Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়তি চাপে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে

করোনা আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ। গত তিনদিন ধরেই রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও একই রকম ভিড় দেখা গেছে। তবে বাসের চেয়ে ট্রেনে ভিড় ছিল বেশি। রেলওয়ে সূত্রে জানায়, রাজশাহী রুটে বাস বন্ধ হওয়ার পর ওই রুটের ট্রেনগুলোতে ভিড় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। যাত্রীদের ভিড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। এই ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এরই মাধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, রেস্টুরেন্টসহ গণজমায়েত হয় এমন সকল স্থান ও কর্মকান্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই।
সায়েদাবাদ বআস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীদের ভিড়। অনেকেই অগ্রিম টিকিট কেটে বাসে উঠতে এসেছেন। আবার কেউ কেউ টার্মিনালে এসে টিকিট কাটছেন। ফেনীর যাত্রী মোরশেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জনবহুল ঢাকায় কোনোভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তা ঠেকানো কঠিন। আবার কোনো কোনো এলাকা বন্ধও করে দেয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। হঠাৎ সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদে পড়বো। তখন খাবে কি? সে জন্যই পরিবার পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেজন্যই অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। তবে খুব বেশি যাচ্ছে তা বলা যাবে না। মহাখালী বাস টার্মিনালের এক বাস মালিক জানান, গত তিনদিন ধরেই যাত্রীর চাপ বেশি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীর চাপ বেশি।
এদিকে, গতকাল ছুটির দিনে রাজধানী ঢাকা ছিল একেবারেই ফাঁকা। ব্যস্ত এলাকাগুলোতেও তেমন মানুষ দেখা যায়নি। ফার্মগেইট, মতিঝিল, গুলিস্তান, কাকরাইল মোড়ে ছিল না কোনো যানজট। সিটি সার্ভিসের বাসের জন্য হাতে গোনা কিছু যাত্রী দেখা গেলেও বাসের অভাবে তাদেরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, করোনা আতঙ্কে যাত্রীরা এখন গণপরিবহন এড়িয়ে চলছে। স্বল্প দূরত্বে মানুষ পায়ে হেঁটে যেতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য কাউন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। অগ্রিম টিকিটের জন্যও অনেকেই আসছেন। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার জানান, গত কয়েক দিন ধরেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী রুটে বাস বন্ধ হওয়ার পর রাজশাহী রুটের ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। স্টেশন ম্যানেজার জানান, ভিড় বেশি হওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রেনগুলোতে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবকেরা কমলাপুর রেলস্টেশনে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন। করোনার কারণে স¤প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাত ধোয়ার জন্য পানির ব্যবস্থা, বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সংগঠনটি।
এদিকে, শুধু ঢাকা শহর নয়, ঢাকার পাশ্ববর্তি এলাকা থেকেও মানুষ যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। আমাদের সাভার সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে সাভার, নবীনগর, বাইপাইল বাস কাউন্টারগুলোতে ছিল বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। করোনাভাইরাসের কারণে পরিবহন বন্ধ ঘোষণা হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে গ্রামে যাচ্ছেন।
আশুলিয়ার বাইপাইলের বাসের টিকেট কাউন্টারে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা পোশাক শ্রমিক আল-আমিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে কারখানার মালামাল না আসায় কারখানা ১০ দিনের জন্য ছুটি দিয়েছে। তাই আমার গ্রামের বাড়ি শেরপুর যাচ্ছি। তার ভাষায়, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় থাকার দরকার কি।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সব সময় মোটামুটি যাত্রীর চাপ থাকে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের কারণে ভিড় তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো অনুষ্ঠান মনে হয়। তাই যাত্রীর চাপ বেশি। পরে জানতে পারলাম করোনাভাইরাসের ভয়ে সবাই গ্রামে ছুটছেন। করোনাভাইরাসের কারণে ন্যাশনাল ট্রাভেলস বন্ধ আছে। আমার মনে হয় সব গাড়িই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এখনই যা টিকেট বিক্রির তা করে নিচ্ছি।
আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মো. ইমাম বলেন, আমাদের দেশে যে ক’জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তারা কেউ প্রবাসী কেউ প্রবাসীর পরিবারের সদস্য। এই প্রাবাসীদের মাধ্যমে ভাইরাসটি বাংলাদেশে এসেছে বলে আমার মনে হয়। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী আছে তাই গ্রামকে সুরক্ষায় রাখতে ঢাকা থেকে গ্রামে না যাওয়াই ভালো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ