পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীতে বহু পেশা রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স পেশা ব্যাতিক্রম। এ পেশা শুধু জীবন ধারণের জন্য আয়-রোজগান নয়, জনসেবা-দেশসেবাও। ইচ্ছা করলেই কেউ এ পেশায় আসতে পারেন না। প্রতিবছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও পাসের হার সেটা বলে দেয়। চিকিৎসাশাস্ত্র, চিকিৎসকদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। গোটা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ রোগের ছোবল কম হলেও ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন একজন। এ অবস্থায় ভীতি-আতঙ্ক নয়, দায়িত্ববোধ থেকে রোগীদের সেবা করা ডাক্তারদের নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্য হলেও এটা দেশপ্রেমের নামান্তর। দেশের ১৭ কোটি মানুষ চিকিৎসকদের দিকে তাকিয়ে। দেশের চিকিৎকদের সামনে জ্বলজ্বল করছে চীনের চিকিৎসকদের দেশপ্রেমের উদাহরণ। একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহবান, করোনা ছোবলের সংকটময় মূহুর্তে ভেদাভেদ ভুলে দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাই সচেতন হই, সতর্ক থাকি এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্রতি হই। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ডান-বাম, মন্ত্রী, এমপি, আমলা, জজ, ব্যারিষ্টার, ধনী গরীব কাউকে চেনে না।
প্রথমে অভিনন্দন জানাই দেশের চিকিৎসক সম্প্রদায়কে। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরের পাদুর্ভাব ঘটার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের চিকিৎসক, সিস্টার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, প্রশাসক দিনরাত যেভাবে সেবা দিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের সারিয়ে তুলেছেন এ জন্য তাদের মোবাকরবাদ। অন্যান্য হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর ডাক্তারদেরকে অভিনন্দত। সরকার ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষার ফি নির্ধারিত করে দেয়ার পর প্রতিযোগিতার বাজারে তারা নির্দেশ মেনে কম পয়সায় পরীক্ষা করে জাতিকে সেবা দিয়েছেন। আবার দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের খামখেয়ালির কথা। গত ১৪ মার্চ ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জটিলতায় আক্রান্ত কানাডা সাসকাচোয়ানের রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমা আমিনের মর্মান্তিক মৃত্যু। ঢাকা মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. এ বি এম জামাল বলেছেন, ‘যখন কানাডা ফেরত মেয়েটির আসার খবর জানাজানি হয়, তখন ওয়ার্ডটি করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে পড়ে যায়’। ডাক্তার-নার্সের রোগী দেখে ‘আতঙ্কগ্রস্থ হওয়া’ শুধু অমানবিকই নয় অপরাদের পর্যায়ে পড়ে।
করোনাভাইরাস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে দেশের চিত্র তুলে ধরছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) প্রতিদিন করোনাভাইরাসের ছোবলের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছেন। চীন ও ইরানের পর ইতালিতে মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রতিটি দেশের সীমান্ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণজমায়েত বন্ধসহ দ্রুত বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছে হু। দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিদিন প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১১ দেশে করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে। আমেরিকা, সউদী আরব, কানাডা, ইউরোগের দেশগুলোসহ বহুদেশ করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করতে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি সউদী আরবসহ অনেক দেশ জ্বর-কাশি হলেও নাগরিকদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের সরকার করোনাভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কয়েকহাজার প্রবাসী হঠাৎ করে ফিরে এসে দেশের মানুষকে বিপদগ্রস্থ করে তুলেছেন। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকার কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু কিছু শিক্ষিত বিদেশ ফেরত ব্যাক্তি অবিবেচকের মতো সেসব উপেক্ষা করে বাড়িঘরে ফিরে গেছেন। শুধু তাই নয় তারা নিজ পরিবার, প্রতিবেশিদের সঙ্গে চলাফেরা করে, হাট-বাজারে গিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন!
করোনাভাইরাস থেকে নাগরিককে দূরে রাখতে সরকার নানান সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা করার দায়িত্ব চিকিৎসকদের। হাসপাতালে কর্মরত সিস্টার, আয়া, বয় তাদেরও দায়িত্ব। চিকিৎসকরা আক্রান্ত রোগীদের আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিয়ে ভাল করে তুলে দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন এটাই মানুষের প্রত্যাশা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের যে চিকিৎসকের অবহেলায় ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নাজমা আমিনের প্রাণ অকালে ঝড়ে গেল, তিনি কি বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেছেন একজন চিকিৎসক তৈরি করতে সরকারকে কত লাখ টাকা খরচ করতে হয়? ওই টাকা তো জনগণের ট্রাক্সের। বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করে এমবিবিএস পাস করতে একজন শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৩৫ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। অথচ সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা সামান্য বেতনে এমবিবিএস পাস করেন। দেশের জনগণ যে ট্যাক্স দিয়ে তাদের চিকিৎসক করে সন্মানিত করেছেন, উন্নত জীবন যাপন নিশ্চিত করেছেন; তাদের সেবা করার নৈতিক দায়িত্ব চিকিৎসকদের উপর পড়ে।
এটা ঠিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা ও মানসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তানের উপরে। ওই গবেষণায় যে ১৯৫টি দেশের চিত্র তুলে ধরা হয় তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১০ চিকিৎসক ও ৩০ নার্স প্রয়োজন। ১০ হাজার লোকের জন্য বাংলাদেশে রয়েছে ৫.৫ চিকিৎসক ও নার্স ২.১ জন। দেশে প্রয়োজন ১ লাখ ৭০ হাজার চিকিৎসক ও ৫ লাখ ১০ হাজার নার্স। বর্তমানে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার (এমবিবিএস এবং বিডিএস)। গোটা বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ২১ হাজার ৮শ। বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ১৫টি, স্নাতকোত্তর হাসপাতাল ১১টি, জেনারেল ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ৬৩টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪২৪টি, অন্যান্য হাসপাতাল ৯৪টি। সরকারি শয্যাসংখ্যা ৪৯ লাখ ৪১৪, বেসরকারি শয্যাসংখ্যা ৮৭ লাখ ৬১০টি, নার্স সংখ্যা ৩৭ হাজার। প্রতিবছর মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ১০ হাজার ২২৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। নার্স টেকনোলজিস্ট এবং অন্যান্য সহকারী কর্মচারী অপ্রতুল। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায় ১৬ হাজার। বাজেট অপ্রতুলতা, দক্ষ জনশক্তির অভাব, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি সর্বস্তরে অব্যবস্থাপনায় এই জনবল দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের সন্তোষজনক চিকিৎসা সেবা অবম্ভব। তারপরও থাকে চিকিৎকদের দায়বদ্ধতা। চিকিৎসকরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করে সারিয়ে তুললে দেশবাসীর কাছে বীরের মর্যাদা পাবেন। সারাবিশ্ব করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান সংকটময় মূহুর্তে আমাদের সরকারের উচিত চিকিৎসকরা যাতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে করোনা আক্রান্তদের সেবা করেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ।
চিকিৎসকরা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যেতে চান না। শহরে রোগীদের একগাদা টেস্ট ধরিয়ে দিয়ে পকেট কাটেন। তাছাড়া তারা ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা করেন। চিকিৎসকদের উচিত দেশ-জাতির জন্য তাদের দায়বদ্ধতা ভেবে দেখা উচিত। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে একজন শিক্ষার্থী যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন; তখন তার দুই চোখভরা স্বপ্ন, দেশপ্রেম ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প থাকে। অন্যদিকে তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। মনিষীরা বলেছেন, মানবসেবার চেয়ে বড় সেবা পৃথিবীতে কিছু নেই। দেশে বহু চিকিৎসক মানুষের সেবা দিচ্ছেন; কতজনকে মানুষ স্মরণ রাখেন? ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম অনেক আগে ইন্তেকাল করেছেন, অথচ দেশ-বিদেশের মানুষ সব সময়সতাকে স্মরণ করেন। ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের ডাক্তার অধ্যাপক সামন্ত লাল কি মানুষের কাছে কম সন্মানিত? রোগীর সেবা, দেশপ্রেমই তাকে এই সন্মান দিয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে জাতিকে রক্ষা এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দেবেন সেটাই চিকিৎসকদের কাছে প্রত্যাশা। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, সিস্টার, আয়া, বয়দের কোনো রোগী দেখে আতঙ্কিত হওয়া সাজে না।
চিকিৎসকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাষণ প্রণিধানযোগ্য (১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান)। জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনা দেয় গরিব কৃষক, ওই গরিব শ্রমিক। চিকিৎসক সমাজকে বলছি, নিজেদেরকে ভৃত্য মনে করে রোগীপক্ষকে মালিক ভাবুন (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কিন্তু পাবলিক সার্ভেন্ট)। ভাবুন, যে রোগীটি এসেছেন, তিনিই আমার দেবতা। অসুস্থের বেশে তিনিই নররূপী নারায়ণ। রোগীর লোকজন আমাদেরকে পদধূলি দিতে আসা পরম সম্মানিত মেহমান। দেখা যাবে, অভিযোগ-হামলা তো দ‚রের কথা; রোগীপক্ষ বাইরে গিয়েই বলবেন, যে ডাক্তারের কাছে গেছি, তিনি মানুষ নন, সাক্ষাৎ মহামানব। দৃঢ়ভাবে মনে রাখা কর্তব্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রধান ব্যক্তি রোগী। রোগীর সেবাদানের জন্যই দরকার চিকিৎসকের। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসক দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি। -- হাসপাতালে রোগীই মুখ্য আর সবকিছুই রোগীর সহযোগী ও গৌণ। যে কোনো ম‚ল্যে রোগীর স্বার্থ সুরক্ষাই প্রধান’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।