পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা নিয়ে আতঙ্ক নয়, বরং সুখবর দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম তিন রোগীর দু’জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের শরীরে এখন ভাইরাসটির অস্তিত্ব নেই। আরেক দফা পরীক্ষা করে যদি ভাইরাস চিহ্নিত না হয়, তাহলে হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হবে। আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে উঠায় বার্তা দেয়, করোনা কোনো মরণঘাতি রোগ নয়। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই ছোঁয়াছে রোগটি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
গতকাল আইইডিসিআর এক সংবাদ সম্মেলনে করেনা আক্রান্ত দুজন রোগী সুস্থ হয়ে উঠার তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় আরো বলা হয় নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন ধরনের যোগাযোগের সুবিধার্থে হটলাইন হিসেবে ১৩টি নম্বরের পরিবর্তে একটি নম্বর চালু করা হয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তায় আক্রান্ত দেশের স্কুলগুলিকে দূরবর্তী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ও রেডক্রিসেন্ট। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইলেও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ফেসমাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসাবে গতকাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আক্রান্ত তিন জনের অবস্থা এখন ভালো। এর মধ্যে দুই জন একেবারেই সুস্থ। নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ ফল পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, পর পর দুটি পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ না আসলে তাদের পুরোপুরি সুস্থ বলা যাবে না। তাই আমরা এখনই তাদের ছাড়ছি না।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রফেসর ফ্লোরা জানান, আমরা শুরু থেকেই বলছি আক্রান্তরা মৃদু ভাবে সংক্রমিত। তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু যেহেতু তারা আমাদের প্রথম রোগী, তাই তাদের হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত অপর ব্যক্তির শরীরে এখনও ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে। তবে তিনি ভালো আছেন। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের ভেতরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা হটলাইনে তিন হাজার ২২৫টি ফোন কল এসেছে। এর মধ্যে তিন হাজার ১৪৫টি কল ছিল সরাসরি করোনভাইরাস বা কোভিড-১৯ সম্পর্কিত। এই সময়ে সরাসরি এসে সেবা গ্রহণ করেছেন আরও ২৪ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে আইসোলেশনে ৮ জন এবং কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩ জন।
আক্রান্ত দেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। সতর্ক ও সচেতন থেকে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব মোকাবেলায় চীন, আমেরিকা, ভারতসহ, বিশ্ব ব্যাংক, ইউকেএইড সাহায্য করা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দরে ইতিমধ্যে ৫টি নতুন থার্মাল স্ক্যানার স্থাপণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সামিট গ্রুপ’ আরও ৫টি স্ক্যানার উপাহার হিসেবে দিচ্ছে। এরমধ্যে একটি বা দুটি শাহজলাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্টাডবাই রাখার পরিকল্পনা আছে। বাকীগুলো বিভিন্ন বন্দরে স্থাপন করা হবে।
নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন ধরনের যোগাযোগের সুবিধর্থে হটলাইন হিসেবে ১৩টি নম্বরের পরিবর্তে একটি নম্বর চালু করেছে আইইডিসিআর। এখন থেকে ০১৯৪৪৩৩৩২২২ নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছে আইডিসিআর’র পরিচালক। দেশে করোনাভাইরাসের রোগী সনাক্তের পর মানুষের ফোন কলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত ৯ মার্চ হটলাইনে নম্ব^র চারটি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করা হয়। কিন্তু এরপর ফোন কলের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এবং এ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন একটি নম্ব^র চালু করা হয়েছে। এখন থেকে আর কাউকে একাধিক নম্বরে ফোন করে বিড়াম্বনায় পড়তে হবে না। এ নম্ব^রটিতে কল করলে হান্টিং করে যে নম্বরটি ওই সময়ে ফাঁকা থাকবে সেটিতেই সংযুক্ত হবে। আপাতত হটলাইনের এ নম্বরে কল করলে শুধু বাংলা লিং ছাড়া অন্য অপরারেট থেকে নির্ধারিত হারে টাকা কাটা হবে। তবে নম্বরটি টোল ফ্রি করার চেষ্টা চলছে বলে জানান আইডিসিআরের পরিচালক।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় তিন প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি : এদিকে ইউনিসেফ করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশে শিশুদের নিরাপত্তায় স্কুলগুলিকে দূরবর্তী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস এবং ইউনিসেফ এক যুক্ত বিবৃতিতে এই পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় গিনি, লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনে নিরাপদ স্কুল নির্দেশিকাগুলি কার্যকর করা হয়েছিল। এতে ওই ভাইরাসটির সংক্রমন থেকে স্কুল শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা সহজ হয়েছিল।
করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা : করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইলেও আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। গতকাল বুধবার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগ। অর্থ বিভাগের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে বলা হয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনুক‚লে সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলো। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। ৫০ কোটি টাকার মধ্যে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা যাবে সেটাও বলে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ বাবদ ব্যয় করতে হবে ৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জনসচেতনায় প্রকাশনা কাজে ব্যয় করতে হবে ১ কোটি ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া কেমিক্যাল-রি-এজেন্ট খাতে ব্যয় করতে হবে ২ কোটি ৫০ হাজার টাকা।
ওষুধ প্রশাসেন সভা অনুষ্ঠিত: ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ফেসমাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি, মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন, ওষুধ মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী, বিক্রয়কারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় ফেসমাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে যে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক এর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতিপিস ৩০ টাকা নির্ধারণ; জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ আকারে প্রকাশ করা, নির্ধারিত মূল্যের চাইতে অধিক মূল্যে ফেসমাস্ক বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; ফেস মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে একই ডিস্ট্রিবিউটরকে একটি ইনভয়েসে ৫০০ (পাঁচশত) পিসএর বেশি ফেস মাস্ক সরবরাহ না করা; হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে হ্যান্ডস্যানিটাইজার এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ৫০ এমএল প্যাক সাইজে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাস অন্তত ১১১ দেশে ছড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার মানুষ, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪২৯৬ জনের। ভাইরাস ছড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশে। ইতালিতে ৬ কোটি মানুষ অবরুদ্ধ, এক দিনেই ১৬৮ মৃত্যু। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।