Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলায় আমার মেয়ে মারা গেছে

ঢামেকে করোনা সন্দেহে কানাডাফেরত শিক্ষার্থীর বাবার অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

কানাডাফেরত ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নাজমা আমিন। ১০ মাস আগে কানাডা গিয়েছিলেন গ্রাজুয়েশন করতে। সম্প্রতি দেশে ফিরে পেটের ব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। তবে ব্যথা থেকে মুক্ত তো হতে পারেননি; লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও অবহেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। গত শনিবার ঢামেকে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থী নাজমা আমিনের বাবা আমিন উল্লাহ সাংবাদিকদের বললেন, আমার মেয়ে কানাডাফেরত শুনেই তিন-চারজন ডিউটিরত নার্স ‘করোনা করোনা’ বলে আওয়াজ তোলেন। ওয়ার্ডে শুরু হয় ছোটাছুটি। তার করোনা টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট আসার আগে কেউ তার সামনে আসেনি। আমার সামনে মেয়েটার জান গেছে দুপুর ১টায়। বিকেল ৫টায় যখন আইইডিসিআরের রিপোর্টে তার করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়, তখন তার লাশ আমাদের দেয়া হয়। চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আমিন উল্লাহ আরো বলেন, শনিবার ১৪ মার্চ ভোর ৬টায় ঢামেকে আনা হয় নাজমাকে। সার্জারি বিভাগের ২১৯ নম্বর ওয়ার্ডে অধ্যাপক ডা. এ বি এম জামালের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। ঢামেকে নেয়ার পর তাকে স্যালাইন-অক্সিজেন দেয়া হয়। নাকে পাইপ দিয়ে পেটের ময়লা বের করা হয়। ১২টার সময় তার পেট ব্যথাটাও কিছুটা কমে। ১২টার পর ওয়ার্ডের নার্সদের শিফট পরিবর্তন হয়। নতুন শিফটের ডিউটিরত ডাক্তার-নার্সরা এসে আমার মেয়ের কাছে সমস্যা ও রোগের বিষয়ে জানতে চান। আমার মেয়ে প্রথমেই বলে যে, সে কানাডা থেকে এসেছে ৯ মার্চ। এই শুনেই নার্সরা দূরে চলে যান। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ‘করোনা করোনা’ গুঞ্জন করতে থাকেন। তারা একে অন্যকে বলতে থাকেন, ‘বিদেশ থেকে আসছে, সেহেতু করোনা হয়েছে’। এরপর থেকে আমার মেয়েকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে আইইডিসিআর থেকে এসে আমার মেয়ের লালাসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে আমার মেয়ের শরীর খারাপ হতে থাকে। কেউ তাকে দেখতে সামনেও আসেনি। আমার সামনেই মেয়েটার জান চলে গেল। কেউ আসেনি কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন আমিন উল্লাহ।
দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত স্টাফদের ভাইরাস প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল না। তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন হয়তো রোগীর সংস্পর্শে আসলে করোনা ভাইরাসে নিজেরাও আক্রান্ত হবেন। এছাড়া কোনও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট ছিল না এবং এমনকি তার শরীরে ভাইরাস রয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে পারেনি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • অয়ন্ত ইমরুল ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৩ এএম says : 0
    এই দেশে মহামারি আকার ধারণ করলে বিনা চিকিৎসায়ই হাজার হাজার মারা যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mou Modhubontee ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
    বড়ই দুঃখজনক। কাউকেই দায়ী করা কঠিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Linu Farzana ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
    উফ, কি মর্মান্তিক।
    Total Reply(0) Reply
  • Bithi Khan ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৫ এএম says : 0
    আমাদের দেশের ডাক্তারেরা রোগী মারা যাওয়ার পর রোগ ধরতে পারে,,, তার আগে বলে রোগী ভালো আছে ঠিক হয়ে যাবে, সুস্থ হয়ে যাবে, কোন চিন্তা করবেন না, তারপর মৃত্যুশয্যায় রোগী যখন আর বাঁচাতে পারে না তখন বলে সরি,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful Alom Talukdar ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৫ এএম says : 0
    খুবই দুঃখ জনক, আমাদের দেশে ডাক্তার রা রোগী দেরকে গুরুত্ব দেননা। তার পর ভালো চিকিৎসা ও পাওয়া যায় না। ডাক্তার দের অবহেলায় অনেক রোগী মারা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Wahedulislam Nilu ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৫ এএম says : 0
    আমার মনে হয় ইচ্ছা করেই মেরে ফেলেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmudul H Rakib ১৭ মার্চ, ২০২০, ৫:২৬ এএম says : 0
    এতেই বুঝা যায় আমরা কতটা প্রস্তুত।
    Total Reply(0) Reply
  • Jhunnu ১৭ মার্চ, ২০২০, ৭:৫২ এএম says : 0
    This is bangladesh we are very famous for our service
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৭ মার্চ, ২০২০, ৯:৩১ এএম says : 0
    তাহলে এখন বিদেশ ফেরত সবাই পরিচয় গোপন করে চিকিৎসা নিতে চাইবেন এবং এতে করোনা সনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • সজীব ১৭ মার্চ, ২০২০, ১১:৫৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ বোনটিকে জান্নাত দান করুন।এছাড়া আর কাউকে কিছু বলার নেই। ডাক্তার বা নার্স ভয়ে তার কাছে যাননি।তাদের ভয় পাওয়াটাও স্বাভাবিক।আগুন নেভাতে পানির দরকার হবেই। যদি সঠিক প্রস্তুতি সব জায়গায় থাকত তাহলে হয়ত এই ঘটনা হতনা।প্রস্তুতি শুধু মন্ত্রীদের মুখে আছে।বাস্তবতা সবার সামনে।সরকার এখন পর্যন্ত কয়টা হাসপাতালে শুধু মাস্ক দিতে পেরেছে ? বাকি সরঞ্জামগুলোর কথা নাই বললাম। করোনা আক্রান্তের সামনে কি ধরনের নিরাপত্তা নিয়ে যেতে হয় সেটা সবাই দেখছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসক

১৩ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ