Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতিরিক্ত সতর্কতায় বাংলাদেশ বিমান

করোনাভাইরাস

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে যাত্রী কমতে থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। যেসব দেশে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল অনেক দেশই সীমিত করছে। যাত্রীর অভাবে আন্তর্জাতিক রুটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও ফ্লাইট কমাতে বাধ্য হচ্ছে অনেক এয়ালাইন্স। যাত্রী সঙ্কটের মুখে আন্তর্জাতিক ১০টি রুটের ফ্লাইট চলাচল সীমিত করেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এসব রুটের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কলকাতা, দিল্লি, কুয়ালালামপুর, কাঠমান্ডু, দোহা, জেদ্দা, মদিনা ও কুয়েত। এসব রুটে বিমানের সাপ্তাহিক ফ্লাইট অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে কুয়েত এবং কাতারে সব ফ্লাইট বাতিল করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন গতকাল জানান, ১০টি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান সাপ্তাহিক (আসা-যাওয়াসহ) ১৪২টি ফ্লাইটের মধ্যে ৬৬টি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা চাইলে তাদের টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন বলে জানান তিনি। তবে কতদিন এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে এমন প্রশ্নে মোকাব্বির হোসাইন বলেন, কুয়েত আর কাতার যেহেতু নিজেরাই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাই সেখানে তাদের কিছু করার নেই। ওই দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিলে তখন যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে। তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং যাত্রী সংখ্যা বাড়লে অন্য রুটগুলোতে ফ্লাইটের সংখ্যা আবার আগের মতো বাড়ানো হবে বলেও জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই কর্মকর্তা।

এদিকে রোববার দেশে প্রথম বারের মত করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে থাকারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি বলেন, এ ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবতরণের পর ‘হেলথ ডিক্লারেশন’ ফরম দেয়া হচ্ছে, এখানে তাদের শারীরিক বিষয়সহ বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য তথ্য কার্ডও দেয়া হচ্ছে। ছয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরে জ্বর না থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ বাড়িতে বা তারা যেখানে থাকবেন, এখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় যদি যাত্রীর শরীরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি তাপমাত্রা থাকে, তা হলে তাকে সরাসরি কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।

এদিকে গত রোববার এক বিবৃতিতে কাতার জানায়, বাংলাদেশ, ইতালি, চীন, মিসর, ভারত, ইরান, ইরাক, লেবানন, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া এবং থাইল্যান্ড লোক আপাতত কাতারে আসতে পারবে না। যাদের কাতারে থাকার ইকামা আছে বা যারা পর্যটন ভিসা নিয়েছেন, কিংবা যারা অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পেতেন, সবার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ার কারণে হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে সপ্তাহে ৪ দিন দোহা যেতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারির আগে তারা চীনের সঙ্গে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করতেন। এখন চলছে তিনটি ফ্লাইট। এখন কাতার সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউএস-বাংলার কাতারগামী সব ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে ইউএস-বাংলা এখনও ততটা চাপের মধ্যে পড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যাত্রীরা যে টিকিট বাতিল করছেন তার সংখ্যা খুব বেশি নয়। আমরা বরং ২৯ মার্চ থেকে সিলেটে অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছি।

এদিকে বেসরকারি এয়ালাইন্স নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরাও করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে প্রতিদিনই টিকেট ক্যানসেল হচ্ছে। তাতে এয়ারলাইন্সগুলো বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবে যাত্রীরা প্রভাবিত হচ্ছেন। আমরা চাই এই গুজব প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। অপরদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এজিএম মো. জাফরুজ্জামান বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর কলকাতা রুটে তাদের যাত্রী কমে গেছে। মাঝে সিঙ্গাপুরগামী যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। তবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ফ্লাইট পরিচালনকারী এ এয়ালাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটে এখনও তেমন সমস্যায় পড়েনি বলে জানান জাফর। তবে করোনার সংক্রমণে আতঙ্কিত না হয়ে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। করোরাভাইরাসের আতঙ্ক বিশে^ এতটাই বেড়েছে যে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানে এক যাত্রীর হাঁচি ও কাশির কারণে অন্য যাত্রিদের মধ্যে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক দেখা দিলে ফ্লাইটটি ডেনভার বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণ করে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বিমানটি কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ঈগল শহর থেকে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক বিমান বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল। পরে বিমানটি রোববার বিকালে কলোরাডোর ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। বিমানে অসুস্থ যাত্রীর হাঁচি এবং কাশির কারণে বিমান যাত্রীদের অনেকে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার শুরু করে। তবে এলার্জির কারণে অসুস্থ ওই যাত্রীকে নিয়েই বিমানটি পুনরায় নিউজার্সির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।



 

Show all comments
  • রিফাত ১১ মার্চ, ২০২০, ৩:২৬ এএম says : 0
    আগে দ্রুত স্কেনার গুলো ঠিক করেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ