পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বজুড়ে মহামারী ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত বছরের শেষ দিনে চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়ার পর বিগত আড়াই মাসেই বিশ্বজুড়ে মহামারি রূপ নিয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। অদৃশ্য শত্রুর বেপরোয়া হামলার মুখে অসহায় বিশ্ব। অণুজীব ঘাতকের হামলা ঠেকাতে দিকে দিকে উঠেছে সতর্কতার আহ্বান, প্রাণান্ত প্রস্তুতি। কিন্তু এসব তৎপরতায় কাজের অগ্রগতি বা ফল মিলছে সামান্যই। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গন, শিক্ষা ও জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষভাবে আক্রান্ত দেশগুলো ছাড়াও পরস্পরের অবরোধের আওতায় পড়ে গেছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ। আক্রান্ত দেশগুলো তাদের বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। পার্শ্ববতী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল-কলেজ, শ্রীলঙ্কার সব স্কুল-কলেজ বন্ধু করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৫ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা ভালো। দু’জনের চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া করোনা সন্দেহে ৯ জন আইসোলেশনে ও চারজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। অপরদিকে সারাদেশে ২ হাজার ৩১৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। তারপরও দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর। অধিকাংশ অভিভাবকই উদ্বিগ্ন তাদের সন্তানদের নিয়ে। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার এখতিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। আমরা তাদের সব ধরণের ঝুঁকির কথা বলেছি। এখন তাদের উপর নির্ভর করছে বিষয়টি।
এদিকে ইতালি ও জার্মানী ফেরতদের নিয়ে বিপাকে পুরো বাংলাদেশ। কারণ করোনা সংক্রমণে বর্তমানে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইতালি। এরপর পার্শ্ববর্তী জার্মানি। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত যে ৫ রোগী পাওয়া গেছে তাদের ৩ জনই ইতালি ফেরত। ১ জন জার্মানি ফেরত। আর অন্যজন ইতালি ফেরতদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতালী থেকে শনিবার ১৪২ প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফেরেন। গতকাল রোববার ইতালি থেকে আরও ১৫৫ জন ফিরেছেন। শনিবার ফেরত ১৪২ প্রবাসী বাংলাদেশিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত শনিবারই ছড়িয়ে পড়েছেন।
এ অবস্থায় দেশব্যাপী করোনা নিয়ে বেশি ভয় জাগাচ্ছে ইতালিফেরতরাই। এদেরকে নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো দেশ। সংক্রমণে বিপর্যস্ত ইতালি থেকে এসব ব্যক্তিকে দেশে আসার সুযোগ দেওয়ায় অনেকে সরকারের সমালোচনা করেছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইতালি থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। দুই দেশের বিমানবন্দরে পরীক্ষায় তাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি। কিন্তু দেশে এসে তারা আক্রান্ত হন। এ অবস্থায় ইতালি থেকে এভাবে আসার সুযোগ দিলে সারাদেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং ইতালিফেরতদের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার মান ও সারাদেশে বিদেশগামীরা ছড়িয়ে পড়ায় মহামারী আকারে করোনা দেখা দিলে সরকারের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে সরকার মূলত উভয় সংকটে পড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের অন্য মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কিন্তু বারবার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আপাতত না আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন; কিন্তু তাদের আসার পথটি বন্ধ করেননি। অনেক দেশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও বাংলাদেশ সে পথে হাঁটেনি। এ সুযোগ নিয়ে সংক্রমিত দেশ থেকে প্রবাসীরা নিরাপদ স্থান ভেবে বাংলাদেশে চলে আসছেন।
তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যারা দেশে এসেছেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রেখে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এ সময়ে কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মোটকথা, স্বাস্থ্য বিভাগকে বিষয়টি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪৬ জনে। ওয়ার্ল্ডওমিটার্সের তথ্যানুসারে, সারা বিশ্বে শনিবার পর্যন্ত এ রোগে বিশ্বব্যাপী ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৫ হাজার ৯৩৬ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এদিকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্র ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর জানিয়েছে, নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে সারাদেশে ২ হাজার ৪৭১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। যাদের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। যাতে তারা বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়াতে না পারে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত নতুন রোগী দু’জনেই পুরুষ। একজনের ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই দু’জনেই বর্তমানে ভাল আছেন। শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ২৭৫ জনকে বিমানবন্দর থেকে আশকোন হজক্যাম্পে গাজীপুরের পূবাইলে কোয়ারেন্টিনে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যাদের শীরের লক্ষণ নেই তাদের ছড়ে দেয়া হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারনে গতকাল রোববার ১৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে ইতালি ফেরতদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রোববারের পরে দেশে কোন যাত্রীবাহি বিমান না আসলে হজক্যাম্প থেকে সোনবাহিনী সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
সুত্র মতে, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ৪১৭ জনকে বিমানবন্দর থেকে আশকোন হজক্যাম্পে গাজীপুরের পূবাইলে রেখে শরীরে করোনাভাইরাসে লক্ষ্যন রয়েছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে শনিবার ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনের শরীকে কোন লক্ষণ না থাকায় তাদের নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। বাকীদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিজ বাড়িতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে নানা পরামর্শ দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সচিবালয়ে তিনি এ তথ্য জানান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্যাদারিং হয়, সে বিষয়ে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন। তাদের আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। আরেকটু বলেছি আজকে স্কুল ছুটি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা যে টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করে সেগুলো মুছে পরিষ্কার রাখেন। জীবাণুমুক্ত করে রাখেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন করছে না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ক্লোজ ডোর আলোচনা হয়েছে। আপনারা অবজার্ভ করেন। এ সিদ্ধান্ত তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রহণ করবে। নিরাপত্তাজনিত যা যা বিষয় রয়েছে আমরা আজকেও তাদের অবহিত করেছি। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে চাই। সেজন্য কাজ করছি। আমরা কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারব না। একই সঙ্গে এই সময়ে জ্বর নিয়ে যানবাহনে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়লে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েকে ইজতেমা ময়দান প্রস্তুত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর চারটি হাসপাতালসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে।
এদিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিদেশ থেকে ফেরা ২ হাজার ৩১৪ জন দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজ বাড়িতে ‘কোয়ারেন্টিনে’ আছেন বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচারক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ‘আইসোলশনে’ আছেন ১০ জন। চারজন হাসপাতালে ‘কোয়ারেন্টিনে’ আছেন। জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে এজন্য হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যাটি আগে জানানো হত না। মানুষের মধ্যে যেন উদ্বেগ তৈরি না হয়, সেজন্যই আমরা সেটা বলতে চাইনি। আমাদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংখ্যাটি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমাদের সিভিল সার্জনরা এ তথ্য দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ৩ হাজার ৭০৬টি কল এসেছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৭১টি কল নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত। এখন পর্যন্ত মোট ২৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
বিমানবন্দরে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণে অব্যবস্থাপনা
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ঝুঁকির মুখে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এমন অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। সরেজমিনে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে, দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে বাধ্যতামূলক ‘হেলথ ডিক্লারেশন’ ফরম পূরণ ও স্ক্যান করা নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রধান বিমানবন্দরসহ আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে থার্মাল ও হ্যান্ডহেল স্ক্যানার ছাড়াও হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক। এর মধ্যেমেই যাত্রীর ভ্রমণসহ নানা তথ্য জানা যায়। উদ্বেগের বিষয় হলো, হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণেও রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা।
শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, আমরা এয়ারলাইনসগুলোকে পর্যাপ্ত ফরম দিয়ে রেখেছি। এগুলো উড়োজাহাজে বসেই পূরণ করার কথা। যাত্রীরা শুধু পূরণ করা ফরম আমাদের হেলথ ডেস্কে জমা দেবেন। আর ফরমে উল্লেখ করা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু আমরা দেখছি কোনো কোনো যাত্রী ফরম পূরণ করে আনেননি। কেউ কেউ আবার ফরমই নিয়ে আসেননি।
মানসম্পন্ন নয় কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা
গত শনিবার ইতালি ফেরত বাংলাদেশি ১৪২ জনকে আশকোনা হজক্যাম্প কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। কোয়ারেন্টাইনের অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশির মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও আনসারের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি ‘কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা’র কারণে তারা বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি ছিল, সকালে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হলেও দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পৌঁছেননি। এমনকি তাদের কোনো খাবারও সরবরাহ করা হয়নি। তারা বলছেন, তাদের জ্বর বা কাশির মতো কোনো লক্ষণ নেই। অনেকের আত্মীয় স্বজন খাবার নিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছেন, অথচ এটা দেখার কেউ নেই বলেও তারা অভিযোগ করছেন।একই সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে একসঙ্গে সবাইকে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
এর আগেও ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে উহান ফেরত ৩০২ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ওই সময়েই কোয়ারেন্টাইন মানসম্পন্ন নয় বলে অভিযোগ উঠে। চারটি কক্ষে একসঙ্গে তাদের রাখা হয়। তারা একই টয়লেট ব্যবহার করেছেন। একই সঙ্গে খাবার খাচ্ছেন। কিন্তু এরপরও দীর্ঘদিনেও হজ ক্যাম্প কোয়ারেন্টাইনের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে এ ব্যবস্থা মোটেই উপযুক্ত নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের এক প্রফেসর ইনকিলাবকে বলেন, আমেরিকার ২০টি বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে। এমনকি কোনো পশু-পাখি বিমানযোগে গেলেও তাদের সেখানে রাখা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই সে দেশে প্রবেশ করতে পারে। তিনি বলেন, কোয়ারেন্টাইনে সর্বোচ্চ চার থেকে ছয়জনকে একসঙ্গে রাখা যেতে পারে। এর বেশি হলে সেটা আর কোয়ারেন্টাইন থাকে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশ ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। ৫ জন রোগী পাওয়া গেছে। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে ইতালি, জার্মানীসহ আক্রান্ত অন্যান্য দেশ থেকে এত মানুষকে এই মুহুর্তে দেশে আনা উচিত হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ তাদের লোক ফিরিয়ে নিয়ে নির্জন দ্বীপে স্থানান্তর করেছে। সেখানে আমাদের দেশ তো অনেক জনবহুল। এই প্রফেসর বলেন, এ ধরনের একটি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উচিত ছিল আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে এপিডেমিওলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট, এনভারনেমেন্টালিষ্ট, মেডিসিন স্পেশালিস্টের সমন্বয়ে একটি টিম করে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। কিন্তু এ ধরনের কোনো সমন্বিত কর্মপরিকল্পনাই গৃহীত হয়নি। তাছাড়া তারা একই টয়লেট ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে খাবার খাচ্ছে। যা কোয়ারেন্টাইনের স্বাভাবিক পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে। ঢাকার মতো শহরে এ ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রপেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, আমরা যে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা করেছি, সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করেই এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ আমেরিকা বা ইউরোপের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা আর আমাদের ব্যবস্থা এক হবে না।
নিষ্ঠার সাথে স্বেচ্ছা গৃহ কোয়ারেন্টিন মেনে চলার আহ্বান : স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ ফেরত আসা কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী স্বেচ্ছা গৃহ কোয়ারেন্টিন পালন করছেন না। তারা মনে করেন, তারা কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশে গত ১৪ দিনের মধ্যে ছিলেন। এমনকি তারা সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোভিড-১৯ মুক্ত প্রমাণিত হলেও এর পর যে কোন সময় সে দেশে থাককালীন বা বিমানে-ট্রানজিটে অবস্থানকালে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমতি হতে পারেন, হয়তো এখনো লক্ষণ প্রকাশ পায় নি। তাই দেশে ফেরার পর মোট ১৪ দিন পর্যন্ত তিনি অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকবেন। এ সুপ্তিকালে তার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রকাশিত হতে পারে। আক্রান্ত এলাকা থেকে আগত সবাইকে নিজের, সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবারের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ১৪ দিনের জন্য কষ্ট স্বীকার করে স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টিন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
হাসপাতাল থেকে প্রবাসীর পলায়ন : নতুন করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না সেই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতির মধ্যে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে এক প্রবাসী পালিয়েছেন। বাহরাইন প্রবাসী ওই ব্যক্তি জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সকালে তার বিষয়ে করণীয় নিয়ে চিকিৎসকদের বৈঠকের সময় ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি পালিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা তার বিষয়ে করণীয় নিয়ে সভা করছিলাম। বিষয়টি স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং আইইডিসিআরের পরিচালককেও জানাই। আইইডিসিআরের পরিচালক রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য তার টিম পাঠান। এরমধ্যে ওই রোগী পালিয়ে যায়। এর আগে গত ১০ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না পরীক্ষা করতে বলায় সিলেটে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সউদী আরব প্রবাসী এক নারী পালিয়ে যান।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতরাতে ৭০ বছর বয়সী ওই নারীকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই বৃদ্ধার ছেলে ২০ দিন আগে বিদেশ থেকে বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
ওই বৃদ্ধার নাতি বলেন, দাদি ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ। তার কাশিও রয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা বলেছেন, তার ফুসফুসে পানি জমেছে। তাই গত শনিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে পাঠান। সেখান থেকে গতকাল সন্ধ্যায় তাকে জরুরি বিভাগের গেটের পাশে অস্থায়ী আইসোলেশন কক্ষে নেয়া হয়। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসা ইতালিফেরত আরও ছয়জনকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ২৭ জন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রামে এখনও পর্যন্ত কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। তার আগে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে বিভিন্ন দেশে থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, চীন,মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে নীলফামারী জেলায় ফেরত আসা আরো ৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের দেহে করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রনজিত কুমার বর্মন এ তথ্য করেন।
পাথরঘাটা (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় লেবানন ফেরত এক প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রবিবার সকাল ৭টা থেকে ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক দুই জন স্বাস্থ্য সহকারি ২৪ ঘন্টা নজরদারির জন্য তার বাড়িতে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। বরগুনার সিভিল সার্জন সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সখিপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সখিপুরে ইতালি ফেরত এক প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সুবহান বলেন, ওই ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তারপরও সতর্কতার জন্যে তাকে অন্তত ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শরণখোলায় রোববার সকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আ. আউয়াল হাওলাদার (৬৪) নামের এক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভর্তি হয়েছেন। তাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। আ. আউয়াল ১১ দিন আগে ভারত থেকে গোপনে বাড়ি ফিরে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, সকালে মৃত রশিদ হাওলাদারে পুত্র আ. আউয়াল হাওলাদার জর, সর্দি-কাশি ও গলা ব্যাথাসহ করোনায় আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ হয় তাদের। পরে তারা হট লাইনে মহাখালির রোগত্বত্ত নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে আ. আউয়ালকে আইসোলেশন সেন্টারে রাখার পরামর্শ দেন। আইসোলেশনে তাকে আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে ঢাকায় পাঠানো হতে পারে বলে তিনি জানান।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ভারত ফেরত ৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশী নাগরিক। তারা সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান জানান, সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে খবর পেয়ে গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ জন ভারত ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।