পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত ১২৩টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ হাজার। করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ দেশেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের একজন সুস্থ্য হয়ে ফিরে গেছেন, দুইজন আছেন কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া সারাদেশে বিদেশ ফেরত ১৭৪জন আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। করোনা আক্রান্তের ঘোষণার পরপরই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান। এছাড়া স্থগিত করা হয়েছে জনসমাগম হবে এমন সব অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ। সাধারণ মানুষকেও সংক্রমণ মুক্ত থাকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান স্থগিত করে বিরল দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় প্রশংসাও পাচ্ছেন তিনি। স্কুল কলেজে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশু দিবসে জমায়েতের ব্যাপারেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা না হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রয়েছেন গভীর উৎকণ্ঠায়। অভিভাকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ঘোষণার পর থেকেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, একদিকে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য। অন্যদিকে আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সাধারণত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনসমাগম হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে সকলের সাথে মেলামেশা করছে, খেলাধুলা করছে, একে অপরের সংস্পর্শে আসছে, একই ক্লাসরুম, চেয়ার-টেবিল, বাথরুম ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় কিভাবে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে? নাকি আক্রান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার দাবি তুলছেন অভিভাবকসহ অনেকেই। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
অথচ সারাবিশ্বেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানেও। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, অন্তত ৩৩টি দেশ এ ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি দেশ গোটা রাষ্ট্রে এবং ১৬টি দেশ বিশেষ কোনো শহর, জেলা বা অঞ্চলে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ১৭টি দেশে পুরোপুরিভাবে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে ৩৬৩ মিলিয়নের বেশি শিক্ষার্থী। আরও ১৬টি দেশে বিশেষ শহর, জেলা বা অঞ্চলে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়, এতে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছেন আরও ৫৬৭ মিলিয়ন শিক্ষার্থী।
অভিভাবকরা জানায়, বাংলাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া রয়েছে হাইস্কুল, মাদরাসা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। কোটি কোটি শিক্ষার্থী প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমায়েত হচ্ছে। এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যদি কোনো শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় তার দায় নিবে কে?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও এরই আতঙ্কিত ও সচেতনতার কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। স্কুলভেদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অভিভাবকদের দাবি, রমজানের ছুটি কমিয়ে দিয়ে এখন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। আর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে বটে তবে তা অস্বাভাবিক নয়। স্কুল-কলেজের চেয়ে বেশি আতঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী একই হলে বসবাস, একই ক্যান্টিন, টিভি রুম, রিডিং রুম ব্যবহার করছে, একই রুমে একাধিক শিক্ষার্থীর বসবাস (গণরুমে ২০ জনের বেশি) করছে।
গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে অনেকটা আতঙ্কের চিত্রই পাওয়া গেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিশে^র অন্যান্য অনেক দেশের মতো আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশ না আসায় প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও কিছু বলতে পারছেন না। আতঙ্কের কথা সকলে বললেও তারা দাবি করেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধের আদেশ না দিলে আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অনেক প্রধান শিক্ষকই দ্রুত স্কুল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে সন্তানকে স্কুলে প্রবেশ করিয়ে অভিভাক রোকেয়া বেগম বলেন, বাচ্চাকে স্কুলে দিয়েই নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। সেখানে তো সবার সাথে মিশছে, একই সাথে থাকছে। কখন কি হয় ভয়ে আছি। স্কুলটা কয়েকটা দিন বন্ধ খরলে কি এমন ক্ষতি হয়। নানা কথা শুনে এমনতিই ভয়ে আছি। এভাবে পড়ালেখা করা যায়?
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীর মা রোকসানা বলেন, এভাবে স্কুল খোলা রাখার কি দরকার। দেশের প্রত্যেকটা মানুষ ভয়ে আছে। কটা দিন স্কুল বন্ধ রাখলে কি এমন ক্ষতি হয়। বহু দেশেই তো স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। খোলা রাখায় আজও মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছি।
রাজধানীর উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থীর মামা আফরোজা খানম বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত! উন্নত বিশ্বে উন্নত চিকিৎসার এত সুব্যবস্থার পরও তারা করোনাভাইরাসের চিকিৎসাতো দূর, মৃত্যুও ঠেকাতে পারছে না! সেখানে বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দেবে, আল্লাহই জানেন! তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলে অন্তত আমরা আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা দিতে পারতাম। আব্দুর রশিদ নামে এক অভিভাবক বলেন, বলা হচ্ছে গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে। অথচ স্কুল কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে না। আমি মনে করি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখুনি বন্ধ ঘোষণা করা উচিত। সিটি কলেজের আরমান চৌধুরী নামে এক অভিভাবক বলেন, সবার মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে অবশ্যই স্কুল বন্ধ রাখা উচিত। বেঁচে থাকলে পড়াশোনা পরবর্তীতে চালিয়ে নেওয়া যাবে। রিয়াজ মাহমুদ স্কুল বন্ধ করার পক্ষে ফেইসবুকে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের ভেতরে কেউ আক্রান্ত হলে তখন বন্ধ করে কী লাভ, এখনই বন্ধ করা উচিত। শেখ মো. সুমন লিখেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই বন্ধ করলে পরিস্থিতি বেশি দূর গড়াবে না। পরিস্থিতি খারাপ হাওয়ার পর বন্ধ করলে কোনো লাভ হবে না।
সোহেল মাহমুদ লিখেছেন, করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে বাংলাদেশ সরকার। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খোলা রাখা কি যৌক্তিক?
কাকলি খান লিখেছেন, কেন স্কুল কলেজ বন্ধ করা হচ্ছে না!! কেন জমায়েত বন্ধ হচ্ছে না! সমস্ত পৃথিবীর মানুষ যেখানে আতঙ্কিত!! তাদের উন্নত চিকিৎসা,তারা সচ্ছল, উন্নত সিস্টেম থাকা সত্তে¡ও কেমন অসহায় অবস্থায় পড়েছে। আমরা সেখানে এতোটা উদাসীন!!!
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়লেও করোনা ঝুঁকি থেকে শিশুরা কীভাবে রক্ষা পাবে তা বুঝতে পারছি না। স্কুল থেকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলছে শিক্ষার্থীরা। তবে অনেকেই তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। স্কুল যদি বন্ধ না হয় তাহলে কতদিন বাসায় বসিয়ে রাখবো সন্তানকে এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে রোজার মাসের ছুটি কমিয়ে হলেও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হোক। অভিভাবক অর্পণা ভৌমিক বলেন, বাধ্য হয়ে আমার দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে এসেছি। স্কুলে না পাঠালে ছেলে-মেয়েরা তো কোর্স শেষ করতে পারবে না। আপাতত ছুটি দিয়ে পরে ছুটির দিনগুলোতে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখা উচিত।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আবুল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমরা জোর দিয়েছি। মাউশির দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত ওয়াশ ব্লক পরিষ্কার করছি। মেঝেসহ সিঁড়ি পরিষ্কার করাচ্ছি একাধিকবার। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। তবে অস্বাভাবিকভাবে কমেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যে নির্দেশ দেবে তা বাস্তবায়ন করবো।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ড. শাহান আরা বলেছেন, আতঙ্ক নিয়েই সকলে আসছে। আমরা শতর্কতামূলক নির্দেশ দিয়েছি। করোনাভাইরাস নিয়ে করণীয় কি, সেই লিফলেট দিয়েছি, গেটেও পোস্টারিং করেছি। অনেক শিক্ষার্থী মাস্ক পরে এসেছে। তবে সকলেই আতঙ্কে আছে।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের নানা পদক্ষেপ নেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নানাভাবে সচেতন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলে সেটি কার্যকর করা হবে।
বন্ধের দিকে না গিয়ে সকলকে সচেতন রাখার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, আমার আহ্বান হবে, সকলে যার যার জায়গায় যেন সচেতন থাকে, সতর্ক থাকে।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিয়ারের মতামত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো এখনও পরিস্থিত তৈরি হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।