Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন শতাংশের কম সুদে টাকা খাটাচ্ছে ব্যাংক

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কর্পোরেট রিপোর্ট : ব্যাংকের কাছে প্রচুর টাকা থাকলেও ঋণ নিতে তেমন আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের। আবার রিভার্স রেপোতে নির্ধারিত সুদহারে টাকা রাখতে চাইলে তা-ও নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নগদ টাকার টানাটানি না থাকায় কলমানিতে লেনদেন হচ্ছে অনেক কম সুদে। এখন নিরুপায় হয়ে নতুন প্রবর্তিত স্বল্প মেয়াদের বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে ৩ শতাংশের কম সুদে টাকা খাটাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সাত দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে গত বুধবার তিন হাজার ৪১০ কোটি টাকা রেখেছে ১৪টি ব্যাংক। আগের দিন একই মেয়াদি বিলে ১০টি ব্যাংক ধার দেয় তিন হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। দু›দিনই মাত্র ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ সুদে এ টাকা খাটানো হয়েছে। এ দুই ধরনের বিল চালুর পর থেকে সব নিলামেই কোনো না কোনো ব্যাংক অংশ নিয়ে টাকা খাটাচ্ছে। চালুর প্রথম দিন ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ সুদে সাত দিন মেয়াদি বিলে ২৩০ কোটি টাকা রাখে চারটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের এ সুদহার বর্তমানে আমানতের গড় সুদহারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ যে পরিমাণ সুদে ব্যাংকগুলো আমানত নিচ্ছে, টাকা রেখে সুদ পাচ্ছে তার অর্ধেক। গত এপ্রিলে গড়ে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে আরও বৃদ্ধি দরকার। বিনিয়োগ আরও বাড়লে ব্যাংকগুলো নিজের অর্থ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে ঋণ হিসেবে নিতে পারবে। কোনো ব্যাংককে তখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে কম সুদে টাকা খাটাতে আসতে হবে না। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আশানুরূপ ঋণ বিতরণ করতে না পারায় আমানত সংগ্রহে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংক। এর পরও আমানত সংরক্ষণের বড় ধরনের কোনো বিকল্প না থাকায় ব্যাংকগুলোতেই কম সুদে টাকা রাখছেন সঞ্চয়কারীরা। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে আছে। এর মধ্যে একেবারে অলস তথা কোনো ধরনের বিনিয়োগে নেই ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য থাকায় ঈদের আগেও নগদ টাকার টানাটানি নেই। এতে করে ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও চাপ নেই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি)। কলমানিতে গড়ে ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। গত মে মাসেও কলমানির গড় সুদহার এ রকমই ছিল। আগের বছরের একই সময়ে এ ক্ষেত্রে সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একসময় ঈদ এলেই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সুদে কলমানিতে লেনদেন হতে দেখা যেত। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে কম সুদে টাকা খাটাতে আগ্রহের কমতি নেই ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি নূরুল আমিন বলেন, ব্যাংক খাতে এখন পর্যাপ্ত তরল অর্থ থাকলেও আশানুরূপ চাহিদা না থাকায় অনেকেই পর্যাপ্ত ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে টাকাটা একেবারে অলস ফেলে না রেখে কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে টাকা খাটাচ্ছে কিছু ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদহার কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের চেয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে রেপোতে ৬ দশমিক ৭৫ এবং রিভার্স রেপোতে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করা হয়। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত তারল্য শুষে নেয়। তবে চাহিদা না থাকায় গত জানুয়ারির পর কোনো ব্যাংক আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নেয়নি। আবার রিভার্স রেপোতে টাকা খাটাতে চাইলেও গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর সে সুযোগও দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ গত ২২ জুন একটি ব্যাংক রিভার্স রেপোতে ১০০ কোটি টাকা খাটাতে এলেও তা নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কোনো কোনো ব্যাংক টাকা খাটাতে চাইলেও তা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায় অলস অর্থ কাজে লাগাতে ব্যাংকগুলো আবার যেনতেন ঋণ বিতরণ করে যেন মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে না তুলে, সে জন্য রিভার্স রেপোর তুলনায় কম সুদে বিকল্প উপায়ে বাজার থেকে টাকা তুলতে গত ৬ এপ্রিল থেকে ৭ ও ১৫ দিন মেয়াদি বিল চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে রিভার্স রেপোর তুলনায় কম সুদ ব্যয় করে বাজার থেকে টাকা তোলা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিন শতাংশের কম সুদে টাকা খাটাচ্ছে ব্যাংক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ