পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : আহমেদ কাসিম আল ঘামদি তার পরিণত বয়সের বেশিরভাগই শ্মশ্রুশোভিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের মধ্যে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বিদেশে ধর্মীয় পুলিশ নামে পরিচিত সৎকর্ম উৎসাহিতকরণ ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ কমিশনের একজন নিষ্ঠাবান কর্মচারী। যারা ইসলামী রাষ্ট্রটিকে পাশ্চাত্যকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সর্বাপেক্ষা ইসলামী রক্ষণশীল আচার ছাড়া অন্য যে কোনো কিছু থেকে রক্ষাকারী সৈন্যদের সাথে কাজ করছে।
তাদের কিছু কাজ সাধারণ পুলিশের কাজের মতোই। যেমন মদ্যপান নিষিদ্ধ দেশটিতে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারীদের নির্মূলকরণ। সউদীরা যাকে কমিশন বলে, সে কমিশনের লোকেরা অধিকাংশ সময় কাটায় জনগণ ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালন করছে কি না সেদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রেখে, যা সউদী আরবকে শুধু পাশ্চাত্য নয়, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকেও আলাদা করে রেখেছে।
সউদী আরবে একটি প্রধান অপরাধ হলো ইখতিলাত বা নারী-পুরুষের অননুমোদিত মেলামেশা। দেশটির আলেমগণ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন যে, এর ফলে ব্যভিচার, পরকীয়া, ঘর ভাঙা, অবিবাহিত যুগলের সন্তান জন্মদান ও সার্বিক সামাজিক ধস সৃষ্টি হবে।
কয়েক বছর ধরে ঘামদি এ কর্মসূচিতে জড়িত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত কমিশনের মক্কা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর তার মধ্যে এ নিয়ে চিন্তা জাগে এবং এসব আইন বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। তাই তিনি তার প্রশ্নের জবাব খুঁজতে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শরণাপন্ন হন। তাতে তিনি যা পেলেন তা চমকপ্রদ ও জীবন বদলে দেয়া ব্যাপার। তা হলো প্রথম দিকের মুসলমানদের মধ্যে নারী-পুরুষের মেলামেশা ছিল এবং তাতে কেউ কিছু মনে করত না।
সুতরাং তিনি কথা বলতে শুরু করলেন। পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ লিখে ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি যুক্তি দেখালেন যে, সউদীরা ধর্মের নামে যা পালন করছে তা আসলে আরবীয় রীতি, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মিশ্রিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সউদী আরবে যা করা হয় সেই নামাজের সময় দোকান বন্ধের দরকার নেই, মহিলাদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করারও প্রয়োজন নেই। মহানবী সা:-এর সময় নারীরা উটে চড়তেন যা কি না তার মতে এসইউভি চালানো পর্দাবৃত মহিলাদের চেয়ে ছিল অনেক বেশি উসকানিমূলক।
এমনকি তিনি এ-ও বলেন, নারীরা যখন তাদের শরীর ঢাকা রাখে তাদের মুখ ঢাকাও প্রয়োজন যদি তারা করতে চায়। তিনি তার নিজস্ব বিশ্বাসের দৃঢ়তা প্রদর্শন করে ২০১৪ সালে স্ত্রী জাওয়াহিরকে টিভিতে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি ক্যামেরার সামনে হাসেন, তার মুখ ছিল অনাবৃত এবং মেকাপ চর্চিত।
সউদী আরবের ধর্মীয় বলয়ের অভ্যন্তরে এটা ছিল এক বোমা বিস্ফোরণ এবং শেখদের প্রাধান্য অনুমোদন করে ও জীবনের সব ক্ষেত্রে ঠিক-বেঠিকের রায় দেয়ার তাদের অধিকার সম্বলিত সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতি হুমকি। তিনি তাদের নিয়ন্ত্রণের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেন।
কর্মক্ষেত্রে ঘামদির সহকর্মীরা তার সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তার সেলফোনে ক্রুদ্ধ লোকজন গালাগালি দিচ্ছে, টুইটারে তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট শেখরা মূর্খ বলে তার নিন্দা করেছেন এবং তাকে নির্যাতন করে শাস্তি দেয়া ও বিচার করা উচিত বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
সমঝোতার চ্যালেঞ্জ
আমি সউদী আরবে এসেছিলাম ওয়াহাবিবাদের সন্ধানে সউদী সুন্নি ইসলামের ওপর যার প্রচ- প্রভাব যাকে বিশ্বব্যাপী অসহিষ্ণুতায় ইন্ধন জোগানো ও সন্ত্রাসবাদ লালনের জন্য দায়ী করা হয়। আমি রিয়াদ, জেদ্দা ও অন্যান্য শহরে সপ্তাহের পর সপ্তাহ শেখ, ইমাম, ধর্মীয় অধ্যাপক এবং আরো অনেকের সাথে কাটিয়েছি এবং একটি রুদ্ধ ও গোপনীয় সমাজকে তার আবরণের নিচে জানার চেষ্টা করেছি।
কোনো পশ্চিমা পর্যটকের জন্য সউদী আরব হচ্ছে নগরায়ন, মরু সংস্কৃতি ও এক হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে প্রচলিত কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন পালনের অন্তহীন চেষ্টা চলা পরিবেশের তালগোল পাকানো মিশ্রণ। দেশটি তেলসমৃদ্ধ, রয়েছে আকাশচুম্বী ভবনসমূহ এবং অসংখ্য এসইউভি ও শপিং মল যেখানে কিভাবে অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, অমুসলিমদের সাথে মিথষ্ক্রিয়া অথবা বিড়ালের সাথে ব্যবহার বিষয়ে প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয় কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতিতে।
সউদী আরবে প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ধর্ম জড়িত। ব্যাংক যাতে শরিয়া আইনে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আলেমদের নিয়োগ করা হয়। মানুষের আকার দৃশ্যমান হবে এ ধর্মীয় সংবেদনশীলতার কারণে ম্যানিকুইনরা মাথাহীন। স্কুলের বইতে বলা হয়েছে বালকদের কিভাবে চুল কাটা উচিত, কিভাবে বালিকারা তাদের শরীর ঢাকবে এবং নারী ও পুরুষরা কতবার তাদের গুপ্ত লোম পরিষ্কার করবে।
যেহেতু ইসলাম হচ্ছে মানবজীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা সেহেতু তা পালনের জন্য ব্যাখ্যা গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য আরবে এ সউদী ব্যাখ্যা হচ্ছে কঠোর রক্ষণশীল, বিশেষ করে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
প্রকাশ্যে অধিকাংশ সউদী নারীই আবায়াস নামে পরিচিত ঢোলা কালো গাউন পরিধান করে, যা তাদের শরীরের আকৃতি যাতে বোঝা না যায় সেভাবেই তৈরি করা হয়। সেই সাথে তারা বোরকা পরে যাতে তাদের চুল ও মুখ ঢাকা পড়ে। শুধু চোখের ওপর পাতলা পর্দা থাকে। রেস্তোরাঁগুলোতে পরিবারের জন্য আলাদা স্থান থাকে যার অর্থ ঐ দলে মহিলা রয়েছে। সিঙ্গল অর্থে শুধু পুরুষদের বোঝানো হয়।
বহু সউদীই গোপনে মেলামেশা করে, পুরুষ ও নারীরা সাধারণত তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই হোটেল লবিতে সাক্ষাৎ করে। অন্যরা মেলামেশা করতে চায় না এবং লিঙ্গ পৃথকীকরণকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ বলে মনে করে। কিছু রক্ষণশীল পরিবারে লোকদের সাথে তাদের স্ত্রী-কন্যা-বোন ছাড়া অন্য নারীদের, এমনকি তাদের ভাইয়ের স্ত্রীর সাথেও সারাজীবনে দেখা হয় না।
সউদী আরবের অভ্যন্তরে অন্য সব ধর্ম অবদমিত। সউদী আরবে প্রকাশ্যে কোনো চার্চ নেই, এমনকি গোপনেও নেই। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সউদীরা একে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন বলে মানতে অস্বীকার করে। তারা তাদের দেশকে ভ্যাটিকানের সাথে তুলনা করে বলে, এটা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য এক অনন্য স্থান যেখানে রয়েছে নিজস্ব আইন। সূত্র : দি নিউ ইয়র্ক টাইমস। (অসমাপ্ত)
নিবন্ধকার বেন হার্বার্ড দি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।