Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

করোনা আতঙ্কে থমথমে রাজধানী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১১:৫৯ পিএম

করোনা প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরই দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ঝুঁকি এড়াতে ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল বুধবার একজনের মৃত্যুর খবরের পর জনবহুল রাজধানী ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকে। এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাব এড়াতে গত দুদিন থেকে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ। বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।

গতকাল দুপুরের পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসে। সোশাল মিডিয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত পাল্টে যায় ব্যস্ত রাজধানীর চিরচেনা পরিবেশ। যানজটে থমকে থাকা সড়কগুলো ফাঁকা হতে থাকে। সবধরনের যানবাহনও কমে যায়। নগরবাসীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন ঝুঁকিমুক্ত থাকতে ঘরকেই বেছে নেন।

কর্ম দিবসের ব্যস্ত ঢাকার চিত্র সন্ধ্যার আগেই পুরোপুরি পাল্টে যায়। থমথমে পরিবেশ তৈরি হয় নগরীর সিংহভাগ এলাকায়। সরকারি বা বেসরকারি সব অফিসই নির্ধারিত সময়ের আগেই খালি হয়ে যায়। উদ্বিগ্ন মানুষ চলে যান যে যার বাসায়। এর আগে করোনা হুমকিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন সংক্ষিপ্ত করা হয়। ওইদিন থেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। তবে তার আগেই শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ রাজধানী ছাড়ে। অভিভাবকদের অনেকেই তাদের সঙ্গী হয়। এতে নগরীর জনসংখ্যাও কমতে থাকে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং জনসমাগম স্থানগুলো এড়িয়ে চলার সরকারের নির্দেশনাও ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ।

পেশাগত কাজের চাপ না থাকলে রাজধানীর বাসিন্দারা শপিংমল, মার্কেট, ফুডকোর্ট, রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রাণের ঝুঁকি যেখানে, মন টানে না বিনোদনে। গত কয়েকদিন ধরে তাই খা খা করছে কেনাকাটার ভিড় লেগে থাকা শপিংমলগুলো। ক্রেতা না পাওয়ায় শপিং মলের অনেক দোকানই বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে ভিড় বেড়েছে কাঁচা বাজারে আর পাড়ার মোড়ের মুদি দোকানে। বিপর্যয় আসন্ন ধরে নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ নিত্যপণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নির্ধারিত দামে পণ্য বেচাকেনা করতে বলা হচ্ছে বার বার। বলা হচ্ছে, দেশে প্রচুর পরিমাণে পণ্য মজুদ রয়েছে।

সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাসের জন্য অনেক যাত্রী অপেক্ষা করছেন। আলাপকালে একজন যাত্রী জানান, ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ। সে কারণে স্ত্রীসহ ছেলেমেয়েদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। গাবতলী বাস টার্মিনালের একজন বাস মালিক বলেন, গত দুই তিন দিন ধরেই দূরপাল্লার বাসগুলোতে ভিড় লেগেই আছে। পরিবার পরিজনকে মানুষ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতেই মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এক বাস মালিক বলেন, গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যে কোনো সময় দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। মিডিয়াতে মন্ত্রীর এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোতে ভিড় আরও বেড়েছে। কমলাপুর রেল স্টেশনেও যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। স্টেশন ম্যানেজার জানান, ঢাকামুখি ট্রেনগুলোতে ভিড় অপেক্ষাকৃত কম। তবে ঢাকা থেকে যে সব ট্রেন ছাড়ছে সেগুলোতে ভিড় দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, করোনার সংক্রমণরোধে স্টেশনে প্রবেশের আগে প্রতিটি যাত্রীর তাপমাত্রা টেস্ট করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের ট্রেনে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনে তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, ঢাকায় চলাচলরত সিটি সার্ভিসের বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। বাস চালকরা জানান, কোনো স্টপেজ থেকেই পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মালিকরা বাসের ট্রিপ কমিয়ে দিয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। করোনা সংক্রমণের প্রস্তুতি না থাকার কারণেও অনেক যাত্রী গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন বলে জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Arezaul Haque ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    গুড,জ্যাম কমবে এখন
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Priti ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    'আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া ছাইয়্যি ইল আসকম'
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ferdous Pappu ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    দেশের সরকারি বেসরকারি সকল ডাক্তার ও নার্সদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইন্সুরেন্স সেবা প্রদান করা অতিব জরুরী কারন করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত হয়ে তারা যাতে চিকিৎসা সেবা বন্দ না করেদেন। কলিকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেক ডাঃ ও নার্সের জন্য ৫ লাখ রুপীর ইন্সুরেন্স সেবা ঘোষনা করছেন। আমাদের সরকার কে বলবো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ করুন অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেফাজত করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Feruz Ahammad ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    পৃথিবীর সকল ভাল মন্দ আকাশ বাতাস মাটি পানি রোগের আক্রমণ এবং রোগমুক্তি সবকিছুই আল্লাহ্‌র সৃষ্ট ইশারায় চালিত আর সেই আল্লাহ্‌র ইশারায় চালিত এই সামান্য করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবী তথা ৭৪০ কোটি মানুষকে ১০০০০ কিলোমিটার ঝড়ের চাইতে বেশি গতিতে কাপিয়ে তুলেছে আর যদি এর চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষমতাধর কোন ভাইরাস মহান আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয় তাহলে পুরো পৃথিবী সম্ভবত ভয়ে মরে তামাতামা হয়ে যাবে,তারপরও মানুষ আল্লাহর প্রতি ভয় স্বীকার করে না। এখনও সময় আছে আল্লাহ্‌র সকল সৃষ্টিকে স্বীকার করে আল্লাহর প্রতি অনুগত হও।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Manik ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    এই ভাইরাস অামাদের পাপের ফসল গোপনে,প্রকাশ্যে অামরা কত অন্যায় করতেছি অথচ কখনো মাফ চাওয়ার চিন্তাও করিনা! অামাদের মত পাপিদের মাপ চাওয়ার ও মুখ নাই যদি অাল্লাহ্ মাফ না করে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rabbiquzzaman Mia Rubel ১৯ মার্চ, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    জাতীয়ভাবে যদি সরকার তওবা সপ্তাহ পালন করে করোনাভাইরাস থেকে জাতি মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • নওশাদ ১৯ মার্চ, ২০২০, ৫:৪৯ এএম says : 0
    যিনি জান দিয়েছেন,তিনি জান নিবেন।এখানে কারো করার কিছুই নাই।আললাহর ইচছা।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন হোসেন ১৯ মার্চ, ২০২০, ১১:২০ এএম says : 0
    আমি বলতে এই চাই করোনা ভাইরাসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি গজব । কারণ মানুষ যে পরিমাণ পাপ করা শুরু করেছে তাতে গজব আসা কোনো ভাবনার বিষয় নয় । আল্লাহর অবাধ্য যারা তারা আগেও ধবংস হয়েছে এখনো ধবংস হবে । যারা মুমিন তাদের কোনো ভয় নাই ,চিন্তা নাই । তাদের জন্য হবে শহীদি মৃত্যু ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD. MEHERUN HASAN SARKER ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    ALLAH Taala Uttom Hefazot Kari
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Rana ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:২৭ পিএম says : 0
    সবাই, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন ই এবং করোনা প্রতিকারের চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ