পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পর্তুগালে রফতানির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দুয়েক দিনের মধ্যেই শিপমেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ করেই পর্তুগালের ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অ্যাডামস অ্যাপারেল লিমিটেডের মালিক শাহিদুল হক মুকুলকে ফোন দিয়ে জানান, এ মুহুর্তে তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিতে চাচ্ছে না, অর্ডারটি বাতিল করা হোক। বিজেএমই’র এই পরিচালকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ কথা শুনে তিনি হতবাক। এতো টাকার মাল এখন তিনি কি করবেন তা ভেবে তিনি দিশা পাচ্ছেন না। সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার পরও পণ্য রফতানি করতে না পারলে বড় লোকসানে পড়তে হবে তাকে। শুধু শাহিদুল হক মুকুলই নন, অনেক গার্মেন্টস মালিককে এখন প্রতিদিন একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তৈরি পোশাকের লাখ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন বিদেশি ক্রেতারা। এ পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। তাদের কাছে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে মার্চ-এপ্রিলের তৈরি পোশাক রফতানির টাকা দিয়েই আগামী রোজার ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করার কথা, সেটি তারা কীভাবে করবেন যদি এখন পণ্য রফতানি করতে না পারে।
একই অবস্থার মধ্যে পড়েছেন নিটওয়্যার খাতের শিল্প মালিকরা। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, করোনার কারণে তারও চীনের বড় বায়ারের একটি শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। মাত্র একটি কন্টেইনার পাঠাতে পেরেছি, আরও ৫ কন্টেইনার পণ্য রেডি হয়ে আছে কিন্তু এ মুহুর্তে সেগুলো পাঠানো যাচ্ছে না। প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার পিস পণ্য রফতানি কথা ছিল, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২ লাখ ডলার। একই সঙ্গে অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এখন পণ্য প্রস্তুত করেও রফতানি করতে পারছেন না।
তিনি জানান, রফতানির পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যেমন আমার ২৫ লাখ গজ লেডিস টি-শার্টের লেইস অর্ডার রয়েছে চীনা একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু এখন সে পণ্য আনা যাচ্ছে না। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ পণ্য আমার পাওয়ার কথা, কিন্তু এখনো পাইনি। সুতরাং ওই টি-শার্ট রফতানির জন্য যে দিন ধার্য্য ছিল, সেটি আমি ইতোমধ্যেই ফেল করেছি। অর্থাৎ পণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিজিএমএই নেতারা বলছেন, মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। অর্থাৎ এ সময়ে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। ঠিক এ সময়ে করোনার ধাক্কা লাগাটা শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ। এ কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ রফতানি আদেশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইতোমধ্যে ৫ হাজরেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। বিশ্বব্যাপি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন বিশ্বে ১৩ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে করোনার ধাক্কায় এক ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, শেয়ারবাজার এবং আমদানি-রফতানিতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গভীরতর মন্দায় প্রবেশ করবে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
করোনাভাইরাসের প্রভাব বিশ্ববাণিজ্যে তো বটেই, বাংলাদেশের অথনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। চীন থেকে এখনো কাঁচামাল আমদানি সেভাবে শুরু না হওয়ায় তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী বিভিন্ন খাতের পণ্য উৎপাদন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয় এমন দেশগুলোতেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকায় রফতানিতেও-এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। কারণ ইউরোপের দেশ ইতালী, স্পেন, জার্মানী, ফ্রান্সসহ অধিকাংশ দেশেই করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলমান এ স্বাস্থ্য সঙ্কটে এক ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কমে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরাও উদ্বিগ্ন।
ইউরোপের দেশ ইতালি বাংলাদেশ থেকে একমাসে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ক্রয় করে। ইতোমধ্যে ইতালিতে ১ মাসের জন্য সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের রফতানিতে আঘাত হানবে। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকাতেও করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় রফতানি বাজার অনিশ্চয়তার মুখে। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্সের (ডিসিসিআই) প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, করোনাভাইরাস যদি ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রভাবিত হয় তবে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কারণ দেশের রফতানি আয় বেশিরভাগ দু’টি বাজারের ওপর নির্ভর করে। চীন ও ভারত বাংলাদেশের কাঁচামালের মূল উৎস উল্লেখ করে আবুল কাসেম বলেন, ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর এবং বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলোর (আইসিডি) মধ্যে কন্টেইনার পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে। যা দেশের রফতানিমুখী পণ্যের একটি বড় অংশকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এই অচলাবস্থার বিষয়ে রফতানিকারকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন যে, এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিদেশিদের ঢুকতে দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বিদেশিদের নিজ সীমায় প্রবেশই করতে দিচ্ছে না কাতার ও কুয়েত। শ্রমিক ভিসা ইস্যু করা কমিয়ে দিয়েছে বাহরাইন, লেবাননসহ অন্য দেশগুলোও। দেশগুলোর কয়েকটিতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি যাওয়া শ্রমিকদের প্রবেশে কোনো বাধা আরোপ হয়নি। তবে অন্য দেশে ট্রানজিট নিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের কোনোভাবেই ঢুকতে দিচ্ছে না দেশগুলো। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে শ্রমিকদের সরাসরি গমনও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেমিট্যান্স আয়ের বৃহৎ ক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিকে বিপন্ন করে তুলেছে কভিড-১৯। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বর্তমানে অন্তত ৪০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। অভ্যন্তরীণ চলাচল সীমিত করে দেয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটছে তাদের পেশাগত জীবনযাত্রায়ও। অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দেশের রেমিট্যান্স আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের। অপরদিকে করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এশিয়াসহ বিশ্ব অ্যাভিশেয়ন শিল্প। যার প্রভাব দেশের অ্যাভিয়েশন ও পর্যটনশিল্পেও পড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) তথ্য মতে, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোকসানের মাসুল গুণতে হতে পারে। ৭০টি এয়ারলাইনস শুধু চীন থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং ৫০টি এয়ারলাইনস বিমান পরিচালনা বন্ধ করেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে গার্মেন্টস খাত, আমদানি-রপ্তানিতে স্থবিরতা, বিপর্যস্ত অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাতসহ নতুন নতুন খাত সঙ্কটে পড়ছে। আর তাই দেশের অর্থনীতির চাকা ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতদিন অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে চাঙ্গা ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ তথা প্রবাসী আয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সূচকও নিস্তেজ হয়ে আসছে। কারণ রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির একটা বড় অংশ চীনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও-এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে সেই প্রভাবটি ঠিক কী ধরনের হবে, সেটা এখনই আমরা বলতে পারছি না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ আমরা চীন থেকে যেমন আমদানি করি, তেমনি আবার রপ্তানির বিষয়ও আছে।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, করোনার কারণে আমরা এখন খুবই সঙ্কটকালীন সময় পার করছি। প্রতিনিয়ত বিদেশি ক্রেতারা তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ বাতিল করছেন। পাশাপাশি ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগের অর্ডার অনুযায়ী নতুন পোশাক উৎপাদন থেকে বিরত থাকার অনুরোধও জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ড. রুবানা হক। ক্রেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের দেশের ক্রেতারা বাইরে আসছেন না, শপিংমল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তারা এখন কোনো পোশাক নেবে না। আর বৈশ্বিক চাহিদায় স্থবিরতার কারণে এখনো যারা উৎপাদনে আছে, তাদের জাহাজীকরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হবে আমাদের। উৎপাদনমুখী ইউনিটগুলো আর্থিকভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা মহাসঙ্কটে পড়েছেন। তা ছাড়া এভাবে শিপমেন্ট বাতিল হলে আগামী ঈদে শ্রমিকদের বেতন- বোনাস কীভাবে দেবে শিল্প মালিকরা সে চিন্তাতে পড়ে গেছে সবাই। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি, সরকারের কাছে বিষয়গুলো জানাচ্ছি। আশা করব সরকার এ দুঃসময়ে শিল্প মালিকদের পাশে দাঁড়াবে।
সূত্র মতে, দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্য তৈরির আনুমানিক ৬০ শতাংশ কাপড় চীন থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এদিকে নিট পণ্য তৈরির আনুমানিক ১৫-২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। নিট ও ডায়িংয়ের কেমিক্যাল ও অ্যাকসেসরিজের ৮০-৮৫ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। ফলে ওভেন ও নিট দুই ধরনের পণ্য প্রস্তুতকারকরাই সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।
যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
মার্চের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে যদি সারাবিশ্বে কাঁচামাল রফতানি ২ শতাংশও কমে যায়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশে ক্ষতি হবে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এর মধ্যে তৈরি পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এর আগে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রফতানির ১৩টি খাতকে চিহ্নিত করেছে, যেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে। বলা হয়েছে এসব খাতে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কাঁচামাল আমদানি কমেছে
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, এরইমধ্যে করোনার কারণে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি কমেছে। খাতগুলোর মধ্যে আছে প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, ভোগ্যপণ্য, পাট সুতা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মুদ্রণ শিল্প এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এসব খাতের পণ্য উৎপাদনের জন্য কমবেশি নির্ভর করেন চীন থেকে আনা কাঁচামাল কিংবা যন্ত্রাংশের উপর। কারণ ইতোমধ্যেই এই খাতের অনেক কারখানা কাঁচামালের সংকটে পড়েছে কিংবা পড়তে যাচ্ছে। গেলো অর্থবছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত মোট ৭৫ দিনের সঙ্গে চলতি অর্থবছরের একই সময়ের ৭৫ দিনের আমদানি তথ্য মিলিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলছে, চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি কমে যাবার পরিমাণ ১৫ শতাংশ। কিন্তু ফেব্রæয়ারির শেষ এবং মার্চের শুরুতে আমদানি আরো কমেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রফতানি নিয়ে শঙ্কা
কাঁচামালের অভাবে যখন পণ্য উৎপাদন নিয়ে সংশয় তখন পণ্য উৎপাদনের পর সেটা রফতানি নিয়েও সতর্ক থাকতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ চীনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তারে পর্যটন এবং কেনাকাটার পরিমাণ কমে আসছে।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বলছেন, ইতালিতে যে তৈরি পোশাকের অর্ডার কমবে বা বাতিল হবে তার কিছু সিগন্যাল তারা ইতোমধ্যেই পেয়েছেন। পাশাপাশি একই পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের লেনদেন কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের পণ্যে কতটা প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তার মতে, করোনাভাইরাস কতটা ভয়াবহ রূপ নেয়, তার উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাবের মাত্রা কতটা হবে।
তিনি বলছেন, সরকারকে এখনি কাঁচামালের বিকল্প খুঁজে আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ অন্যান্য দেশও বিকল্প উৎসগুলোতে যেতে শুরু করছে। একই সঙ্গে সরকারকে রফতানি বাজারও যাচাই করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমদানিকারক দেশগুলোয় কী ধরণের চাহিদা হচ্ছে, আমাদের কাছে রফতানির জন্য কী আছে সেটা দেখতে হবে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এতে বাংলাদেশের রফতানি হ্রাস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।