Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাধসে শেয়ারবাজার

করোনা আতঙ্ক : ৯ দিনে নেই ৪৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস আতঙ্কে মহাধসের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে শেষ ৯ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা নেই। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের প্রকোপকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। প্রাণ দিয়েছেন ৭ হাজারের বেশি।
করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহ প্রকোপ বেশকিছুদিন ধরেই বিশ্ব শেয়ারবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। বড় ধসের কবলে পড়ে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে সাময়িক লেন-দেন বন্ধ রাখা ঘটনা ঘটেছে। পতন সামলাতে না পেরে ভারত ও পাকিস্তানের বাজারেও লেনদেন সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। আর ফিলিপাইনের শেয়ারবাজারসহ সব ধরনের আর্থিক বাজার স্থগিত করেছে।

বিশ্ব শেয়ারবাজারে দেখা দেয়া বেহাল দশার প্রভাবে দেশের শেয়ারেও বেশিকছু দিন ধরে মন্দা চলছিল। এ পরিস্থিতিতে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়। পরের কার্যদিবসেই করোনাভাইরাস আতঙ্কে শেয়ারবাজার ধসে পড়ে। একদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৭৯ পয়েন্ট কমে যায়।

ভয়াবহ এই ধসের কবলে আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দিন যত যাচ্ছে ততো তলানিতে যাচ্ছে শেয়ারবাজার। আর পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের হাহাকার বাড়ছে। পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হওয়ায় আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি তুলেছেন।
যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত সোমবার শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, পুঁজিবাজার ঠিক করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কিছু বিনিয়োগকারী কম দরে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ১০ টাকার শেয়ার ৫ টাকায় বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। ভীত হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে চলে না যাওয়ার জন্য তিনি বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শেয়ারবাজারে এখন করোনাভাইরাস নিয়ে যে আতঙ্ক করছে, তা আমাদের কারোর হাতেই নেই। তিনি বলেন, করোনার আতঙ্ক যখন ছিলনা, তখন কিন্তু বাজার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছিল। কিন্তু ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর পরে আবার বাজারে পতন হওয়া শুরু করল। এ অবস্থাও বেশিদিন থাকবে না। শিগগিরই বাজার তার নিজের গতিশীল জায়গায় ফিরে যাবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংক ঐক্যমত হয়েছে বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য ব্যাংকগুলো যার যার সামর্থ অনুযায়ী পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করবে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে শেষ ৯ কার্যদিবসে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৪২ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটে দাম এই পরিমাণ কমে গেছে। এ হিসাবে গত নয় কার্যদিবসে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিতভাবে প্রায় অর্ধ লাখ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
ভয়াবহ এই পতনের মুখে পড়ে প্রধান মূল্যসূচক ৬৯৪ পয়েন্ট হারিয়েছে ডিএসই। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাধসের পর ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইর সূচকে পরিবর্তন আনা হয়। বাজারটিতে প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে চালু করা হয় ডিএসইএক্স। শুরুর দিন সূচকটির ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। এখন এই সূচকটি ৩ হাজার ৭৭২ পয়েন্টে নেমে গেছে। অর্থাৎ শুরু অবস্থান থেকেও ২৮৩ পয়েন্ট নিচে চলে এসেছে ডিএসইর প্রধান সূচক।
শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতিকে রক্তক্ষরণের সঙ্গে তুলনা করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, প্রতিদিন শেয়ারবাজারে ধস নামছে, আর নীরবে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ না করে নীরব থাকায় পতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতি থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে কিছুদিনের জন্য শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখা উচিত।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন সবার মধ্যেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারসাজি চক্র এই করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে না। তাদের নীরব থাকার কারণেই বাজারে এমন পতন হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখা উচিত।
ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক এবং বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ার পরও ব্যাংকের বিনিয়োগ না বাড়ায় শেয়ারবাজারে এমন পতন হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই শেয়ারবাজার ভালো করতে চেষ্টা করছে। আশাকরি শিগগির ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়বে এবং শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখাতে বিনিয়োগকারীদের করা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কারণ এ ধরনের কোনো আইন আমাদের নেই।
এদিকে শেয়ারবাজার টেনে তুলতে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।
নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুযোগ দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো এখনো উল্লেখযোগ্য সাড়া না দেওয়ায় গত ১০ মার্চ তালিকাভুক্ত ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিএসই। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ না বাড়ায় ওই বৈঠকে ডিএসইর পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে বড় ধস নামলে বিনিয়োগকারীদের একটি দল ডিএসইতে গিয়ে লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানান।

বিনিয়োগকারীদের এই দাবির প্রেক্ষিতে ডিএসইর এমডি ছানাউল হক তাদের বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজার ভালো করতে চেষ্টা করছে। বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। ডিএসইর এমডির এই আশ্বাসের বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসেন। পরদিন সোমবার লেনদেনের শুরুতে পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে দুপুরে নতুন করে ৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সংবাদ আসে। সেইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে নেমে আসে বড় ধস।



 

Show all comments
  • Jahed Hossain ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    Wait for see. Age age deko hotahey keya
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    আল্লাহ জানে আমাদের দেশের কপালে কি আছে
    Total Reply(0) Reply
  • আবেদ খান ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
    আশা করি আপনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক সকল প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াবে এবং এগিয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
    বাজার ঘুরে দাঁড়াবে ইনশা আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ