পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মোহাম্মদ পুরস্থ ৪/১০ নং হুমায়ুন রোডস্থ সরকারি বাসা সংলগ্ন গ্যারেজ। কারো নামে বরাদ্দ না থাকায় গ্যারেজটি পরিত্ত্যক্ত। জায়গাটি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান এটির জন্য দায়ী করেন পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দাকে। যিনি প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তাও বটে। একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত।
ঘটনাটি গতবছর ৪ আগস্টের। ঈদউল আযহার আগের দিন। মাইকিং শুনে হন্তদন্ত হয়ে লুঙ্গি পরেই বের হন ওই সরকারি কর্মকর্তা। নিজের পরিচয় দেন। পরিত্ত্যক্ত গ্যারেজটি তার নিয়ন্ত্রণে নয় বলে জানান। কে শোনে তার কথা? আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নাহিদ। তার বিরুদ্ধে ‘ময়লা পানি প্রবাহিত করে ফুটপাত দখল, রাস্তার ফুটপাতে ময়লা ফেলা, বিপজ্জনক মশক লার্ভা জমা রাখা, সরকার ও করপোরেশনের নির্দেশনা অমান্য করা’র অভিযোগ আনা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫ম তফসিলের ৯২-এর ৭,১৩,৬১ ধারার বিধান মতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয় তাকে। কোনো অপরাধ না করেও দন্ড ভোগ করেন ওই কর্মকর্তা। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি। এতে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন ওই কর্মকর্তা। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসানের এ হেন কান্ডের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে নালিশ জানানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য এখনো ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত ১১ মার্চ বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ একটি রিটের রায় প্রদানকালে বলেন, ম্যাজিসেট্রটদের আইন জ্ঞান কম। তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। ১২১ জন শিশুকে ভ্রাম্যমান আদালতে দেয়া শাস্তিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেয়া রায়ে হাইকোর্ট উপরোক্ত মন্তব্য করেন। হাইকোর্টের এ মন্তব্যের তিন দিনের মাথায় ১৩ মার্চ রাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট মধ্য রাতে দরজা ভেঙ্গে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর। অভিযোগ-আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ এবং দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার।
গত ২৯ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান একবর সতর্ক করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার এবং ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নকল শাখার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মাসুকাত রাব্বিকে। গতবছর ১৪ নভেম্বর একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন জেসমিন আক্তার। ওই দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য এক মাসেও রায়ের কপি পায়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। পরে তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত তাদের সতর্ক করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তথা ভ্রাম্যমান আদালতের কর্মকান্ড নিয়ে এভাবে প্রায়ই হস্তক্ষেপ করতে হয় উচ্চ আদালতকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যক্রম যখন সংবিধান পরিপন্থি এবং প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে চলে যায়-তখনই সেটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সুপ্রিমকোর্ট বারের অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম বলেন, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর নতুন প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপটে মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২০০৯ সালে এটি আইনে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। মামলাটি এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
তিনি জানান, ভেজাল প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ, মাদক কারবারিকে দমন, ইভটিজিং প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কাজে প্রশংসা কুড়িয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। একইসঙ্গে বদনাম কুড়াচ্ছে আদালতের দায়িত্বহীন আচরণ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্বেচ্ছাচারিতা, বাড়াবাড়ি এমনকি চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে।
ঝুলে আছে সাংবিধানিক বৈধতা : ২০১১ সালে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক কামরুজ্জামান খানকে। মোবাইল কোর্টের দেয়া এ কারাদন্ডের পর তাকে ৬ দিন কারাভোগ করতে হয়। ২০ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। বেরিয়ে এসে তিনি মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট’র ৫ ধারা এবং ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ ধারা-উপধারা চ্যালেঞ্জ করেন। পরে আরো ১৯ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পৃথক আরো ৩টি রিট করেন। শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেন এবং পরে রুল চূড়ান্ত হয়। এর ফলে ২০১৭ সালের ৫ মে মোবাইল কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পরে সরকার লিভ টু আপিল করলে আদালত ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি সরকারকে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট চলবে-মর্মে আদেশ দেন। এই আদেশ বলেই এখন সারা দেশে মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আলী ইমাম মজুমদারের মতে, আইনটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ খুবই সীমিত। সে ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি মানবাধিকারের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। এ জন্যই দায়িত্বটি তাদের হাতে। মোবাইল কোর্ট আইনের কয়েকটি সুস্পষ্ট দিক রয়েছে। এর একটি হলো, অপরাধটি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে ঘটতে বা উদ্ঘাটিত হতে হবে। অন্যদিকে দোষ স্বীকার করতে হবে আসামিকে। এর ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই আসামির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ দিতে পারেন। কিছু অঘটন ঘটার পর উচ্চ আদালত এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এখন মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছে। তবে আইনটি প্রয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সংস্থা ক্ষেত্রবিশেষে অসহিষ্ণুতা দেখায়। তেমনি এর অংশীদার হয়ে পড়েন কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আসামিকে ধরে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসকক্ষে বিচার করা হয়-এমন অভিযোগও আসে। অভিযোগ আছে দোষ স্বীকার না করলেও তা করেছে-মর্মে লেখা হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট দন্ডিতকে আপিলের জন্য জামিন দিতে পারেন না। এ ক্ষমতা আপিল কর্তৃপক্ষ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের। যে জামিনের আবেদন ও আপিল করতেও দন্ডাদেশের নকল প্রয়োজন। আর এই নকলপ্রাপ্তি বিভিন্ন অজুহাতে কিছু ক্ষেত্রে অযাচিতভাবে বিলম্বিত হয়। তেমনি বিলম্বিত হয় জামিন বা আপিল শুনানিও। এতে দন্ডিত ব্যক্তির প্রতি অবিচার করা হলো বললে অত্যুক্তি হবে না।
‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, এখনো মোবাইল কোর্টের সাংবিধানিক বৈধতা নিশ্চিত হয়নি। বিভিন্ন সংস্থা তাদের ইচ্ছে মতো যেখানে সেখানে মোবাইল কোর্টকে ব্যবহার করছে। মোবাইল কোর্টের অপব্যবহার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের স্বেচ্ছাচারিতা হাইকোর্টের আদেশ-নির্দেশে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। প্রশাসন যদি মোবাইল কোর্টকে শৃঙ্খলায় না আনতে পারে তাহলে এটির ভবিষ্যৎ যে কি হবে তা কল্পনা করা যায় না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তাদের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। মোবাইল কোর্ট চলছে বিভিন্ন সংস্থার মর্জি মাফিক।
প্রসঙ্গত : ফৌজদারি কার্যবিধির ১০ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জেলা প্রশাসনে নিয়োগ লাভ করেন। তবে অন্য সংস্থায় কর্মরত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সে আইনের ১২ ধারা অনুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়। সিটি করপোরেশন, রাজউক, বিদ্যুৎ, গ্যাস, বিমানবন্দর এমনকি র্যাবের সঙ্গে এসব ম্যাজিস্ট্রেটগণ কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭ ধারা অনুসারে সব শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।