পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের লাখ লাখ মসজিদে করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে জাতিকে রক্ষার লক্ষ্যে আল্লাহর করুণা কামনা করে দেয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুম্মার নামাজের পর মুসল্লিরা পৃথিবীতে আবির্ভাব হওয়া এই মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ জানিয়েছেন। মসজিদে মসজিদে খুৎবায় ইমামরা করোনাভাইরাসসহ মহামারিতে জীবন রক্ষায় মানুষের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে খুৎবায় আপাতত গণজমায়েত এড়িয়ে চলে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পবিত্র জুমার নামাজ শেষে করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, ভুমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়সহ সব ধরণের বালা-মুসিবত থেকে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর রক্ষায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের লাখ লাখ মসজিদে জুম্মার খুৎবায় করোনাভাইরাস মহামারি থেকে দেশ ও জাতির সুরক্ষা, নিরাপদ ও সতর্ক থাকার বিষয়ে ইসলামের আলোকে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়, হালাল রিজিকের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর জোর দেয়া হয়। গণজমায়েত এড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকার আহ্বান জানানো হয়। ইসলামের আলোকে করোনাভাইরাস বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলা হয় একে অপরকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করা মুসল্লিদের নৈতিক দায়িত্ব।
করোনাভাইরাস থেকে দেশ-বিদেশের মানুষকে রক্ষায় আল্লাহর প্রতি ফরিয়াত জানিয়ে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা দোয়া কুনুত পড়েন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তায়ীনুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিন বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক’। (হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাব তো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত)।
গতকাল শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিবুল্লাহ হিল বাকি বলেছেন, ‘আল্লাহর দিকে ফিরে আসার বড় হুঁশিয়ারি হচ্ছে করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস শুধু একটি রোগই নয়; এটা একটা সামাজিক অবরোধ। করোনাভাইরাস আল্লাহপাকের একটা গজব। করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহপাকের কাছে তাওবাহ ইস্তেগফার পড়তে হবে’। মহাখালির গাউসুল আজম জামে মসজিদ, কাকরাইল জামে মসজিদ, হাইকোট জামে মসজিদ, গুলশান আযাদ জামে মসজিদসহ রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর এমনকি গ্রামগঞ্জের লাখ লাখ মসজিদে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে কোরআন-হাসিদের আলোকে বয়ান করা হয়। ইনকিলাবের ব্যুরো অফিস, আঞ্চলিক অফিস, জেলা, উপজেলা সংবাদদাতারা জানান, প্রতিটি জুম্মার নামাজের পর প্রতিটি মসজিদে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় আল্লাহর সাহায্য চেয়ে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রামণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গতকাল শুক্রবার সারাদেশের মসজিদে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলের আহ্বানে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বাদ জুমা মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলে হাজার হাজার মুসল্লি মহান আল্লাহপাকের কাছে আহাজারি করে তার সাহায্য কামনা করেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে দোয়া মাহফিলে পৃথিবীর জালেম শাসকদের তাওবার আহবান জানানো হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ এবং এর আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন মসজিদে খতমে ইউনুস পড়েও বিশেষ দোয়া করা হয়েছে।
বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর উন্নতি সমৃদ্ধি এবং করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিবুল্লাহ হিল বাকি। মোনাজাতে হাজার হাজার মুসল্লি করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, ইফার সচিব মো. নূরুল ইসলাম, ইফার পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার, পরিচালক দ্বীনি দাওয়া আনিসুর রহমান সরকার।
সমমনা ইসলামী দলসমূহ : সমমনা ইসলামী দলসমূহের আহ্বায়ক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, করোনাভাইরাস আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আজাব। করোনাভাইরাস মানুষের কৃতকর্মের ফল। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে তাওবাহ ইস্তেগফার পড়তে হবে। সর্ব প্রকার গুণাহ তেকে বেঁচে থাকতে হবে। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি চাইতে হবে। তিনি বিশ্ববাসিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করে সবাইকে সর্তকমূলক ব্যবস্থাসমূহ মেনে চলার অনুরোধ জানান।
গতকাল শুক্রবার বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দলের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য দেশব্যাপী দোয়া দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে আল্লাম নূর হোছাইন কাসেমী এসব কথা বলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কারে, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা মোস্তফা তারিকুল হাসান, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন ও মাওলানা জয়নুল আবেদীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: সারাদেশে প্রতিটি মসজিদে ভারতে নিহত ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া এবং করোনাভাইরাস থেকে মুসলমানদের হেফাজতের জন্য দোয়ার মাধ্যমে পূর্ব ঘোষিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ কর্মসূতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জেলা ও থানা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কর্মসূচি পালন করা হয়। পুরানা পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে দোয়া শেষে নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতে মোদি সরকার সেদেশের মুসলমানদের উপর ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম নৃশংসতা চালিয়ে ভারতবর্ষকে ইসলাম ও মুসলিম শূন্য করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এখন বিশ্বের মুসলিম নেতৃত্বকে নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় ভারত যেপথে হাঁটছে তা রোধ করা সম্ভব হবে না। যদি তাতেও কাজ না হয় প্রয়োজনে অর্থনৈতিকভাবে অবরোধ করতে হবে এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে ভারতকে একঘরে করে রাখতে হবে।
বাদ জুমা ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন দলের নায়েবে আমীল মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ঢাকা মহানগরী : মহান রাব্বুল আলামীনের গজব করোনাভাইরাসের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে হলে পৃথিবী সকল জালেম শাসকদের সবার আগে আল্লাহর দরবারে তওবা করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ঢাকা মহানগর কর্তৃক আয়োজিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার এসব কথা বলেন।
মাওলানা মুসা বিন ইজহার আরো বলেন, করোনাভাইরাসকে নয়; করোনার স্রষ্টাকে ভয় করুন। সবধরণের পাপাচার পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হোন। তিনি সরকারকেও আল্লাহর নাফরমানী, জুলুম নির্যাতন ও দুর্নীতি পরিহার করে জাতীয়ভাবে তওবার ডাক দেয়ার আহবান জানান।
পুরানা পল্টনস্থ বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ঢাকা মহানগর আমীর হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর নায়েবে আমির মুফতি দীনে আলম হারুনী, মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুফতি ফরহাদুল আলম, হাফেজ মাওলানা মাজহারুল হক মামুন, হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হাসান, ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি আতিকুর রহমান সিদ্দিকী।
বঙ্গভবন স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদ : বাদ মাগরিব রাজধানীর বঙ্গভবন স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদে খতীব মাওলানা জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস থেকে দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর মুক্তির জন্য খতমে ইউনুস পড়ে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে করোনাভাইরাসের গজব থেকে রক্ষার জন্য রোনাজারি করে মোনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।