৫ টাকা। আলুর দামও বেড়েছে একই পরিমাণে। সপ্তাহখানেক আগে কমতে থাকা পেঁয়াজ-রসুন-আদার দামও ফের বাড়তির দিকে। নতুন করে বেড়েছে মাছ-মাংস ও ডিমের দাম। অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও সহজে নষ্ট হয় না এমন প্রায় সব পণ্যের দামই বাজারে বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় যেটি সেই জীবানুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপও লক্ষ করা যাচ্ছে না। ওষুধের দোকানে কোথাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই গত এক সপ্তাহ ধরে। এ বিষয়ে কোথাও কোন জবাবদিহিতাও নেই। কোথাও যদি কোন দোকানে দু’একটা পাওয়া যায় তার দাম আকাশ ছোঁয়া। যে হ্যাক্সিসল ১২০টাকা ছিল সেটা এখন ২৫০শ’ থেকে ৩০০শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

রাজধানীর ফার্মগেট কলমিলতা মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ৫০/৫৫টাকার মিনিকেট চাল ৬৫ টাকা, ৪০টাকার আটাশ চাল ৪৫ টাকা, ৫০/৫২ টাকার নাজির শাইল চাল ৬৫ টাকা ও স্বর্ণা চাল ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারের এক বিক্রেতা ছালাম বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের একাধিক চালের আড়তে দেখা গেছে, মিনিকেট প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা ও মানভেদে নাজিরশাইল ২৩০০ থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ এখন ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, ভারতীয় ৪৮ টাকা ও হলেন ৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে কারওয়ান বাজারেই কোনো কোনো দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে পেঁয়াজ কিনতেও ক্রেতাদের হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পাইকারি বাজারে দেশি রসুনের দাম ৬০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল। গত তিন চার দিনে তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। আর গতকাল এর দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকায় উন্নীত হয়। চীনা রসুন পাইকারি বাজারে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। একইভাবে আদা বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে ১৮০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে। আদার দামও প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা।

বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা জানান, এখন প্রতি হালি ডিম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গতকাল যা বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকায়। বাজারে বেড়েছে সব ধরনের গোশতের দাম। কারওয়ান বাজারে গরুর গোশত ৫৭০ ও খাশির গোশত ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা, সাদা কক ২২০ টাকা, পাকিস্তানি ২৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন, কেজিতে মুরগির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ