Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অধরা সিটি গভর্নমেন্ট

সমন্বয়হীন সেবাদাতা সংস্থাগুলো অসমাপ্ত ‘লড়াই’য়ের মিলেনি সমাধান

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

আজও অধরা রয়ে গেলো বহুল আলোচিত ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ পদ্ধতি। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নাগরিক সেবা প্রদানকারী সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে কার্যকরী সমন্বয়ের আওতায় নিয়ে আসাই ছিল ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ছাড়াও সবক’টি সিটির মেয়রের নেতৃত্বে কাউন্সিলরদের বিধিবদ্ধ পর্ষদ মিলিতভাবে নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও বিভাগগুলোকে নিয়ে আসবে একই ছাতার নিচে। চট্টলবীর মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নির্বাচিত চসিক মেয়র পদে ১৭ বছরের মেয়াদকালে সেই অসমাপ্ত ‘লড়াই’য়ের আসেনি সমাধান এখন অবধি।

এতে করে সিটি কর্পোরেশনগুলোতে নাগরিক ‘সেবা’র নামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরিকল্পিত, সমন্বয়হীন, এলোপাতাড়ি ও শীর্ষকর্তাদের যার যার খেয়াল-খুশিমাফিক ‘উন্নয়ন’ কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব প্রকট। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটছে প্রতি পদে পদে। হচ্ছে সময়ক্ষেপণ হয়রানি। যার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ নাগরিকগণ। অথচ সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি বিভাগ আর সংস্থাগুলোর গা-ছাড়া ভাব।

অন্যদিকে রাজনৈতিক ও নাগরিক মহল এখনো জোরালো আশাবাদী, সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালু ও সমন্বয় থাকলে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। বাড়বে সেবার মান। কেননা বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মতো দুই প্রধান নগরী ও এর শহরতলীগুলোতে জনসংখ্যা দুই থেকে আড়াই কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
সিটি গভর্নমেন্ট ধারণায় বলা হয়, মহানগরীর বাসিন্দাদের জন্য জরুরি সেবা-পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও পানি সরবরাহে (ওয়াসা), ভূমি ও আবাসনে রাজউক-সিডিএ, গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে, বন বিভাগ, স্বাস্থ্য দফতর, পরিবার কল্যাণ বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসমূহ, গণপূর্ত ও গৃহায়ন, পরিবেশ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, টেলিযোগাযোগ সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, আনসার, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ, বিএসটিআই, পর্যটন সংস্থা, শিপিং ও নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর, তথ্য অধিদপ্তর, আমদানি-রফতানি, শিল্প বিনিয়োগ বিভাগ, শ্রম দপ্তর, ইপিজেডসমূহ এবং ব্যবসায়ী-শিল্পোক্তাদের সংগঠন-সমিতির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য এনজিওগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমে সুষ্ঠু সমন্বয় এবং পরস্পর জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

তাছাড়া নগরসমূহে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা থাকলে এর মধ্যদিয়ে দক্ষ ও উন্নত মানবসম্পদের বিকাশ, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ, সম্প্রীতি উজ্জীবিত করা, সুস্থ বিনোদন, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদরাজির সদ্ব্যবহার, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও মাদক আগ্রাসন রোধ, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার ও বৈশি^ক সুনাম অর্জন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি, সমুদ্রবন্দর সম্পদের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বিশ্বমানের শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ইত্যাদি স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়।

সময়ের প্রয়োজনে এ দাবি পূরণে সচেতন নাগরিকবৃন্দ, প্রতিনিধিত্বশীল ও পেশাজীবী মহলের তরফ থেকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। সিটি গভর্নমেন্ট ধারণার বাস্তব রূপায়ন হয়নি। অথচ উন্নত ও মধ্যআয়ের অনেক দেশেই আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এরফলে নাগরিকগণ সেবায় আশ্বস্ত হচ্ছেন, মিলছে নানামুখী সুফল। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৪ সালের মার্চে চসিকের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে ধারণা ও দাবিনামা সরকারের কাছে তুলে ধরেন। এরপর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭ বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা সিটি মেয়র মরহুম মোহাম্মদ হানিফ, সিলেটের মেয়র বদরুদ্দীন মো. কামরানসহ সরকারি নীতি-নির্ধারক অনেকেরই কাছে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু আমৃত্যু প্রচেষ্টা চালিয়েও সেই একটি সুন্দর স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী চেষ্টা করেছিলেন। তবে সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন আছে। বাস্তবায়ন হলে নাগরিকগণ কতটুকু লাভবান হবেন আমি জানি না। তবে জনগণের ওপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়বে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর যথাযথ উন্নয়নে সমন্বয়ের জন্য সিটি গভর্নমেন্ট পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। পৃথিবীর অনেক দেশের নগরগুলোতে তার সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। সবাই একযোগে কাজ করার বিষয়টিই এখানে আসছে। সরকার আসে, সরকার যায়। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজকর্ম জোরালো করতে হলে সিটি গভর্নমেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় থাকাটা দরকার।

সাবেক চসিক মেয়র ও সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, মহানগরীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে শুধুই রাস্তার লাইট জ্বালানো কিংবা লালা-নর্দমা পরিস্কার করার মধ্যেই মেয়রের কাজ সীমিত হতে পারেনা। এরজন্য এতো বিশাল বাজেটের ভোট করে কী লাভ? মেয়রকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। নগরীতে নাগরিকদের মাঝে সেবা প্রদানে নিয়োজিত সকল সংস্থা, বিভাগের সমন্বয় করেই কাজ চালাতে হবে মেয়রের নেতৃত্বে। মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি গভর্নমেন্ট ধারণার বাস্তবায়নের জন্য আমার কাছে, মেয়র মো. হানিফের কাছে গিয়েও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি জানান, স্বৈরাচারী বললেও জাতীয় পার্টির আমলে ম্যানুয়েল অনুসারে সিটি গভর্মেন্ট প্রচলিত ছিল। সরকারি সেবা সংস্থাগুলো তখন মেয়রের ডাকে ও নেতৃত্বে প্রতিমাসে নিয়মিত সভায় বসার বাধ্যবাধকতা চালু ছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেই তা বাতিল করে দিয়েছে। এখনও কার্যকর নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিতের জন্য সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার। এতে সবাই সুফল ভোগ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ