Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীতে করোনা আতঙ্ক

সড়কে যাত্রী যানবাহন দুটোই কম

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর পথে-ঘাটে। কর্মব্যস্ত দিন হলেও প্রয়োজন ছাড়া পথে নামছেন না নগরবাসী। যাত্রী না পাওয়ায় নগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যাও কমে গেছে। এতে দিনের বেলাও রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলো মোটামুটি ফাঁকাই থাকছে। চিরাচরিত যানজটের নগরীর চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে। গত দুইদিন বায়ুমান সূচকে ঢাকার অবস্থান শীর্ষ ১০-এর নিচে। অথচ করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে গত শনিবারও (৭ মার্চ) বায়ুদূষণের সূচকে শীর্ষ ছিল ঢাকা। গত দুইদিনে বায়ুমানের সূচক নেমে এসেছে দুই সংখ্যার ঘরে। রাস্তায় গত দুদিন যানবাহন কম দেখছে খোদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পরিবহন যে বায়ুদূষণের একটি বড় সোর্স তা প্রমাণ করে। যখন পরিবহনের পরিমাণ দিনের বেলা কমে যায়, তখন দূষণ কম লক্ষ্য করা যায়। রাতের বেলা পরিবহন এমনিতেই কমে যায়, কিন্তু সেটায় পরিবর্তন আসে না। আমরা ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস করে দেখেছি রাতের বেলায় বায়ুমান সূচকের তেমন কোনও পরিবর্তন হয় না। দিনের বেলা পরিবর্তন বেশি হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীকে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ কারণে মানুষ এখন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আলাপকালে কয়েকজন যাত্রী জানান, প্রয়োজন না হলে তারা ঘর থেকে বেরুতেন না। গুলিস্তানে তৌফিক নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন রোগি দেখতে। এটা খুবই জরুরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া ঢাকায় আসতাম না। ফুটপাতের হকার আসাদুল বলেন, গত কয়েক দিন যাবত গুলিস্তানে লোক সমাগম কমেছে। ফুটপাতে বিক্রিও কমে গেছে। বাসগুলো অনেকটাই ফাঁকা আসাতে ক্রেতার সংখ্যা কম বলে তার ধারণা।

করোনা নিয়ে শঙ্কা আছে অভিভাবকদের মনে। তাই অনেকেই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। অভিভাবকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে স্কুলে পাঠানো খুব ঝুঁকির বিষয়। রাজধানীর ধানমন্ডির একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অবিভাবক এস কে চৌধুরী জানান, তার সন্তানকে তিনি গত দুইদিন স্কুলে পাঠাননি। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহনে গত দুদিন ধরে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যাত্রী সঙ্কটের কারণে অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। একই কথা জানিয়েছেন চালকরা। কয়েকজন চালক জানান, গত দুইদিন রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখেছেন দিনের বেলায়। সদরঘাট থেকে সাভারগামী বাসের চালক আসলাম বলেন, যাত্রী কম থাকায় বাস একটু কম নামছে। আবার রাস্তায় প্রাইভেট গাড়িও কম চলে দেখলাম। এ কারণে যানজটের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে।
মিরপুর থেকে প্রতিদিন শাহবাগে যাতায়াত করেন চাকরিজীবী ফারুক। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শাহবাগ আসতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। পথিমধ্যে আগারগাঁও, ফার্মগেইট, কাওরানবাজার, বাংলামোটরে যানজটে আটকে থাকতে হতো। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও বেশি যানজট থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা ছিল না। তেমন কোনো যানজট না থাকায় মাত্র পয়ত্রিশ মিনিটে তিনি শাহবাগ আসতে পেরেছেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, করোনার প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরেই যাত্রী কমে গেছে। দিন যতো যাচ্ছে যাত্রী সংখ্যা ততোই কমছে। এতে করে বাসগুলোর ট্রিপ কমেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দূরপাল্লার বাসের যাত্রী কমে গেছে। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ভ্রমণ করছেন না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে যাত্রী কমতে থাকলে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হবে।

গত দু’দিন ঢাকার রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ কম থাকার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নজরেও এসেছে। মানিকনগর মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, রাস্তায় যানবাহন আগের তুলনায় অনেক কম। বিশেষ করে প্রাইভেট কারের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। বাসগুলোতে যাত্রী কম বলে বাসের সংখ্যা কম। সব মিলে একটা পরিবর্তন নজরে আসছে।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত দুইদিন রাস্তায় ট্রান্সপোর্ট কম এটা আমরাও পর্যবেক্ষণ করেছি। মূলত গণপরিবহন বলতে আমরা যেটা বুঝি বাস, সেটা কম। এজন্য যানজট অনেকটাই কমে গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ