Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নিরাপদে বাঁচতে দিন ছেলেমেয়েদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ কমছেনা শিক্ষার্থী-অভিভাবদের মধ্যে। সাময়িকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি উঠছে সর্বত্রই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিনই উদ্বেগ জানাচ্ছেন তারা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্ব যাদের সেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায় চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। অথচ গতকালই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাদের পরামর্শ যতটুকু দেয়ার দিয়েছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। অথচ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, যদি কখনো এমন অবস্থা দেখা যায় যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে প্রয়োজন হলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করার মতো কোনো কারণ তৈরি হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রী কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কারো কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না শিক্ষার্থী-অভিভাবকর। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর তা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে কি অবস্থা হবে তা নিয়েই তাদের শঙ্কা। করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে তারা মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য। অথচ শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। সেখানে তারা প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের মুখোমুখি হচ্ছে, একে অপরের সাথে মিশছে, একই বাথরুম, টেবিল, চেয়ারসহ আসবাবপত্র ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় কোন একজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে কি অবস্থা হবে?

শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে সাইফুর রহমান হৃদয় লিখেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাবেশ কেন্দ্রীক কোন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, জনসমাবেশ হয় এমন স্থান এড়িয়ে চলতে। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়গণ কী জানেন না? প্রতিদিন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে অ্যাসেম্বলি হয়। তার প্রতিটি এক একটি জনসমাবেশ। গ্রামের স্কুলগুলোতে এক ব্যাঞ্চে ৫-৬ জন করে, একই ক্লাসে ৭০-৮০ জন স্টুডেন্ট একত্রে বসাটা এক একটি জনসমাবেশের চাইতেও ভয়ানক! তবে শিক্ষার্থীরা কী করোনা সংক্রামন ঝুঁকিতে নেই? তিনি বলেন, প্রতি দশ মিনিট পর পর হাত ধোঁয়ার পরামর্শ থাকলেও স্কুলে একটি বিষয় শেষ হতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট। কোন কোন স্কুলে লেইজারের আগে ক্লাস থেকে বের হওয়ারই কোন নিয়ম নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ঘোষিত মহামারি করোনা প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুত কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত তো?

আকরামুল হক লিখেছেন, বুঝলাম আপনারা বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর নির্ভর করছেন। তা যেন ১৭ তারিখের উপর নির্ভর করে না হয়। কারণ আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরাতো আপনাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকার সিদ্ধান্ত সরকার নিক। আমি আমার সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।

নাজমুল হাসান চৌধুরী লিখেছেন, পরিস্থিতি এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে ঠিক বলেছেন। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, সকল অভিভাবক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে। বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি, সকল অভিভাবকদের উদ্বেগ- উৎকন্ঠা দূর করতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন।
নাজমুল হাসান রনি লিখেছনে, এদেশে জীবনের দাম নাই, কয়েকজন মরবে,কয়েকজন আক্রান্ত হবে, তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য মিটিং হবে, আর ততক্ষণে সবাই ঝুঁকিতে থাকবে। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে আর ছাত্রদের পরিবার ও পাশে থাকা মানুষগুলো আক্রান্ত হয়ে পড়বে। হুমায়ুন কবির লিখেছেন, আপনারা মনে হয় অতিরিক্ত ঝুকি নিচ্ছেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। ইটালি, আমেরিকার মত দেশে কোন ভাবে সামাল দিতে পারছেন না। আর বাংলাদেশ সেই ক্ষেত্রে বেশি সাহস দেখাচ্ছে বলে মনে হয়। দয়াকরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিন। আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে নিরাপদে বাঁচতে দিন।

আলী হায়দার লিখেছেন, বলা হচ্ছে গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে কিন্তু শহরের বেশিরভাগ বাচ্চাকেই তো তাদের বাবা-মা গণপরিবহনে আনা নেয়া করতে হয়, এছাড়া স্কুলের জমায়েততো আছেই। অনতিবিলম্বে স্কুল - কলেজ বন্ধ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। একবার বিপদ এসে গেলে আমরা কেউ আর রক্ষা পাবো না।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের এখানে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সংক্রমণই নেই। বিদেশ থেকে সংক্রমণ বয়ে নিয়ে আসা সেটি আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। সমস্ত জায়গায় খুব ভালো ব্যবস্থাও করা হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোও বন্ধ আছে। আর বিমানবন্দরগুলোতেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং যারা আসছেন তাদের ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তো আমরা আশা করছি দেশের বাইরে থেকে সংক্রমণ আসাটাও বন্ধ হবে।
তিনি বলেন, যদি কখনো এমন অবস্থা দেখা যায় যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যদি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করার মতো কোনো কারণ তৈরি হয়নি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেছেন, এ বিষয়ে ক্লোজ ডোর আলোচনা হয়েছে। আপনারা অবজার্ভ করেন। এ সিদ্ধান্ত তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রহণ করবে। নিরাপত্তাজনিত যা যা বিষয় রয়েছে আমরা আজকেও তাদের অবহিত করেছি। সভা-সমাবেশে এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে - কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখছেন- এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে আমরা বলছি না, আমরা সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না খোলা রাখবে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমাদের পরামর্শ যতটুকু যা দেয়ার সেটা আমরা দিয়েছি। এটুকু আপনারা আস্থায় রাখেন।



 

Show all comments
  • নূরুল্লাহ ১৬ মার্চ, ২০২০, ৪:১৯ পিএম says : 0
    তওবা করুন সকলে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ কথাটা বিভ্রান্তিকর। সরকার কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? ঝড়, দুর্যোগ মহামারি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য আমরা চাই, তাই পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ