পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোটারদের কাছে ভোট হবে উৎসব। কিন্তু এখন উল্টো হাওয়া। ভোটের কথাই নেই। মানুষের কথাবার্তায় ভয়-ভীতি, আতঙ্ক আর সতর্কতা। জনমনে ‘আপদ’ ভর করেছে ২৯ মার্চকে ঘিরে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে যাবে নাকি বহাল থাকবেই তা নিয়ে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসী দোটানায়। এ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের চরম অনীহা। ক্ষোভ-অসন্তোষ ব্যক্ত হচ্ছে চারদিকে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে ভোটের স্বাভাবিক পরিবেশ। ভোট-আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কে নেবেন? ভোটের মার্কার প্রচার হচ্ছে। মাইক বাজছে। মুখে মুখে মাস্ক পরা কর্মীরা দিচ্ছেন স্লোগান। জনসমাগম নেই তেমন। ফাঁকা মাঠ। কোলাকুলি, হাতমেলানোর দৃশ্য নেই। গণসংযোগে কেউ গেলে ঘরের দরজা খোলা হয় না। মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিপাকে। ভোট চাইতে গিয়ে বেশি করে পরামর্শ দিচ্ছেন করোনাভাইরাসে জনস্বাস্থ্য সতর্কতার। চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন (ইসি) অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও করোনাভাইরাসে জনসচেনতা তৈরিতে গত সপ্তাহে মাঠে যান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনী মুডে নেই। সীমিত পরিসরে মুজিববর্ষ উদযাপন এবং করোনাভাইরাসে সমন্বয় সভায় ব্যস্ত সবাই।
বন্দরনগরীর সানমার ওশ্যানসিটির ব্যবসায়ী জামিউল আহসান, আগ্রাবাদের আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক চৌধুরী এনায়েত বাবুল, ওষুধ ব্যবসায়ী মো. জিয়াউদ্দিন, কলেজ শিক্ষক মনজুর হোসেন, গৃহবধূ সামিনা আক্তার জাহানসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে ভোট নিয়ে কথা হয়। বললেন, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আমদানি-রফতানি, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, মালামাল ডেলিভারি পরিবহনে হঠাৎ করেই ভাটার টান চলছে। স্কুল-কলেজে সন্তানদের পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। পরিবার-পরিজনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভাবছি-নির্বাচন নিয়ে নয়। সামনে পবিত্র রমজান। ঈদও আসছে। এ মুহূর্তে ৭০ লাখ নগরবাসীর মনে বাসা বেঁধেছে করোনাভাইরাসে সন্দেহ-শঙ্কা। জীবনযাত্রায় সচেতনতা এসেছে। স্বাভাবিক নগরজীবনে ছন্দপতন ঘটেছে ভেতরে-বাইরে। সহজেই তা চোখে পড়ে। অথচ চোখ-কান বুজে আছে নির্বাচনের আয়োজক সংস্থা নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ইউরোপের ফুটবল দেশ ইতালিতে বিশাল স্টেডিয়াম দর্শকশূন্য রেখেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ক’দিন আগে। তাও পরে বন্ধ হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলাধুলা বিরল। তবে অসম্ভব নয়। কিন্তু ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসে জনমনে ভয়-আতঙ্ক, স্বাস্থ্য সতর্কতা এমনকি চট্টগ্রামবাসীর অনীহা সবকিছুই উপেক্ষা করে ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনের নামে ভোটারশূণ্য ‘ভোট ভোট খেলা’র কেন এই আয়োজন? তাতে কার লাভ? ইসি কেনই-বা উঠেপড়ে লেগেছে? এসব প্রশ্ন ঘুরেফিরে চাটগাঁবাসীর মাঝে আলোচনায় উঠে আসছে।
তাছাড়া ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ২৭ মার্চ শুক্রবার ও ২৮ মার্চ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো মিলে টানা তিন দিনের ছুটির ফাঁদে থাকবে চট্টগ্রাম তথা গোটা দেশ। আর ২৯ তারিখ চসিকের ভোটগ্রহণের দিন। টানা ছুটির আগের দিন ২৫ মার্চ বিকেলে কর্মস্থল ও বাসাবাড়ি ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামে কিংবা অন্যত্র কোনো গন্তব্যে ছুটবেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। অনেকেই ফিরবেন ৩০ মার্চ অর্থাৎ ভোট বিড়ম্বনার পরদিন। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন-সন্দেহ জাগে, ২৯ মার্চ রোববার চসিক নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে এবার ভোটার ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জনের মধ্যে কতহারে শহরে থাকবেন?
করোনাভাইরাস ঝুঁকি মাথায় রেখে নির্বাচন যৌক্তিক সময়ে পিছিয়ে দিয়ে জনমনে অস্বস্তি দূরীকরণের নাগরিক দাবিটি জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। অন্যদিকে চসিকের বিধিবদ্ধ মেয়াদও ফুরিয়ে যায়নি। মেয়াদকাল অবশিষ্ট রয়েছে আগামী আগস্ট মাস অবধি। কেননা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে ৫৫ জন সিটি কাউন্সিলর নিয়ে গঠিত চসিক সাধারণ পর্ষদের প্রথম সভাটি হয় ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট। শুধু তাই নয়, এ ধরনের স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন সরকার যৌক্তিক কারণে জনস্বার্থে পিছিয়ে দিতেই পারে। টানা ছুটি আর করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝে ডুবিয়ে না রেখে ভোটের তারিখ স্থগিত কিংবা পিছিয়ে দেয়া হলেই চট্টগ্রামবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন।
অন্যদিকে ইসির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, চসিক নির্বাচন পেছানো নিয়ে ইসি সরকারের চিন্তা-ভাবনা সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে নির্বাচন কমিশন। করোনাভাইরাস ভীতি ও সতর্কতার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার শঙ্কা নিয়েও ভাবছে। তবে চসিক নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো আভাস দেননি। বরং ভোটের দিন লোকজনের চলাচল দৃশ্যমান করতে প্রচলিত বিধি ভেঙে এই প্রথমবারের মতো চসিক এলাকায় সরকারি বেসরকারি অফিস, কল-কারখানা বেলা ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা, সীমিত আকারে যানবাহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে অভিমত জানতে চাইলে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ ফয়েজ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমি শুধুই বলতে চাই এটি আজ বৈশ্বিক সঙ্কট। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা একে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে। জনসমাবেশ না করতে কিংবা এড়ানোর জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সতর্কতা মাথায় রেখে কম লোক সমাগম, পরস্পর সংশ্রব বা টাচ এড়িয়ে চলা, বয়স্কদের অত্যধিক সতর্কতা ইত্যাদির মাধ্যমে ভোটের সীমিত প্রচার এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ দায়িত্বশীলসুলভ বক্তব্য দিতে পারেন’।
নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে জনমত প্রসঙ্গে সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, নির্বাচন এলেই আগে যেভাবে উৎসবের আমেজ ছিল তা নেই। একেতো করোনাভাইরাসের প্রভাবে জনমনে ভয়-আতঙ্ক রয়েছে। দ্বিতীয়ত ভোটারদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে না কোনো আগ্রহ। এ অবস্থায় নির্বাচন পেছানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা সরকার অনুরোধ করলে ইসি তা পারে। সিডিউল যেহেতু ঘোষণা হয়ে গেছে এখন পেছাতে হলে ইসি’র সবাইকে একমত এবং অকাট্য যুক্তি থাকা চাই। তবে সংসদ নির্বাচন পেছানোর মতো কঠিন ব্যাপার তো নয় এটি।
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সবশ্রেণির মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। এরমধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলাপ করা দরকার। কারণ যারা প্রার্থী তাদের উচিৎ নগরবাসীর সুবিধা-অসুবিধা দেখা। সরকারও ভেবে দেখতে পারে। আমরা সমাজ সচেতন হিসেবে নগরবাসীকে এ ভাইরাসের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলবো।
বিশিষ্ট আইনজীবী আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এম এ নাসের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। এ অবস্থায় চসিক নির্বাচনে যেভাবে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ হচ্ছে তাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে ভোটের দিনসহ টানা চারদিনের ছুটি। অন্যদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি আদৌ হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোটারদের উপেক্ষা করে কোনকিছু করা ঠিক হবে না। তাছাড়া আইনগত দিক থেকেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পেছানোর সুযোগ খোলা রয়েছে। বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। সে হিসাবে নির্বাচন করার জন্য এখনও অনেক সময় হাতে আছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নগরীর বৃহত্তর বাকলিয়ার বাসিন্দা ড. নসরুল কদির বলেন, এমনিতে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্র বিমুখ। এখন যে পরিস্থিতিতে চসিক নির্বাচনের আয়োজন চলছে ভোটকেন্দ্রে মানুষ যাবেন কিনা সংশয় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ হবে ভোটারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেত্রী স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। এ অবস্থায় সিটি ভোটে ভোটাররা কতটুকু ভোটকেন্দ্রমুখী হবেন সেটা ভোটে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ভেবে দেখা উচিৎ। ভোট তো ভোটারের জন্য। আর ভোটারই যদি স্বেচ্ছায় কেন্দ্রমুখী হতে না পারেন তাহলে ভোটে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজসেবী মো. খোরশেদ আলম দুলাল বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এমনিতেই ভোটারের খরা। মানুষ এখন আর আগের মত লাইন ধরে ভোট দিতে যায় না। যে পরিস্থিতিতে চসিক নির্বাচন হচ্ছে তাতে ভোটারের উপস্থিতি আরও অনেক কমে যেতে পারে। ভোটে যারা প্রার্থী তাদের উচিৎ নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।