পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন কোনো করোনা রোগি সনাক্ত না হলেও সন্দেহভাজন অনেকেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই সতর্ক করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কোনো উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের যে সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে সেগুলো দু’একটিতে সতর্কীকরণ পোস্টার লাগানো হলেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কিছুই করা হয়নি। অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশে চলছে সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসা সেবা।
এদিকে, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ অবস্থায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গু আর করোনার প্রাদুর্ভাব একসাথে চললে পরিস্থিতি হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ কম হতে পারে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে গত বছরের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
শুধু দুই সিটি কর্পোরেশন নয়, করোনা মোকাবিলায় দেশের লাখ লাখ মসজিদে দোয়ার পাশাপাশি যেভাবে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হচ্ছে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তার বালাই নেই। স্কুল কলেজে সচেতনতার চেয়ে এখন আতঙ্কই বেশি। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ গণপরিবহনে ব্যক্তিগত উদ্যোগের বাইরে সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো প্রস্তুতি নেই। এমতবস্থায় কোনোভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তা ছড়িয়ে পড়বে খুবই দ্রুতগতিতে।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজারস্থ ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশ পথের গেটের দু’পাশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় দুটি পোস্টার সাঁটানো আছে। হাসপাতালে ভেতরে প্রবেশ করেই অভ্যর্থনা কক্ষেও এই ধরনের আরো দুটি পোস্টার লাগানো। তবে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষে কোনো রোগী বা কর্মব্যরত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। সরেজমিন দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে ১৬টি সিট রয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মাত্র ৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়াও সার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। সেখানে ১৮টি বেড থাকলে রোগী আছেন ১১ জন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বংশাল এলাকার বাসিন্দা আশিক উদ্দিন। তিনি জানান, চারদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে এখন অনেকটা সুস্থ রয়েছেন। দুই একদিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাবেন বলে আশাবাদি তিনি। তিনি বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছিল। তবে হাসপাতালে আসার পর সেই আতঙ্ক চলে গেছে।
দোলা মিয়া নামের আরেক রোগী জানান, তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে গত এক মাস থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এখন অনেকটা সুস্থ রয়েছেন। তিনিও বংশাল এলাকার বাসিন্দা।
বাবু বাজারের শাহিদা আক্তার নামের এক রোগী জানান, টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এক মাস থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আর কত দিন থাকবেন তা এখনো বলতে পারছেন না।
কদমতলী থানার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম জানান, গত ১০ দিন থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে আসেন।
এছাড়াও সার্জারি ওয়ার্ডে ১৩ দিন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সুমাইয়া আক্তার নামের এক নারী। তিনি জানান, কয়েক দিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখনো তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। তবে আগের চেয়ে এখন জ্বর অনেকটা কমেছে। করোনার খবর শোনার পর তার মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তবে জ্বর কমে যাওয়াতে ওই আতঙ্কটা কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
প্রমিলা মজুমদার নামের দায়িত্বরত এক নার্স বলেন, এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে আসেন নাই। তবে রোগী আসলে তাদের জন্য আলাদা একটি কক্ষ প্রস্তুত করে রাখা আছে। তবে রোগী না থাকায় সেই কক্ষ তালা দেয়া রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিচালিত নাজিরাবাজারস্থ ৩১ শয্যার মহানগর মাতৃসদন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওই হাসপাতালে কোনো রোগী নেই। কয়েকজন শ্রমিক সিঁড়ি পরিস্কার করছেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কক্ষ ঘুরেও কোনো রোগী, নার্স বা ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও দুপুরে রাজধানীর মগবাজারস্থ ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশ পথেই একটি ব্যানার সাঁটানো। ওই ব্যানারে করোনাভাইরাসে কিছু সতর্কীকরণ বার্তা দেয়া আছে। সেখানে লেখা আছে, ‘যে সকল রোগীরা জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন তারা নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীর সুরক্ষার জন্য অনুগ্রহপূর্বক মাস্ক ব্যবহার করুন।’
পরবর্তীতে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েও জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগী বেশি দেখা গেছে। তবে অন্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেক কম। অনেক ওয়ার্ডেই সিট খালি। হাসপাতালের মেডিসিন মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি সিটে রোগী আছেন। আর বেশিরভাগ সিট ফাঁকা আছে। কোনো রোগী নেই। ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর ডেমরা এলাকার এক রোগী। সাথে রয়েছেন তার নাতী হিরা মিয়া। তিনি জানান, ১০ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার নানী হাসপাতালে আসেন। তবে হাসপাতালে প্রথম ভর্তি হওয়ার সময় ওয়ার্ডে অনেক রোগী ছিলো। গত দুই দিন থেকে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরী হয়। এই ভয় থেকে অনেকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য কথা-বার্তা বলেছিলেন। তবে আসলে তারা কি কারণে হাসপাতাল ছেড়েছে তা আমি বলতে পারব না।
করোনাভাইস সম্পর্কে জানতে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিসে যান ওই প্রতিবেদন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ব্যস্ত আছেন; এমন অজুহাতে অফিসে প্রবেশ করতে দেননি দায়িত্বরত আনসার সদস্য হরিশ। এদিকে, ঢাকা উত্তর করপোরেশনের কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাজধানীর কাওরানবাজারস্থ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আব্দুল হালিম কমিউনিটি সেন্টারের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সিটি করপোরেশন থেকে এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাস সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। অথচ করোনাভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরাও জনগণকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েই চলেছেন। শান্তিনগরের একজন বাসিন্দা বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে এতকিছু হচ্ছে অথচ আমাদের দুই মেয়র মনে হয় ঘুমিয়েই আছেন। তারা কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন এমনটা এখনও শুনিনি। অথচ সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের সেবার দায়িত্ব তাদেরই। বিশেষ করে কোনো মহামারীর সংক্রমণ ঠেকাতে তাদেরই মুুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা। এদিকে সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধির মধ্যে যেসব কাজের উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর বিভিন্ন ভাগ ও উপ-ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানতম হলো-জনস্বাস্থ্য। এতে উল্লেখ রয়েছে, কর্পোরেশন নগরীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দায়ী থাকবে এ সম্পর্কিত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার থাকলে সেটিও গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে আরো যেসব বিষয় রয়েছে তা হল, অস্বাস্থ্যকর ইমারতের ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ, আবর্জনা অপসারণ, সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ও পর্যাপ্ত পায়খানা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা করবে কর্পোরেশন। সিটি আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশন নগরীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দায়ী থাকবে। এ সম্পর্কিত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার থাকলে সেটিও গ্রহণ করতে হবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের মসজিদগুলো। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে মসজিদগুলোকে করোনা প্রতিরোধে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের পাশাপাশি ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করতে ইমাম সাহেবরা বিভিন্ন বয়ান করছেন। যা ইতোমধ্যে খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ও পরে ওজু করতে হবে ইত্যাদি বয়ানে সাধারণ মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। ধর্মমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় এসব সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানোসহ দেশজুড়ে বিতরণ করা হবে কয়েক লাখ লিফলেট। মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। গত ৯ মার্চ সোমবার এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের অধীনে তিন লাখ মসজিদ আছে, অনেক মাদ্রাসা আছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কমিটি আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব কর্মচারী-কর্মকর্তার মাধ্যমে দেশবাসীকে করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার লাগানো হচ্ছে। এ বিষয়ে যা যা প্রয়োজন, করণীয়, সবকিছু করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এই বিপদের সময় ধর্মীয় চেতনাবোধকে উপলব্ধি করানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে, করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ায় নগরবাসী নতুন আতঙ্কে ভুগছেন। গত বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত। বিগত বছরগুলোয় ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গেল বছর দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সামান্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছুটে যেতেন হাসপাতালে। হঠাৎ ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কিটের প্রচন্ড সংকট দেখা দেয়। সংকটের কারণে ১২০-১৫০ টাকার কিট বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। সুযোগ বুঝে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা ১৫০ টাকা মূল্যের একটি কিটের ব্যবহার করে ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি নিতে থাকেন ১০০০ থেকে ১৭০০ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু তা করার উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে যেন ডেঙ্গু ছড়াতে না পারে সে জন্য মশারি সরবরাহসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জানা গেছে, গত বছর প্রায় পৌনে ২ কোটি কিট আমদানির অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই পরিমাণ কিট আমদানি করেনি। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট, রিএজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমার পরীক্ষার কিট ইউরোপ, কোরিয়া ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। ইউরোপ ও কোরিয়া থেকে আনা কিটের মূল্য ৩২০-৩৫০ টাকা আর চীনা কিটের মূল্য ১৫০ টাকা। এ কারণে বেশিরভাগ কিট আমদানি হয় চীন থেকে। চলতি বছর করোনার কারণে চীন থেকে কিট আমদানির সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে বাজারের ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের মূল্য বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কয়েক লাখ কিট মজুদ আছে। চীন থেকে কিট আমদানি করা না হলেও কিটের কোনো সংকট হবে না। গত বছর আমদানি করা বিপুলসংখ্যক কিট রয়েছে গেছে। ডেঙ্গু টেস্টের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেটি এখনো বিদ্যমান। কোনো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার মূল্য প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছে। আমরা বাতিল করিনি। ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য কেউ বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বর ছড়ানোর জন্য দায়ী। এপ্রিল থেকে অক্টোবর এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু গেল বছর জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। ১ জানুয়ারি থেকে ২৬০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২২, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২, বিএসএমএমইউ ও পুলিশ হাসপাতালে ২ জন করে, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪, বিজিবি হাসপাতালে ৩, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন রয়েছেন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫৬ জনসহ রাজধানীর ১৯৮ জন রয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০, খুলনা বিভাগে ৮, বরিশাল বিভাগে ৩ ও রাজশাহী বিভাগের ১ জন রোগী রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) জমা পড়ে।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০ শতাংশ এলাকা ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় অতিরিক্ত মাত্রায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৮ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের এক হাজার বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। জরিপের এই তথ্যই বলছে, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর শঙ্কা ক্রমে বাড়লেও দুই সিটি কর্পোরেশনের তেমন কোনো উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। এ নিয়েই নগরবাসীর যতো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।