Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইভিএমে ঝুঁকি

ঢাকা-১০সহ দুই আসনে আজ ভোট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী যখন করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তখন বিভিন্ন মহলের দাবি উপেক্ষা করে আজ শনিবার ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের ব্যাপারে অনড় নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসনে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএমে ভোট প্রদানের আগে ভোটারদের হাত ধুয়ে ভোট দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কতটা ভ‚মিকা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ইভিএম পদ্ধতি হাত ধুয়ে ভোটাররা ভোট দিলেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

ভোটের উৎসব-আমেজ কিংবা উচ্ছ্বাস নেই। নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়িতে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের আধিক্যও চোখে পড়ে না। এর ওপর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রয়েছে চরম আতঙ্ক। ফলে শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি নগণ্যসংখ্যক হবে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করা হোক। তবে ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তে অনড় নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, শনিবার নির্ধারিত তারিখেই ঢাকা-১০সহ অন্য তিনটি আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এই উপনির্বাচনের প্রধান প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দল ও প্রার্থীরা এ বিষয়ে মিশ্র মতামত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ বলছে, সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর এই মুহ‚র্তে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তারপরও সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনেরই। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই মেনে নেবে তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-১০ আসনসহ পাঁচটি উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আবেদন ইসিতে দিয়েছে বিএনপি। দলের নেতারা বলেছে, এমনিতেই ভোটারদের মধ্যে ভোট দিতে আগ্রহ কম রয়েছে। এর ওপর করোনার প্রভাবে ভোটার উপস্থিতির হার আরও কমে যাবে। ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানা এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনের উপনির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আজ ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পদত্যাগে আসনটি শূন্য হয়। অন্যদিকে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ইউনূস আলী সরকারের মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩ এবং মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে বাগেরহাট-৪ আসন শূন্য হয়। তিনটি আসনের মধ্যে ঢাকা-১০ এ ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে, বাকি দুটিতে ব্যালট পেপারে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জরুরি সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিনিয়র সচিব আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কমিশন এ ভোটের বিষয়ে সুবিধা-অসুবিধা দুটি বিষয়ই বিবেচনা করেছে। সুবিধা বেশি মনে হয়েছে বলেই ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে সময় ঢাকা-১০সহ পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও নেওয়া হয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। পরে ঢাকা-১০ উপনির্বাচনের প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের সমঝোতা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর জনসমাগম এড়াতে কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী জনসভা ও পথসভা কিংবা পাঁচটির বেশি বড় আকারের শোডাউন করেননি। সীমিত গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণও ছিল নগণ্য।

এ আসনের উপনির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিএনপির শেখ রবিউল আলম রবি, জাতীয় পার্টির হাজি মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) আবদুর রহীম।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা-১০ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে উপনির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস কিংবা আগ্রহ চোখে পড়েনি। বেশিরভাগ স্থানেই কোনো পোস্টার কিংবা নির্বাচনী প্রচারপত্র দেখা যায়নি। প্রচারণার পুরো সময়জুড়ে কোথাও ব্যানার-ফেস্টুন এবং মাইকিংও ছিল না। অবশ্য নির্বাচন কমিশন থেকেই কেবল ২১টি নির্ধারিত স্পটে পোস্টার লাগাতে বলা হয়েছিল, অলিগলি পোস্টারমুক্ত রাখার নির্দেশনাও ছিল। ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো ও মাইকিংয়ে ছিল নিষেধাজ্ঞা। ফলে অন্য নির্বাচনগুলোর মতো ঢাকা-১০ উপনির্বাচনে জমজমাট অবস্থা ছিল না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আব্দুর রহমান ইনকিলাবকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মাত্র দু’দিন আগে নির্বাচন স্থগিত করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নির্বাচনে একটি প্রস্তুতি ও অর্থকড়ির ব্যাপার রয়েছে। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গণসংযোগকালে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে সতর্কতার সঙ্গে প্রচারকালে কোনো রকম জনসভা কিংবা পথসভা করেননি তারা। মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাঁচ আসনের উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে বলেছেন, করোনা আতঙ্কের কারণে জনগণ ও বিভিন্ন জায়গা থেকে নির্বাচন বন্ধ করার দাবি এসেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা একপেশে ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্কবিবর্জিত। জনগণের আশা-প্রত্যাশা- এ দুর্যোগের সময়ে কমিশন মানবিক আচরণ করবে, কিন্তু তারা অমানবিক আচরণ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ইনকিলাবকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তে প্রমাণ হয়েছে জনগণের প্রতি নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কারণ ইভিএমে একাধিক ব্যক্তির হাতের ছাপ পড়ার কারণে করোনা আর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার দায়-দায়িত্ব কমিশনকেই নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ