Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশে প্রবাসী আতঙ্ক

অনেকেইে মানছেন না হোম কোয়ারেন্টাইন

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের বিভিন্ন জায়গায় হোম কোয়ারেন্টাইন মেয়াদ শেষ না হতেই বিদেশ ফেরত কেউ কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। স্বজনদের পাশাপাশি মিশছেন প্রতিবেশিদের সাথেও। গতকাল সোমবার পর্যন্ত চার প্রবাসী তাদের পরিবারের আরও চারজনের মধ্য করোনা ছড়িয়েছেন। এতে করে রোগীর সংখ্যা হয়েছে আট জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, আট জনের মধ্যে পাঁচ জন হাসাপাতালে আছেন। আর তিনজন ভালো হয়ে গেছেন। এসব কারণে ‘প্রবাসী আতঙ্ক’ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশের মানুষের মধ্যে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন প্রায় এক লাখ। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩ হাজার ৪৮৮জন। আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাস থেকে বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে পরামর্শ না মেনে অনেকেই অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মেয়ের চিকিৎসা নিতে সপরিবারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এসেছিলেন ইতালি থেকে আসা ব্যক্তি সবুজ সাহা। দুসপ্তাহ আগে দেশে আসার পর প্রায় প্রতিদিনই জনসম্মুখে এসেছেন, অংশ নিচ্ছেন নানা সামাজিক কার্যক্রমেও। তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে অনেকটা আশ্চর্য হয়ে তিনি জানান, তাকে এ কথা কেউ বলেনি। তিনি একা নন- একই অবস্থা নাটোর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গার। অনেকে বিধি নিষেধ মানলেও, কেউ কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন যত্রতত্র। এরমধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় শর্ত না মানায় এক সৌদিআরব প্রবাসীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
প্রবাসীদের অবাধে মেলামেশা ও চলাফেরায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে তাদের প্রতিবেশিরা। বিষয়টি নিয়ে বেশ শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। তারা বলেন, আমরা গ্রামবাসী আতংকের মধ্যে তো আছি। তবে সংশ্লিষ্ট জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ এর দায় নিতে নারাজ। তারা বলছেন, যতটা সম্ভব সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিল্ডে যেয়ে সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে কিনা সেটা দেখে আসছেন, তাদের আত্মীয়স্বজনদেরও বলে আসা হচ্ছে যেন তারা বাসা থেকে বের না হয়।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছেই। এর মধ্যে বগুড়ায় নতুন করে ১১ জনকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারান্টাইনে থাকারা নির্দেশনা না মেনে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বরিশালে কোয়ারান্টাইনে থাকা একজন কিছু না জানিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বগুড়া জেলায় বিদেশ ফেরত নতুন ১১ জনকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১১ মার্চ থেকে গতকাল জেলায় মোট ২০ জনকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
গাজীপুরে ইতালিফেরত ৪৪ জন প্রবাসীকে কোয়ারান্টাইনে রাখার জন্য গাজীপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়। বরিশালের বাকেরগঞ্জে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকা এক ব্যক্তি চিকিৎসকদের না জানিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পুলিশের সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, গৌরনদীতে ইতালিফেরত চারজনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হোম কোয়ারান্টাইনের নিয়ম মানছিলেন না। খবর পেয়ে প্রশাসন ও পরিবারের সহায়তায় তাকে নিয়ম মানতে বাধ্য করা হয়। নাটোরে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নাটোরে বিদেশ ফেরত ১১ জনকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে চীনফেরত দুজনের কোয়ারান্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে বাকি নয়জনের কোয়ারান্টাইনের মেয়াদ শেষ না হলেও তাদের অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজবাড়ী জেলায় ১২ প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সব সদস্যকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ময়মনসিংহ জেলায় বিদেশফেরত আটজনকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইন রাখা হয়েছে। এছাড়া ফুলপুর উপজেলায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ছয় চীনা নাগরিককে। ফেনী জেলায় ১০ প্রবাসীসহ ৬৬ জনকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে তিনজন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে তারা ইতালিফেরত এক ব্যক্তির স্ত্রী ও শিশু সন্তান। ওই ব্যক্তি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
অনেকের মতে, বিদেশ থেকে ভাইরাস বহন করে এনে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে প্রবাসীরা দেশে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছেন। প্রবাসীরা নিজের পরিবারের মধ্যেই রোগ ছড়াচ্ছেন। কোয়ারেন্টাইনের নামে বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। ভাইরাস ছড়িয়েছেন। মৌলভীবাজারে কোয়ারেন্টাইনে থাকা একজন প্রবাসী দুই দিন আগে বিয়ে করে ফেলেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকে আবার ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। মানিকগঞ্জে এরকম একজনকে জরিমানা করেছে প্রশাসন। আবার যারা সুস্পষ্ট লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন রোগীও তো দেখা যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার সন্দেহভাজন এক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন। এসব কারণে দিন যতো যাচ্ছে প্রবাসীদের দ্বারা করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও ততোই বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ