Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজারে উল্টো স্রোত

ভোক্তারাই ঘরে ঘরে পণ্য মজুদ করছেন!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

নিত্য পণ্যের বাজারে যেন উল্টো স্রোত বইতে শুরু করেছে। আগে পণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়ী, ফরিয়া, মজুতদারদের বিরুদ্ধে পণ্য মজুতের অভিযোগ উঠতো। সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াতে তারা এমন অপকর্ম করে থাকেন। এবার সাধারণ ভোক্তাদের বিরুদ্ধেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদের অভিযোগ উঠেছে। করোনা ভাইরাসে ৩ জন আক্রান্তের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরণের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য কিনে কিনে মজুদ করছেন এক শ্রেণির গ্রাহক এবং ভোক্তাশ্রেণি। তারা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক পণ্য ক্রয়ে করে দুই থেকে তিন মাসের জন্য মজুদ করছেন। একসঙ্গে বেশি পণ্য ক্রয় করায় দোকানো দোকানো বাড়তি ভিড় এবং পণের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় অহেতুক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। লোক সমাগম এড়িয়ে চলার প্রচারণায় ভীত হয়েই এক শ্রেণির অবিবেচক ভোক্তা এমনটা করছেন বলে দাবি বিক্রেতাদের।

বিক্রেতা, পাইকার এবং ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ পুরনো। সিন্ডিকেট করে বাজারে চাল, পেঁয়াজসহ নিত্য পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেয়া কার্যত রীতিতে পরিণত হয়েছে। রমজান ছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই চিত্র দেখা যায় এবং সাধারণ ভোক্তাদের অধিক মূল্যে পণ্য কিনতে হয়। এবার করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সভা সমাবেশে অধিক মানুষকে একত্রিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ধারণা ঘন ঘন বাজারে গেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পাারে। তাছাড়া বিশ্ববাজার মন্দা হওয়ায় আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সে কারণে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক পণ্য ক্রয় করে মজুত করছেন কিছু অবিবেচক ভোক্তা।

গতকাল যাত্রাবাড়ি. নিউমার্কেট, মতিঝিল, মালিবাগ, হাতিরপুল, রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে আগে যিনি এক কেজি আলু কিনতেন তিনি কিনছেন কেজি। আগে দুই কেজি মাছ কিনতেনএখন কিনছেন ১০ কেজি মাছ। এমনো দেখা গেছে একটি সাধারণ মানের দোকান থেকে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার পণ্য একজনই ক্রয় করেছেন। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় অবিবেচক ভোক্তাদের বেলায় এই চিত্র। বিক্রেতারা বলছেন, দোকানে কিছু মানুষ একসঙ্গে বেশি পণ্য কেনায় চাহিদা বেড়ে গেছে। আর সকল ক্রেতাকে বিদায় করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে ভোক্তাদের অনেককেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দেখা যায়। ক্রেতারা বলছেন, বারবার যেন বাজারে আসতে না হয়, সেজন্য যতটুকু পারছি পণ্য কিনে রাখছি। সরকারই তো জনসমাগমে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারাও ভোক্তাদের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা সাঈদ আব্দুল মালিক বলেন, পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। তারপরও কয়েকদিন ধরে খুচরা বিক্রেতারা বেশি করে পেঁয়াজ নিচ্ছেন। চাল, ডাল, তেলেও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তাদের নাকি ‘ডিমান্ড’ আছে। এদিকে, আমাদেরও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। তাই দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু অন্যান্য পণ্য একজনকে বেশি দিলে অন্যেরাও টাকা দিয়েও ক্রয় করতে পারবেন না।

শনির আখড়া বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিক বলেন, খুচরা চাল বিক্রেতারা দ্বিগুণ মাল (চাল) নিচ্ছেন। যে ব্যবসায়ী আগে ২৫ কেজি চাল নিতেন, এখন ৫০ কেজি নিচ্ছেন। যারা ৫০ কেজি নিতেন, তারা ১০০ কেজি নিচ্ছেন। চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছু দামও বেড়েছে। সব ধরনের চালেই পাইকারি পর্যায়ে কেজি প্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শনির আখড়ার নূরপুরের ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বলেন, হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ এখনো রয়েছে। কিন্তু এভাবে চললে দু’চার দিনের মধ্যে চালের পাশাপাশি তেল, ডালের দামও বেড়ে যাবে। যাত্রাবাড়ির মুদি দোকানদার মো. কায়েস বলেন, ইদানিং সবাই বেশি বেশি বাজার করছে। এখন তো মাসিক বাজার করার সময়ও না। আমরা তো ক্রেতাদের অনেককেই দেখি। যারা এই সময়ে সামান্য বাজার করতেন, তারাও মাসিক বাজারের মতো বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। যারা আগে গুঁড়ো দুধের এক কেজির একটা প্যাকেট নিতেন, তারা তিনটা নিচ্ছেন; কেউ কেউ পাঁচটাও নিচ্ছেন। আবার যারা পাঁচ লিটারের তেলের একটি বোতল নিতেন, তারা দুইটা/ তিনটা নিচ্ছেন। এভাবেই বেশি নিচ্ছেন। অধিক পণ্য ক্রয় করেছেন আনোয়ার নামের পেশায় এক শিক্ষক বলেন, কোনো জটিল পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়, সে আশঙ্কায় তার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। এসব পণ্য তো বাসায় মজুদ রাখা যায়, তাই রেখে দিচ্ছি। আবার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন লোক সমাগম এড়িয়ে চলতে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববাজার মন্দা। সামনে রমজান মাস। তাই বাজারে এখন যেন একটু কম আসা যায়, এরজন্যই বেশি করে কিনে রাখছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেউ কেউ আবার পরিবেশগত সমস্যার কারণে কাঁচাবাজারে না গিয়ে ডিপার্টমেন্টাল সুপারশপগুলোতে যাচ্ছেন কেনাকাটা করতে। কাজলার এলাকার গৃহিণী সুমি বেগম স্বপ্ন সুপার শপে কেনাকাটার সময় বলেন, শুনেছি চীনে এক মাংসের বাজার থেকেই করোনার উৎপত্তি হয়েছিল। এরপর থেকেই আমি আর কাঁচাবাজারে যাই না। যা কেনার সুপারশপ থেকেই কিনছি। আর এখন একটু বেশি বেশি কিনে রাখছি। যেন ঘন ঘন আসা না লাগে।

এদিকে ভোক্তারা বেশি পণ্য ক্রয় করলেও বাজারে পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ আছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের এখানে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা এখনই নেই। যেমন পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম, তাই আছে। প্রয়োজন দেখা দিলে দাম আরও কমাব। ক্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোক্তাদের অধিক পণ্য ক্রয় করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়। যার যতটুকু প্রয়োজন তার উচিত ততটুকুই ক্রয় করা। অধিক ক্রয় করে অন্য ভোক্তাদের বিপদে ফেলা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পাারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ