পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের কারণে একের পর এক দেশ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পরে এজন্য সর্বশেষ গতকাল শনিবার ভারতের পশ্চিম বাংলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত তিনজন সেরে গেলেও আতঙ্ক কাটছেনা সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যাদের সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছেন তারা রয়েছেন সবচেয়ে আতঙ্কিত অবস্থায়। প্রতিদিনই অভিভাবকরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। বন্ধের দাবিতে অভিভাবকদের সাথে সাথে শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব রয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন তাদের পক্ষ থেকে। তবে এখনো পর্যন্ত সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে জীবনের চেয়ে ক্লাস বড় নয়, এমন ঘোষণাতে গতকাল থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা সকল ক্লাস বর্জন করেছে। ফলে বন্ধ ঘোষণা না করলেও অঘোষিতভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে বুয়েট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। স্কুল-কলেজে সন্তানদের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক অভিভাক। ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতিতেই চলতে ক্লাস। অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েনি বলে কি তা বন্ধ করা যাবে না। আর একজন আক্রান্ত হওয়ার পর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে কত জনের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে সে চিন্তা কি দায়িত্বশীলরা করছেন। নাকি তারা অপেক্ষা করছেন কেউ একজন মরলে তারপর বন্ধ ঘোষণা করবে। আমরা এমনটাই চাচ্ছি কিনা? করেছেন সে প্রশ্নও।
অভিভাকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ঘোষণার পর থেকেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, একদিকে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য। অন্যদিকে আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সাধারণত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনসমাগম হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে সকলের সাথে মেলামেশা করছে, খেলাধুলা করছে, একে অপরের সংস্পর্শে আসছে, একই ক্লাসরুম, চেয়ার-টেবিল, বাথরুম ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় কিভাবে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে? নাকি আক্রান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার দাবি তুলছেন অভিভাবকসহ অনেকেই। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান ফেসবুকে লিখেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জনসমাগমের একটা ক্রিটিকাল পয়েন্ট। ইতালিতে ভয়াবহভাবে সংক্রমণ ঘটেছে করোনাভাইরাসের, যেখান থেকে ফিরেছেন অনেক প্রবাসী। এর মাঝেই আগামীকাল (আজ) স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বেরুবে বহু পরিবার। মৃত্যুর হার কম হলেও, বেশ সংক্রামক এই ভাইরাসটি। আর এটা ছড়িয়ে পড়াটা খুবই সহজ, হাঁচি কাশি, ছোঁয়ার মাধ্যমে, ব্যবহৃত জিনিসের মাধ্যমে। আবার অনেকে আছেন যারা উপসর্গ না দেখিয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন, বলে আমরা জানি, এদেরকে বলা হচ্ছে রিজারভয়ার বা অ্যাসিম্পটোম্যাটিক ক্যারিয়ার। ধরেন এয়ারপোর্টে কর্মরত ব্যক্তি এই ইতালি ফেরতদের প্রসেসিংয়ের কাজে ছিলেন, সে বাসায় গিয়ে একবার মাত্র হাঁচি দিলেন, এরপর থেকে ছড়ালো তার সন্তানদের যারা আগামীকাল ৬ ঘন্টা কাটাবেন নানা প্রান্ত থেকে আসা সহপাঠীদের সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের অনেকে যাবেন গণরুমে, এমন একটা রুম যেটা ্রসুনামগ্ধ রয়েছে সারাবছরই এরকম ফ্লু, চর্মরোগ ইত্যাদি ছড়ানোর কেন্দ্র হিসেবে। এভাবেই মহামারি আকার ধারণ করে একটা রোগ। মহামারি হয় নাই, তাই বলে বন্ধ ঘোষণা হবেনা, এরপর মহামারি হবে, একটা লাশ অন্তত পড়বে হেয়ালির কারণে এরপর আমরা সব বন্ধ করবো- এমনটাই কি চাচ্ছি আমরা?
তিনি লিখেন, পাশের পশ্চিমবঙ্গেও নোটিস এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের। এই ছুটি ঘোষণা করে কী ক্ষতি হবে, যদি কেউ বুঝিয়ে দিতেন ভাল হত। আর ভাইরাসটা এভাবে হেয়ালি করে ছড়িয়ে দিয়েই হবে বিশাল ক্ষতি, মানুষের অর্থনীতির আর যা কিছুর ক্ষতি আপনারা হিসাব করছেন। মুজিববর্ষ উদযাপনের হিসাব যদি হয়, তাহলে একদিকে জনগণের কথা ভেবে এটা বাতিল করা বা পেছানোতে জনগণ সন্তুষ্টই হবে। অন্যদিকে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর সাথে সাথে শিশু দিবসও, জনগণের কথা ভেবে দিবসের উদযাপন পেছানো হোক, করোনা প্রতিরোধ দিবসও হোক। নেতাকর্মী মিছিল মিটিং করে এসে তাদের বাড়ীর সন্তান আর বয়ষ্কদের অসুস্থ বানিয়ে দিলেন, এটাই কিন্তু হবে। অবশ্য নেতাকর্মীরা নিজেরা যে অসুস্থ হবে না এমন তো না। হাস্যকর শোনালেও করোনা ছড়ানো এতটাই সহজ।
ফেরদৌসী বেগম রিনা নামে এক অভিভাবক লিখেছেন, বলা হচ্ছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ হলে বিএনপি জামাত বলবে ্সরকার ব্যর্থ। তাছাড়া শিশু দিবসের আগে কিছই হবেনা। আজ (গতকাল) সাভারে আমার ল্যাবে গেলাম হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক। কোন ভ্রুক্ষপ নাই। শহরের রাস্তায় চলছে অবাধ খাওয়া-দাওয়া । শপিং মলগুলোতে কেনা-কাটা। সামনে আসছে ডেঙ্গু দুই মেয়রের কোন প্রস্তুতি নাই। চট্টগ্রাম আর ঢাকা-১০ আসনে চলছে ইলেকশন ক্যাম্পেইন জনসভা। সেলুকাস!
গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ইমরান এইচ সরকার বলেন, সরকারকে বলবো, তামাশা বন্ধ করে এখনি জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিন। এয়ারপোর্ট এবং সকল চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করুন। সারাদেশে রেপিড রেসপন্স টিম গঠন করুন। সারাবিশ্বের পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখুন। পরিস্থিতি এখন মোটেও আর হেলাফেলার পর্যায়ে নেই।
মোঃ আরিফুল ইসলাম লিখেছেন, করোনাভাইরাস দেশের ভেতরে একবার মহামারি আকার ধারন করলে তখন স্কুল কলেজ, বন্ধ করেও কাজ হবে না। মহামারী আকার ধারন করার আগেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
রাজধানীর উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থীর মামা আফরোজা খানম বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত! উন্নত বিশ্বে উন্নত চিকিৎসার এত সুব্যবস্থার পরও তারা করোনাভাইরাসের চিকিৎসাতো দূর, মৃত্যুও ঠেকাতে পারছে না! সেখানে বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দেবে, আল্লাহই জানেন! তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলে অন্তত আমরা আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা দিতে পারতাম। আব্দুর রশিদ নামে এক অভিভাবক বলেন, বলা হচ্ছে গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে। অথচ স্কুল কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে না। আমি মনে করি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখুনি বন্ধ ঘোষণা করা উচিত। সিটি কলেজের আরমান চৌধুরী নামে এক অভিভাবক বলেন, সবার মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে অবশ্যই স্কুল বন্ধ রাখা উচিত। বেঁচে থাকলে পড়াশোনা পরবর্তীতে চালিয়ে নেওয়া যাবে। রিয়াজ মাহমুদ স্কুল বন্ধ করার পক্ষে ফেইসবুকে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের ভেতরে কেউ আক্রান্ত হলে তখন বন্ধ করে কী লাভ, এখনই বন্ধ করা উচিত। শেখ মো. সুমন লিখেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই বন্ধ করলে পরিস্থিতি বেশি দূর গড়াবে না। পরিস্থিতি খারাপ হাওয়ার পর বন্ধ করলে কোনো লাভ হবে না।
সারাবিশ্বেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানেও। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, অন্তত ৩৩টি দেশ এ ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি দেশ গোটা রাষ্ট্রে এবং ১৬টি দেশ বিশেষ কোনো শহর, জেলা বা অঞ্চলে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ১৭টি দেশে পুরোপুরিভাবে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে ৩৬৩ মিলিয়নের বেশি শিক্ষার্থী। আরও ১৬টি দেশে বিশেষ শহর, জেলা বা অঞ্চলে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়, এতে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছেন আরও ৫৬৭ মিলিয়ন শিক্ষার্থী। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।